Egra: শোচনীয় আর্থিক অবস্থা; বাড়িঘর জরাজীর্ণ, অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে সংসার টানের এই পঞ্চায়েত প্রধান
যাঁর জমিতে এখন পঞ্চায়েত প্রধান কাজ করছেন তিনি বলেন, উনি সব সময়েই কাজ করেন। ধান,বাদাম সব কাজই করেন। পঞ্চায়েত প্রধান হিসেবেও ভালে পরিষেবা পাই
কিরণ মান্না: ইনি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। নাম পূর্ণিমা মাইতি। নজিরবিহীন ভাবে জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করেন। পঞ্চায়েতের প্রধান হিসেবে যতটুকু ভাতা পান তাতেই সন্তুষ্ট। অন্য কিছুর ধার ধারের না। রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ থাকলেও এমন ব্যতিক্রমী প্রধানের জীবনযাত্রা নজর কেড়েছে এলাকার মানুষের।
আরও পড়ুন-তুরস্ক-সিরিয়ার মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার পার, ১২৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার ২ মাসের শিশু
কিছুদিন আগেই নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মতো যাঁদের অবস্থা ছিল, তাঁদেরই এখন প্রসাদাসম বাড়ি, অঢেল সম্পত্তি, বিলাসবহুল জীবনযাপন। এহেন পঞ্চায়েত প্রধান, উপ প্রধানের সংখ্যা এ রাজ্যে কম নয়। শাসকদলের চেয়ারে বসে আগামী সাত পুরুষের জন্য অর্থ কামিয়ে নেওয়ার ভুরিভুরি অভিযোগ রয়েছে বিরোধীদের তরফে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা ২ ব্লকের মঞ্জুশ্রী গ্রাম পঞ্চায়েতের চিত্রটা একটু ভিন্ন। কাগজে কলমে পূর্ণিমা পঞ্চায়েত প্রধান, কিন্তু সংসার চলে পরের বাড়ির জমিতে দিনমজুরি করে। এগরা ২ নং ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পূর্ণিমা মাইতি। পঞ্চায়েত প্রধান হয়েও ডাল-ভাত জোটাতে ক্ষেত মজুরিকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। বাড়ির আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। তিনি যে বাড়িটিতে থাকেন সেটারও জরাজীর্ণ অবস্থা। তবে পঞ্চায়েত সদস্য হয়ে আর্থিক প্রতিপত্তি বাড়িয়ে নেওয়ার উদাহরণ নতুন নয়। কিন্তু, সেখানে ব্যতিক্রমী পথে হাঁটতে দেখা গেল পূর্ণিমা মাইতিকে। পঞ্চায়েতের কাজ শেষ হলে যে সময়টুকু পান, পরের জমিনে কৃষিকাজ করেই কাটে।
এলাকাবাসী বলেন সময়ে অসময়ে যেকোনো সমস্যায় আমরা প্রধান পূর্ণিমা মাইতিকে পাই। পঞ্চায়েত থেকে যে ভাতা পাওয়া যায়, তাতে ঠিক করে সংসার চলে না। সেই কারণে অন্য এমন একটি পেশার উপর নির্ভর করে থাকতে হয়। ভাতা ছাড়া অন্য কোনও উপায়ে অর্থ উপার্জন করার অভিপ্রায় নেই তাঁর। নিজের বাড়িটুকু জরাজীর্ণ। তার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় অন্যান্য সকলের আবাস যোজনার বাড়ির সমস্যা মিটলে তবেই তিনি নিজের বাড়ির কথা ভাববেন। দিদি'র দল করে সততার পথে চলে কাজ করাটাকেই শ্রেয় বলে মনে করেন। এর জন্য অবশ্য অনেকের কাছেই উপহাসের পাত্রী হতে হয় তাঁকে, কিন্তু তাতে তাঁর কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।
অন্যদিকে, বিরোধীদল বিজেপি প্রধানের এহেন মজুরি করে জীবন যাপনের কথা অকপটে স্বীকার করে নেয়। প্রধানের বিষয়ে তেমন কোন অভিযোগও নেই। কাজও করতে হবে, সংসারও চালাতে হবে। তাই এভাবেই 'খেটে খাওয়ার' পন্থা অবলম্বন করেই আগামী দিনের জীবনযাপন চালিয়ে যাবেন বলে মত তাঁর।
পূর্ণিমা মাইতি বলেন, প্রধান হওয়ার আগেও মাঠে কাজ করতাম। এখনও অন্যের জমিতে দিনমজুরি করি। তবে পঞ্চায়েত অফিসের যেত হয় বলে কাজটা কম করি এখন। গরমের চাষ শুরু হয়েছে। তাই এখন পঞ্চায়েত লোকও কম। তাই বিকালের দিকে পঞ্চায়েতে যাই।
যাঁর জমিতে এখন পঞ্চায়েত প্রধান কাজ করছেন তিনি বলেন, উনি সব সময়েই কাজ করেন। ধান,বাদাম সব কাজই করেন। পঞ্চায়েত প্রধান হিসেবেও ভালে পরিষেবা পাই।