অধীর রায়: যখন চাকরিতে যোগ দেন তখন মনে মনে শপথ নিয়েছিলেন নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা করবেন। প্রতিদিন কর্মস্থলে এটাই তাঁরা করে থাকেন। এই মুহূর্তে  করোনাতে  আক্রান্ত গোটা দেশ। দেশকে অন্ধকার থেকে ফিরিয়ে আনার সব দায়িত্ব এখন তাঁদেরই কাঁধে। দিনরাত এক করে  লক্ষ লক্ষ মানুষের সেবা করে চলেছেন তাঁরা। তার পরও সময় বার করে দুঃস্থদের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন এসএসকেএম হাসপাতালের এগারো জন নার্স। এক কথায় নজিরবিহীন।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

মিঠু সেন কলকাতা এস এস কে এম অর্থাৎ পিজি হাসপাতালের  ডেপুটি  নার্সিং সুপার।  মিঠু, বনশ্রীরা সারাদিন কাজের ব্যস্ততার মাঝেও রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে  খবরকাগজে চোখ বুলিয়ে নেন। লকডাউনে রাজ্যের বহু অসহায় মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এ দিকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে করোনা আক্রান্তের মরণ-বাঁচনের লড়াই, অন্যদিকে অভুক্তদের বাঁচার তাগিদ, তাঁদের ভাবিয়ে তুলেছিল ভীষণভাবে। তাঁদের মনে হয়েছিল, শুধু চিকিত্সা দিয়ে এই মহামারীকে মোকাবিলা করা যাবে না, আরও মানবিক হওয়ার প্রয়োজন আছে। লকডাউনে আটকে পড়া অসহায় মানুষদের সাহায্যে চরম ব্যস্ততার মধ্যে বেরিয়ে পড়েন মিঠু সেন, নিবেদিতা সাউ, বনশ্রী দাসরা। কিন্তু কোথায়?



পাড়ি দিয়েছিলেন রাজ্যেরই এক অজানা দ্বীপে । হ্যাঁ অজানা, অচেনাই বটে। কলকাতা থেকে প্রায় দুশো কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের  প্রান্তিক মৌসুমী দ্বীপে। এই দ্বীপের চারিদিকে জল। যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা নৌকা। আয়লা , ফণী কিংবা বুলবুল সব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সাক্ষী এই মৌসুমী দ্বীপ। এখানকার মানুষের জীবিকা মৎস্যচাষ আর কৃষি কাজ। কিন্তু লকডাউনের জন্য  নৌকা চলাচল একদম বন্ধ। কেউ শহরমুখী হতে পারছে না।  সবজি  বা মাছ বেচাকেনা প্রায় একমাস বন্ধ।  তাই অধিকাংশ পরিবারের উনুন জ্বলছে  না। পাশাপাশি সচেতনতার অভাবও রয়েছে এখানে। দুটো সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের এগারো জন নার্স বুধবার  ব্যক্তিগত উদ্যোগে  পাড়ি দিয়েছিলেন সেই মৌসুমী দ্বীপে।



কেন মৌসুমী দ্বীপকে বেছে নিলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে পিজির ডেপুটি নার্সিং সুপার এবং অন্যতম উদ্যোক্তা মিঠু সেন বলেন , "শহর এবং শহরতলিতে বহু সংস্থা বা ব্যক্তি ত্রাণ দিচ্ছে। কিন্তু  মৌসুমী দ্বীপ সুন্দরবনের শেষ প্রান্ত আর কঠিন  পথের জন্য এখানে এখন ত্রান পৌঁছয়নি। এই দ্বীপের চারিদিকে জল। নৌকা একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম। এখানে সবাই  কৃষিজীবী ও মৎস্যচাষ করে দিন চালান । এখন মাছের ডিম ছাড়ার সময়। তাই মাছ ধরা বন্ধ। আর লকডাউনের জন্য নৌকা চলাচল একদম বন্ধ । তাই সবজি নিয়ে শহরে আসতে পারছেন না এখানকার মানুষ। জমির ফসল জমিতেই পড়ে নষ্ট হচ্ছে। তাই লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা এই মানুষগুলোকে ত্রাণ দিতে পেরে আমরা খুশি ।" এই বিপদের দিনে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী ভীষণ খুশি এখানকার অসহায় মানুষগুলো ।



আরও পড়ুন: নিম গাছের মগডালে শিক্ষক! পড়াচ্ছেন চাকুরি সন্ধানীদের


মৌসুমী দ্বীপের প্রায় চারশো অসহায় পরিবারের হাতে চাল, ডাল, তেল, সোয়াবিন-সহ এগারো রকম খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন তাঁরা। সেই সঙ্গে কীভাবে করোনা মোকাবিলায় সচেতন থাকতে হবে তার জন্য হাতে কলমে  দেখিয়ে দেন সাবান বা স্যানেটাইজার দিয়ে হাত ধোওয়া, মাস্ক পরা। খাদ্যসামগ্রীর সঙ্গে সাবান, স্যানিটাইজার এবং মাক্স তুলে দেন  তাঁরা। সমস্ত কর্মকাণ্ডে মিঠু সেন, বনশ্রী দাসদের খরচ হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা । পুরো টাকাই এই এগারো জন নার্স নিজেদের রোজগারের অর্থ থেকে  খরচ করেছেন।



সেই সঙ্গে করোনা সচেতনতা বাড়াতে নার্সরা গ্রাম্য পাঁচালির ধাঁচে গান করে মৌসুমী দ্বীপের মানুষদের সচেতনতার বার্তা দেন। এই এগারো জন নার্সের এই ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ড বলা যায় এই প্রথম । তাঁরা জানিয়েছেন আগামী দিনে    একটি সংস্থা তৈরি করে আরও এই ধরনের সামাজিক কাজ করার ইচ্ছা আছে।
তথ্য সংগ্রহ:- নকিবউদ্দিন গাজি