নিজস্ব প্রতিবেদন : ২ বছর আগেই মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। কিন্তু সেই শিশুকেই কবর থেকে তুলে ফের 'বাঁচিয়ে তোলা'র চেষ্টা চলল। চলল পুজো অর্চনা। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার সারেঙ্গায়। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বাঁকুড়ার সারেঙ্গা থানার মুড়কু গ্রাম। সেই গ্রামেরই বাসিন্দা মঙ্গল কিস্কুর। মঙ্গুল পেশায় ক্ষেত মজুর। স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়েই ছিল তাঁর সংসার। কিন্তু বছর দুয়েক আগে মৃত্যু হয় তাঁর একমাত্র পুত্র সন্তানের। শারীরিক অসুস্থতার কারণে মাত্র ২ বছর বয়সেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মঙ্গলের শিশুপুত্র।


একমাত্র পুত্র সন্তানের মৃত্যুর পর দেহ কবর দিয়ে দেয় মঙ্গল কিস্কু ও তাঁর পরিবার। কিন্তু সন্তান শোকে কার্যত নাওয়া-খাওয়া ভোলেন মঙ্গল। এই ২ বছরের প্রতিটা দিন সন্তানের স্মৃতি আঁকড়ে কাটাতে থাকেন মঙ্গল। মাঝে মাঝেই ছেলের সঙ্গে কাটানো ২ বছরের বিভিন্ন সময় তাঁর স্বপ্নে ভেসে ওঠে।


আরও পড়ুন, কীভাবে ফাঁদে গ্রাহকরা? ব্যাঙ্ক জালিয়াতির তদন্তে ফাঁস 'মোডাস অপারেন্ডি'


এরকমই একদিন ফের মৃত শিশুপুত্রকে স্বপ্নে দেখেন মঙ্গল। মঙ্গল জানিয়েছেন, তিনি স্বপ্ন দেখেন যে, তাঁর শিশুপুত্র কবর থেকে উঠে এসেছে। কবর থেকে বেরিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করার জন্য বলছে মঙ্গলকে। সে বলছে, তাকে কবর থেকে বের করে আনলেই সে প্রাণ ফিরে পাবে। জীবন্ত হয়ে উঠবে।


এরপরই ওঝা, গুণিন, তান্ত্রিকদের কাছে ছুটে যান মঙ্গল। মঙ্গল কিস্কুর কাছে সব কথা শোনার পর পুজোর বিধান দেন গুণিনরা। তাঁরা বলেন, নির্দিষ্ট দিনে পুজা অর্চনা করে তারপর কবর খুঁড়ে তাঁর সন্তানের দেহ উদ্ধার করা হবে। সেইমতো মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুজোর আয়োজন করা হয়।


মুড়কু গ্রামে মঙ্গল কিস্কুর বাড়িতে যায় গোয়ালতোড় থানার মুড়াকাটি গ্রামের গুণিন লঘু সোরেন, ভালুকচিরা গ্রামের ওঝা সম্বাড়ি মান্ডি ও প্রধান তান্ত্রিক গুরু পার্বতী সোরেন। শুরু হয় মঙ্গল কিস্কুর বাড়িতে পুজা অর্চনা। পুজো শেষে তারপর শুরু হয় কবর খুঁড়ে মঙ্গলের শিশুপুত্রের দেহ 'উদ্ধার'-এর কাজ।


আরও পড়ুন, মহিলা তৃণমূলকর্মীকে মারধর-শ্লীলতাহানি বিজেপি নেতার


সেইসময়ই খবর পেয়ে মঙ্গল কিস্কুর বাড়িতে হানা দেয় পুলিস। অভিযুক্ত গুণিন লঘু সোরেন, ওঝা সম্বাড়ি মান্ডি ও তান্ত্রিক পার্বতী সোরেনকে গ্রেফতার করে পুলিস। গ্রেফতার করা হয়েছে মঙ্গল সোরেনকেও।


এই ঘটনায় নিন্দায় সরব হয়েছে আদিবাসীদের সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহল। মানুষের মনে জমে থাকা অন্ধবিশ্বাস, কুসংসংস্কার থেকেই এধরনের ঘটনা ঘটছে বলে তোপ দেগেছেন বিজ্ঞান কর্মীরা। তাঁদের সাফ বক্তব্য, এধরনের ঘটনা এড়ানোর জন্য চাই শিক্ষার সঠিক প্রসার। মনের অন্ধকার দূর করা।