নিজস্ব প্রতিবেদন:  রবিবারের খাঁ খাঁ ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। গাড়ি চলছিল প্রায়  ১৫০ কিলোমিটার বেগে। গুড়াপের কাছে একটি ধাবায় হাল্কা জিরিয়ে নিয়ে কলকাতার দিকে এই গতিতেই রওনা দিয়েছিলেন গাড়ির চালক শিবাজি রায় এবং তাঁর সঙ্গী আশনা সুরানা। কিন্তু ফেরারির মতো অত্যাধুনিক বিদেশি গাড়িতে সওয়ার করে কী ভাবে দুর্ঘটনার মুখে পড়লেন শিবাজি? সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁর বন্ধু-বান্ধবেরা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

গতি যেমনই হোক, গাড়ির আসনে বসলে ভীষণ সাবধানী শিবাজি, এমনটাই দাবি তাঁর বন্ধুদের। তাঁদের মতে, হার্ডলে ডেভিডসন থেকে ল্যান্ড রোভার যে কোনও গাড়িতে শিবাজি অত্যন্ত সাবলীল ছিলেন। কিন্তু এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠে আসছে।


দুর্ঘটনার সময় অ্যান্টি লক সিস্টেমের সক্রিয়তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকছে। এই গাড়ির চার চাকায় চারটি অ্যান্টি লক সিস্টেম রয়েছে। অত্যন্ত গতিতে মোড় নিলে কিংবা গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারানোর আগেই এই অ্যান্টি লক সিস্টেম সক্রিয় হয়ে যায়। শিবাজির ক্ষেত্রে এই অ্যান্টি লক সিস্টেম কি কাজ করেনি? তা নিয়ে থাকছে ধোঁয়াশা।



১) এখানেই ব্রেক কষে চালক ২) এই জায়গায় ধাক্কা লাগে গাড়িটি ৩) এই পাইপের আঘাতে এয়ার বেলুন ফেটে যায় ৪) একাধিকবার পাল্টি খেয়ে গাড়িটি এখানে ছিটকে পড়ে


গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর এয়ার বেলুন যথারীতি সক্রিয় হয় বলে জানা গিয়েছে। তবুও প্রাণহানি এড়ানো গেল না কেন? পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়িটি একাধিক বার পাল্টি খাওয়ার পর ডিভাইডারের কাছে থাকা একটি পাইপে সজোরে আঘাত লাগে এয়ার বেলুনে। যার জেরে বেলুনটি ফেঁসে যাওয়ায় শিবাজির আঘাত আরও বেশি হয়  বলে অনুমান পুলিসের।


সাড়ে তিন কোটি টাকার এই গাড়ি ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার বেগে দৌড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান অনুযায়ী, ফেরারিটি চলছিল ১৫০ কিলোমিটার বেগে। হাওড়ার সলপে পাকুড়িয়া সেতুতে ওঠার মুখে গাড়িটি রেলিংয়ে ধাক্কা মেরে ৭ থেকে ৮ বার উল্টে যায়।  প্রশ্ন উঠছে, গুড়াপের কাছে খাওয়াদাওয়ার পরই কি গাড়ির চালানোর সময় হাল্কা তন্দ্রা এসে গিয়েছিল শিবাজির? যার জেরে ধেয়ে আসা বিপদের দূরত্ব বুঝতে পারেননি। এমন অনুমান উড়িয়ে দিচ্ছেন না পুলিস।



পাকুড়িয়া ব্রিজের সামনে দুর্ঘটনাটি ঘটে


দক্ষিণ কলকাতার ট্র্যাঙ্গুলার পার্কের বাসিন্দা শিবাজি রায়ের ছোট থেকেই ছিল গাড়ির শখ। তাঁর বাড়িতে রয়েছে জাগুয়ার, ল্যান্ড রোভার, মার্সিডিজ-সহ আট থেকে দশটি দেশি-বিদেশি দামি গাড়ি। আজ সকালে শিবাজির যে ফেরারি ক্যালিফোর্নিয়া-T গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়ে সেটি মাত্র দু-মাস আগে কিনেছিলেন তিনি। দুর্ঘটনার সময় শিবাজির স্ত্রী-ছেলে অন্য গাড়িতে ছিলেন। অবস্থাপন্ন পরিবারের ছেলে শিবাজির স্যানিটারি জিনিসের ব্যবসা রয়েছে। কলকাতা জুড়ে রয়েছে তাদের একাধিক শাখা। গুরুতর আহত শিবাজির বন্ধুর মেয়ে আশনা এবারই বারো ক্লাসের বোর্ডের পরীক্ষা দেন।



বিদেশি গাড়ির সখ এবং ছুটির দিনে লং ড্রাইভের যাওয়ার নেশা শুধু শিবাজির নয়, বেশি কিছু সভ্রান্ত পরিবারও যুক্ত রয়েছেন। যাঁদের কাছে এমন একাধিক বিদেশি গাড়ি রয়েছে। এমনকী ক্লাব জিটি নামে একটি কমিউনিটি রয়েছে ফেসবুকে। যার মাধ্যমে তাঁদের কমিউনিটিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন আগ্রহীরা। রবিবার বা যে কোনও ছুটির দিনে এই সব এক্সপ্রেসওয়ে ধরে রুদ্ধশ্বাস গতিতে লং ড্রাইভ করেন তাঁরা। শিবাজির মৃত্যুর পর তাঁদের এই কর্মকাণ্ড নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।



মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যেখানে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ’  নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে রাজ্যজুড়ে, সেখানে তাঁদের এই কর্মকাণ্ড কতটা আইনত তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। উল্লেখ্য, এমন দুর্ঘটনা ঘটার পরই ক্লাব জিটি  নামে ফেসবুক পেজটি ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে।