Hooghly: রঘুনাথ গোস্বামী ও শরৎচন্দ্রের স্মৃতিভূমিতেই ৫০০ বছর ধরে হয়ে আসছে অসাধারণ এই মাছমেলা...
Hooghly: পাঁচশো বছরের প্রাচীন কেষ্টপুরের মাছের মেলায় চুনো পুঁটিমাছ থেকে বিশাল আড় কিনতে উপচে পড়ে ভিড়। রাঘব বোয়াল থেকে চুনো পুঁটি, রুই, কাতলা, ইলিশ, ভেটকি, ভোলা, কাঁকড়া, শংকর মাছ-- কী নেই এই মেলায়।
বিধান সরকার: মাছ নিয়ে মেলা! তা-ও আবার বৈষ্ণব ভাবধারা অধ্যুষিত ভূমিতে। চৈতন্যভক্ত রঘুনাথ গোস্বামীর কেষ্টপুরে ৫০০ বছর ধরে হয়ে আসছে এই মেলা। শুধু রঘুনাথ গোস্বামী নন, এই মাটি অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িতও। কেষ্টপুরের পাশের গ্রামই দেবানন্দপুর। কেষ্টপুরে আজও বসে পাঁচশো বছরের প্রাচীন এই মাছ-মেলা। মাছের এ মেলায় মেলে পুঁটি মাছ থেকে বিশাল আড়। হুগলির দেবানন্দপুরে কেষ্টপুরের উত্তরায়ণে মাছ দেখতে ও কিনতে উপচে পড়ে ভিড়।
আরও পড়ুন: Nathula: চেনাই যায় না! তুষারপাতে সাদা হয়ে আছে নাথুলার পাহাড়ি পথ, ছাঙ্গু...
চৈতন্য মহাপ্রভুর অন্যতম শিষ্য রঘুনাথ দাস গোস্বামী। তাঁরই গ্রামে বসে এই মাছের মেলা, যার বয়স ৫১৭ বছর। একদিনের এই মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পসরা নিয়ে বসে বিভিন্ন দোকানিরা। আর মাছ তো থাকে বিচিত্র! রাঘব বোয়াল, ৩৫ কেজির বাঘা আড় থেকে চুনো পুঁটি, রুই, কাতলা, ইলিশ, ভেটকি, ভোলা, কাঁকড়া, শংকর-- কী মেলে না এ মেলায়!
কিন্তু বৈষ্ণব ভাবধারা অধ্যুষিত এক ভূমিতে ৫০০ বছর ধরে কীভাবে হয়ে আসছে মৎস্য মেলা?
অসাধারণ এক ইতিহাস আছে। কেষ্টপুর এলাকার জমিদার ছিলেন গোবর্ধন গোস্বামী। তাঁরই ছেলে রঘুনাথ। তিনি সংসার ত্যাগ করেন সন্ন্যাস নেবেন বলে। মহাপ্রভু চৈতন্যের পারিষদ নিত্যানন্দের কাছে দীক্ষা নেবেন বলে পানিহাটিতে তাঁর কাছে যান রঘুনাথ। তাঁর বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর হওয়ায় তাঁকে দীক্ষা দেননি নিত্যানন্দ। তবে ছোট্ট রঘুনাথের ভক্তির পরীক্ষা নেন তিনি। সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। বাড়ি ফেরে রঘুনাথ। এই মাছ-মেলার সূত্রপাত হয় রঘুনাথ দাস গোস্বামী বাড়িতে প্রত্যাবর্তনের পরেই।
দীর্ঘ ৯ মাস পর বাড়ি ফেরেন কিশোর রঘুনাথ। সেই আনন্দে বাবা গোবর্ধন গোস্বামী গ্রামের মানুষকে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর গ্রামের মানুষও তেমন। তাঁরাও রঘুনাথের ভক্তি ও তাঁর বাবা গোবর্ধনের আন্তরিকতার পরীক্ষা নেওয়ার জন্য জমিদারের কাছে অদিনের জিনিস খেতে চান। বলেন, তাঁরা কাঁচা আমের টক ও ইলিশ মাছ খাবেন। জমিদার গোবর্ধন তখনই তাঁর প্রজাদের বলেন, বাড়ির পাশের আম গাছ থেকে আম পেড়ে আনতে এবং পাশের জলাশয়ে জাল ফেলতে। সেইমতো গাছ থেকে আমও পাওয়া গেল, জাল ফেলতেই মিলল ইলিশও! ব্যাপার দেখে সকলেই অবাক!
আরও পড়ুন: Jalpaiguri: অসম থেকে অযোধ্যা! ৭০ পেরিয়েও পায়ে হেঁটেই রামমন্দিরে চলেছেন ভবানীপ্রসাদ...
এর পর থেকে প্রতি বছর ভক্তেরা সেখানে রাধাগোবিন্দ মন্দিরে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি মাছের মেলার আয়োজনও করে আসছেন। প্রতি বছর পয়লা মাঘ উত্তরায়ণে এই মেলা হয়ে আসছে। দূর দূরান্ত থেকে বহু মাছ ব্যবসায়ী নদী-পুকুর ছাড়াও বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের পসরা নিয়ে এসে বিক্রি করেন এখানে। হুগলি ছাড়াও বর্ধমান, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া থেকেও মানুষ এই মেলায় আসেন। ৫০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে মাছ বিক্রি হয়। শুধু মাছ কিনে নিয়ে যান না তাঁরা, অনেকেই পাশের আম বাগানে পিকনিকের আয়োজনও করেন।