নিজস্ব প্রতিবেদন : করোনা মোকাবিলায় দেশের লকডাউনের মেয়াদ ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যে হারে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে তাতে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো ছাড়া সরকারের কাছে বিকল্প কোন রাস্তা খোলা নেই । এদিকে দেশজুড়ে মৃত্যু মিছিল আটকাতে লকডাউনের যেমন প্রয়োজন, তেমনি হকার, দিনমজুর কিংবা  দৈনিক রোজগারের উপর যাদের সংসার চলে, তাঁদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে । রোজ পরিবারের মুখে দুবেলা খাবার তুলে দিতে পারছেন না তাঁরা । ঘরে বসে থাকলে খাবার নেই । বাইরে বেরোনোর ক্ষেত্রে পুলিসের নিষেধাজ্ঞা । সব মিলিয়ে জেরবার গারুলিয়া পুরসভার অন্তর্গত ৭টি ওয়ার্ডের প্রায় সাড়ে ৭০০ পরিবার । এই ওয়ার্ডের ৪০  শতাংশ পরিবারের দৈনিক আয়ের উপর সংসার চলে। এখানে কেউ দিনমজুর, কেউ হকারি করেন, অনেকে আবার রাজমিস্ত্রির পেশার সাথে জড়িত । তাই বেশকিছু  পরিবার আজ একমুঠো খাবারের জন্য অন্যের মুখ চেয়ে বসে আছে । এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠে নামলেন গারুলিয়া পুরসভার  ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তপন দাস । বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং ঠিকাদারদের সাহায্য নিয়ে নিজের ওয়ার্ডে চালু করেন বিনামূল্যে বাজার। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন সংস্থা কিংবা বহু মানুষ ব্যক্তিগত উদ্যোগে রান্না করা খাবার অথবা চাল ডাল বিলি করছেন । কাউন্সির তপন দাস সেই চিরাচরিত প্রথায় না হেঁটে একটু অন্য ভাবনায় দুঃস্থ মানুষদের উদ্দেশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন । সমস্ত সরকারি নির্দেশিকা মেনে গারুলিয়া পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে সপ্তাহে একদিন করে বিনামূল্যে বাজার চালু করেছেন তিনি । এই বাজারে ১৪ রকমের সবজি পাওয়া যাচ্ছে । একটি পরিবারের জনসংখ্যা বিচার করে সেই হিসেবে পরিবার পিছু সবজি বাজার দেওয়া হচ্ছে । আর তার সঙ্গে পরিবার পিছু দেওয়া হচ্ছে ২টো করে ডিম । এই বিনামূল্যে বাজার বসেছে একটি ফাঁকা মাঠে । সবজি বিক্রেতা থেকে শুরু করে ক্রেতা সবার মধ্যে এক মিটারের বেশি দূরত্ব রাখা হয়েছে । আর সমস্ত কর্মকাণ্ড নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করছেন কাউন্সিলর তপন দাস। 


এই ভাবনা কীভাবে মাথায় এল? প্রশ্নের জবাবে তপন দাস জানান,  "লকডাউনের সময়সীমা বাড়বে।  এই আন্দাজ করার পরই আমি চিন্তাভাবনা করি চাল, ডাল অনেকে দিচ্ছে । কিন্তু দেড়মাস আরও কিছু  লাগবে। তখনই  সবজি বাজার করার ভাবনা মাথায় আসে । ব্যক্তিগত পুঁজির পাশাপাশি কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা  এবং প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সাহায্য চাই । তারা রাজি হওয়ার পর ভোটার তালিকা দেখে বিপিএল কার্ড হোল্ডারদের তালিকা তৈরি  করি । সেই  তলিকার ভিত্তিতে ৭টি ওয়ার্ডের ২৫০ পরিবার বিনামূল্যে বাজারের সুবিধা পাচ্ছেন । তবে পরিবারের সদস্য সংখ্যার ভিত্তিতে সবজি দেওয়া হচ্ছে । প্রতি রবিবার এই বাজার বসছে।"


বিনামূল্যে বাজারের সুবিধা পেয়ে ভীষণ খুশি এলাকার পলাশ সেন, রেনি মিস্ত্রি, তুলসি পালরা । তাঁদের প্রত্যেকের কথায়, "লকডাউনে রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে । যেটুকু সম্বল ছিল তা দিয়ে কয়েকদিন চলেছে । ৪-৫ দিন ধরে একবেলা খাবার জুটছিল। যেভাবে হোক চাল জোগাড় করে নেব । এখন বিনামূল্যে সবজি, ডিম পাওয়াতে পেট ভরে খেতে পাচ্ছি । যা দিচ্ছে এক সপ্তাহ কষ্ট করে চলে যাচ্ছে । আগে তো কিছুই পাচ্ছিলাম না। বাবা-মা এবং সন্তানদের মুখে এখন খাবার তুলে দিতে পেরে শান্তি পাচ্ছি ।" কাউন্সিলর তপন দাস জানিয়েছেন, যতদিন লকডাউন চলবে ততদিন এই বিনামূল্যে বাজারও চলবে।


আরও পড়ুন, করোনা 'কেড়েছে' বাবা-মাকে! হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে একা একাই খেলে যাচ্ছে সদ্যোজাত