বাড়ি ভাঙতেই প্রকাশ্যে `রাসবিহারীকে দেখা সুড়ঙ্গ`
নিজস্ব প্রতিবেদন: তিন দিন পর সবেমাত্র খাবারে মুখ দিয়েছেন দাদা। পাশে বসে হাতে পাখা নিয়ে পরম যত্নে হাওয়া দিচ্ছেন বোন। হঠাত্ বাড়ির দীর্ঘদিনের পরিচারিকার হন্তদন্ত প্রবেশ। গিন্নিমা কে ইশারায় ডেকে নিয়ে লাগোয়া দালানে চলে গেলেন তিনি। দাদা ততক্ষণে ভাত ভেঙে তারমধ্যে সাধের মুগের ডাল ঢেলেছেন। এরমধ্যেই শশব্যস্ত হয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে গলা নামিয়ে বোনের উদ্বিঘ্ন উচ্চারণ, "দাদা, গোরা পুলিশ ঘিরে ফেলেছে বাড়ি...দারোগা এসে দাঁড়িয়েছে দুগ্গা দালানে..."। খাওয়া শুরু করার আগেই শেষ। লহমায় আসন ছেড়ে, বিছানার নীচ থেকে পিস্তলটা তুলে কোমরে গুঁজে নিলেন দাদা। কোনও মতে পাঞ্জাবিটা গলিয়েই বললেন, "চানঘরের পিছনের দরজায় তালা নেই তো?"
বোনের উত্তর - না-না, খোলা...
দারোগা ততক্ষণে সম্ভ্রান্ত গৃহকর্তার বাধা অতিক্রম করে চলে এসেছে আসল জায়গায়। আর ওদিকে, চানঘরের দরজা পেরিয়ে সুড়ঙ্গ বেয়ে গোরা পুলিসের নজর এড়িয়ে অন্ধকারে মিশে গিয়েছেন আলো জ্বালাতে সংকল্পবদ্ধ যুবক রাসবিহারী বোস...
দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার আলো নিয়ে আসতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অগ্নিযুগের দামাল শিক্ষিত বাঙালি যুবক রাসবিহারী বোস সম্পর্কে এমনই নানা গল্প শুনেছেন রাসবিহারীর বোনের শ্বশুরবাড়ি এলাকা ডোমজুরের করলা অঞ্চলে বেড়ে ওঠা মানুষজন। কিন্তু সে তো নেহাতই গল্প ছিল...এ যে দেখা গেল সত্যি! বিস্ময়ের ঘোর স্থানীয় ছেলে বুড়োদের চোখে মুখে।
বিস্মিত স্থানীয় প্রশাসনও। কিন্তু ঘটনাটি ঠিক কী?
ডোমজুড়ের করলাতে পুরনো বাড়ি ভাঙতে গিয়ে দেখা মিলল সুড়ঙ্গের। কিন্তু সে তো কত জায়গাতেই হয়। তবে এ বাড়ির গুরুত্ব আলাদা। কারণ, সংশ্লিষ্ট বাড়িটি রাসবিহারী বসুর বোনের শ্বশুরবাড়ি। পরবর্তীকালে শরিকেরা বাড়িটি জনৈক মণিরঞ্জন হালদারকে বিক্রি করে দেন। বর্তমান সেই মালিকই শুরু করেন বাড়ি ভাঙার কাজ। আর সেই বাড়ি ভাঙতেই মুক্ত হল গুপ্ত পথ। স্থানীয়দের দাবি, এখানেই লুকিয়ে থাকতেন রাসবিহারী বসু। পুলিসের চোখে ধুলো দিয়ে এই পথ দিয়ে বহুবার পালিয়েও গিয়েছেন অগ্নিযুগের দামাল ছেলে রাসবিহারী।
ইতিহাসের মুখে থমকে গেছে বর্তমান।
সুড়ঙ্গ দেখতে ভিড় জমান কৌতুহলী মানুষ। সুড়ঙ্গের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিসও। পুলিসের নির্দেশেই আপাতত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে কাজ। কিন্তু এমন ইতিহাস বিজড়িত বাড়ির ভবিষ্যত কী হবে? সরকারি স্তর থেকে কী সংরক্ষণ করা হবে এমন অহঙ্কারের অতীতকে? নাকি কবলই জুটবে অবহেলা? প্রশ্ন স্থানীয়দের গলায়।
অনেকের আবার সন্দেহ এ বাড়ির গুপ্ত কুঠুরি থেকে গুপ্তধনও মিলেছে প্রচুর। তবে তার সত্যতার এখনও প্রমাণিত নয়। কিন্তু, সোনার কলসি বা মোহরের সত্যতা নিয়ে যতই প্রশ্ন থাকুক, গুপ্তধন নিয়ে অন্তত কোনও প্রশ্ন নেই। কারণ, রাসবিহারী যে গুপ্ত পথ ধরে বারবার গোরা পুলিসের দুঁদে বাহিনীকে ঘোল খাইয়েছেন তা গুপ্তধন ছাড়া আর কী! এ সুড়ঙ্গই তো দাবী করতে পারে, আমি রাসবিহারীকে দেখেছি।