জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় পুলিস গ্রেফতার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ চৌধুরীকে। প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরীর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোণা থানার খারুষা গ্রামে। বাড়িতে থাকেন বাবা নিরূপ চৌধুরী ও মা প্রণতি চৌধুরী। ছেলের গ্রেফতারের খবর গিয়ে পৌঁছেছে তাঁদের কাছে। যদিও ছেলে দোষী এমনটা মানতে চাইছেন না সৌরভের বাবা-মা। ছেলের গ্রেফতারিতে সৌরভের বাবা-মায়ের দাবি, ছেলে কোনওভাবেই এই ঘটনার সাথে যুক্ত নয়। যদিও সৌরভের বাবা বলেন, তবে সত্যিই যদি ছেলে প্রকৃতই দোষী হয়, তাহলে তার কঠোর শাস্তি হোক। কিন্তু মা প্রণতি চৌধুরীর দাবি, তাঁদের ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। মৃত ছাত্র স্নপ্নদীপের বাবা-মা তাঁদের ছেলের নাম-ই বারবার নিচ্ছে। তাঁরা-ই সৌরভকে ফাঁসিয়েছে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কৃষক পরিবারে জন্ম সৌরভের। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সৌরভ। সৌরভের বাবা নিরূপ চৌধুরী একজন প্রান্তিক কৃষক। গ্রামের মানুষ থেকে শুরু করে পরিবারের সদস্য সকলেই বলছেন, গ্রামের ছোট্ট ছেলেটা লেখাপড়ায় খুবই ভালো ছিল। ভালো করে পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্যই কলকাতায় গিয়েছিল উচ্চশিক্ষার জন্য। কিন্তু হঠাৎ করে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় গ্রামের শান্ত স্বভাবের ছেলেটার নাম জড়াবে, এটা কেউই মেনে নিতে পারছে না। এককথায় স্তম্ভিত প্রতিবেশী থেকে সৌরভের পরিবার। সৌরভের বাবা নিরুপ চৌধুরীরা ৫ ভাই। সকলে আলাদাই থাকেন। কিন্তু ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের ছেলের নাম জড়ানোয় ও গ্রেফতার হওয়ায় ভেঙে পড়েছেন সকলেই। গ্রাম থেকে কিছু দূরে টেনপুর গ্রামের টেনপুর হাইস্কুলের ছাত্র ছিল সৌরভ। সৌরভের গ্রেফতারের খবর শুনে হতবাক তার স্কুলের প্রাক্তন ছাত্ররাও। ছেলের গ্রেফতারির খবর পেয়েই শনিবার ভোরে কলকাতা রওনা দিয়েছেন বাবা-মা। 


দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার রাতে সৌরভ চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। তার বয়ানে অসংগতি মিলেছে বলে খবর। তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই খুন-সহ আরও একটি ধারায় মামলা রুজু করেছে যাদবপুর থানার পুলিস। কসবা থানায় গিয়ে ধৃত সৌরভ চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন স্বয়ং কলকাতার পুলিস কমিশনার বিনীত গোয়েল। তারপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজারে। আজ আদালতে পেশ করা হবে ধৃত সৌরভ চৌধুরীকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সৌরভ ২০২১ সালে অঙ্কে এমএসসি করেন। বিভিন্ন সময়ই যাদবপুরের হস্টেলে এসে থাকত সে। বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তনী হলেও, ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পড়ুয়াদের সঙ্গেই সে বেশিরভাগ সময় থাকত বলে জানা গিয়েছে। এখান থেকে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিল সে।


প্রাক্তন ছাত্র হয়েও হস্টেলের মেস কমিটিতে ছিল সৌরভ। এমনকি মেস কমিটির অন্যতম মাথা এই সৌরভ চৌধুরী। স্বপ্নদীপের বাবার অভিযোগ, সৌরভ চৌধুরীর নেতৃত্বেই হস্টেলের ছেলেরা অত্যাচার করে উপর থেকে ধাক্কা মেরে নীচে ফেলে মেরে ফেলেছে তাঁর ছেলেকে। তদন্তে জানা গিয়েছে, প্রথমে হস্টেলে সুযোগ পায়নি স্বপ্নদীপ। তখন সৌরভের সঙ্গে চায়ের দোকানে আলাপ হয়। যাদবপুরের প্রাক্তনী, প্রথম বর্ষের পড়ুয়াকে জানান, হস্টেলে সুযোগ না পেলে গেস্ট হিসেবে থাকতে পারে সে। হস্টেলে এই নিয়ম চালু আছে। এজন্য ১০০০ টাকা দিতে হবে! ৩ অগাস্ট সৌরভ আর স্বপ্নদীপের এই কথা হয়। ৪ অগাস্ট থেকে হস্টেলে মনোতোষ নামে এক আবাসিকের রুমে থাকতে শুরু করে স্বপ্নদীপ। একসঙ্গে ৩ জন থাকত স্বপ্নদীপরা। কিন্তু এই থাকার ব্যবস্থার কথা আদৌ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানত কিনা? প্রশ্ন উঠেছে।


এই ঘটনায় সামনে এসেছে আরও একটি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। রাত ১১টা ৩২-এ দুর্ঘটনা ঘটে স্বপ্নদীপের সঙ্গে। সূত্রের খবর, ওই দিনই সাড়ে ১২টার সময় মেইন হস্টেলের আবাসিকরা নিজেদের মধ্যে মিটিং করতে বসে। প্রশ্ন উঠছে, সাড়ে ১১ টার সময় যখন হস্টেলের একটি ছেলের সঙ্গে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল, সেই ছাত্রটি যখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে, তখন সেই ঘটনার পর হস্টেলের ছেলেরা কী বিষয় নিয়ে মিটিং করতে বসল? আলোচনা করে কী বিষয় স্থির করতে মিটিং বসেছিল সেদিন রাতে?


আরও পড়ুন, Jadavpur University Student Death: 'বিভিন্ন ঘরে ঘুরে দিতে হয়েছিল শরীরের বিবরণ, এমনকি পুরুষাঙ্গেরও!'



(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)