প্রদ্যুত্ দাস: ছোটবেলায় আমরা সবাই পড়েছি, পড়াশোনা করে যে, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে। গাড়িতে যে এভাবে চড়তে হবে কখনো ভাবতে পারেনি জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের জোরপাকড়ি এলাকার প্রিয়া চক্রবর্তী। প্রিয়া জোরপাকরি আব্দুল গনি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পর ময়নাগুড়ি কলেজে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে । বিএ পাস প্রিয়ার ইচ্ছে ছিল আরো পড়ার ,কিন্ত তা আর হয়ে উঠল না। যে হাতে  আগে পেন ধরার কথা সেই হাত এখন টোটোর এক্সেলেটরে। প্রিয়ার এই করুন কাহিনী যখন আমরা জানতে চাই প্রিয়ার কাছে , তখন প্রিয়া আমাদেরকে বলেন । বাবা আগে টোটো করে পারুরুটি বিস্কুটের ফেরি করতো । এবছরের বিগত ফেব্রুয়ারি মাসে এক সন্ধ্যায় বাবা ফেরি করতে গিয়ে দুর্ঘটনা স্বীকার হয়। তারপর বাবার শুরু হয় চিকিৎসা , পাশাপাশি নানারকম অপারেশন । সে সময় প্রচুর অর্থের বিনিময়ে বাবাকে কোনরকম বাঁচিয়ে আনতে পারি। স্বাস্থ্য সাথী কার্ডেও কোন সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। শুধু তাই না ঘটনার পর থেকে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য প্রধান বা কেউই খোঁজখবর নেয়নি বলে অভিযোগ পরিবারের।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন-মোদী-হাসিনার গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি পুনর্নবীকরণ, বিষয়টি সংসদে তোলার কথা ভাবছে ক্ষুব্ধ তৃণমূল


প্রিয়া বলেন, বর্তমানে বাবা বাড়িতেই শয্যাশায়ী। আমরা বাড়িতে পাঁচজন, আমরা তিন বোন ও বাবা মা। এক বোন নার্সিং নিয়ে পড়ছে ব্যাঙ্গালোরে। আরেক বোন কোচবিহারে আইন কলেজে পড়াশোনা করছে। বাবার এই দুর্ঘটনার পর, ভীষণভাবে চিন্তায় রয়েছি , বাবার চিকিৎসার খরচের পাশাপাশি দুই বোনের পড়াশোনার খরচ কি করে আসবে তা ভেবেই কূল কিনারা পাচ্ছি না। টোটো বোঝাই করে নিজেই টোটো চালিয়ে দুটি বিস্কুটের লাইন। সপ্তাহে দুদিন হাটে গিয়ে বিস্কুটের দোকান করা। দোকানে দোকানে বিস্কুট রুটি ইত্যাদি নিজেই পৌঁছে দেওয়া। বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক বিল সমস্ত কাজেই দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছেন শিক্ষিত প্রিয়া দেবী। বাবার দুর্ঘটনার পর আর কোন কিছু না ভেবে নিজের পড়াশোনা সেখানেই ইতি টেনে নিয়ে বাবার সেই টোটো করে রুটি বিস্কুটের ব্যবসাটা কাধে তুলে নেন। প্রায় চার মাস ধরে করছি। কোন সমস্যা হয় না। দিব্যি করে যাচ্ছি।


বোন লিজা চক্রবর্তী বলেন, আমার বড়দি বাবার দায়িত্ব পালন করছে। আমাদের ভাই বা দাদা নেই। দাদার কাজই দিদি করে চলেছেন। যদি কোনওদিন প্রতিষ্ঠিত হতে পারি সর্বপ্রথম দিদির পাশে দাঁড়াবো । বোন হয়ে যতটা পারি দিদিকে সাহায্য করবো। প্রিয়া ছোট থেকেই খুব পরিশ্রমী, তিন বোন কোন ভাই বা দাদা নেই, ফলে ওরা লড়াইটা আগে থেকেই জানে। আমরা ওকে মেয়ে মনে করি না আমরা ওকে ছেলেই মনে করি। তাই ও আজকে এই এত বড় একটি চ্যালেঞ্জ নিয়েছে বাবার চিকিৎসার পাশাপাশি কিভাবে সংসারটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় এবং বোনদের যেন পড়াশোনা বন্ধ না হয়। আমরা সকল পাড়া-প্রতিবেশীরা খুবই গর্বিত এই বোনটির জন্য।


 এই বিষয়ে ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শিবশঙ্কর দত্ত বলেন, মেয়েটির এহেনও কাজে সাধুবাদ জানাই। পরিবারের সাথে ইতিমধ্যে যোগাযোগ হয়েছে সব রকম ভাবেই পরিবারটি পাশে থাকার আশ্বাস শিব শংকর বাবুর। সমস্ত বিষয়েই খোঁজখবর করে দেখা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।


অপরদিকে ধর্মপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তথা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা রেনুকা ডাকুয়া বলেন খবর পাওয়ার পর পরিবারটির কাছে যাওয়া হয়েছিল পাওয়া যায়নি। আবার গিয়ে খোঁজখবর করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়,তা শেখা উচিত ময়নাগুড়ির এই প্রিয়া দেবীর কাছ থেকে।



(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)