নিজস্ব প্রতিবেদন:  পরনে শুধুমাত্র লাল নাইটি, তেল চিপচিপে চুল টানটান করে বাঁধা। সঙ্গে তল্পিতল্পা। কনকনে ঠান্ডাতেও গায়ে কোনও গরম বস্ত্র নেই। মাথা নিচু করে বসে রয়েছে একভাবে। চারিদিকে কী ঘটছে, যেন ভ্রূক্ষেপ নেই কিছুরই। আপাত দেখেই মনে হতে পারে, হঠকারী সিদ্ধান্তেই হয়তো বাড়ি ছেড়েছেন তিনি। বৃহ্স্পতিবার সকালে কাটোয়া রেল স্টেশনের জিআরপি থানা লাগোয়া প্ল্যাটফর্মের শেডের নিচে ঠিক এইভাবেই বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল এই তরুণীকে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: বিয়ের ফটোগ্রাফারের প্রতারণা, ২ বছর পরও মিলল না ছবি


পথ চলতি সাধারণ মানুষই তাঁকে দেখতে পান, খবর পেয়ে ওই যুবতীকে দেখতে যান কর্তব্যরত রেলপুলিসও। কথা বলেন প্রথমে, জানার চেষ্টা করেন তাঁর ইতিবৃত্ত। কিন্তু তখনও পুলিসকর্মীরাও জানেন না ওই যুবতী আদতে দেখতে পান না। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর মুখ তুলে তাঁকাতেই একপ্রকার মায়াই হয় প্রত্যক্ষদর্শীদের।


যুবতীকে নিয়ে যাওয়া হয় জিআরপি থানায়। কথার ফাঁকেই উঠে আসে আসল সত্য। কেন বাড়ি ছেড়েছেন তরুণী?  উত্তর বড়ই মর্মান্তিক। জানান, এক যুবকের লালসার শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে।  কীভাবে নির্যাতনের প্রতিবাদে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন?  আর সেই লড়াই চালাতে গিয়ে পরিবারের কাছেই কীভাবে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে তাঁকে?  এক নিঃশ্বাস ‘পুলিস দাদা’দের সব বলে ফেলেন কাটোয়ার করজগ্রামে বাসিন্দা বছর আঠেরোর ওই তরুণী।


দিনটা ২০১৪, ১৯ অগাস্ট। তখন ঠাকুমার সঙ্গে হরিপুর গ্রামের বাড়িতে থাকতেন বাপ-মা মরা মেয়েটি। একদিন বাড়িতে একা থাকার সুযোগ নিয়ে তরুণীকে ধর্ষণ করে বাপি ওরফে বুদ্ধদেব মাঝি নামে প্রতিবেশী এক যুবক। ওই যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন তরুণী। তাকে গ্রেফতারও করে পুলিস। অভিযোগ, এরপর থেকেই শুরু হয় অভিযুক্তের সাঙ্গপাঙ্গদের শাসানি, হুমকি।


শাসানির ভয়ে প্রথমে হরিপুর গ্রাম থেকে ঠাকুমার সঙ্গে করজগ্রামে চলে আসেন তিনি। সেখানে একটি কাজও করতে থাকেন। অভিযোগ, বাপি মাঝির লোকেদের শাসানি দিনের পর দিন বাড়তে থাকে। এরপর নাকি তরুণীর ঠাকুমাও বেঁকে বসেন। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন তরুণীকে। কিন্তু নিজের লড়াইয়ে অনড় থাকেন তিনি। আর সেই কারণেই চার মাস আগে বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন প্ল্যাটফর্মে।


আরও পড়ুন: গরুতে খেয়েছে ভুট্টা গাছ, ছেলের হাতে খুন বাবা


চার মাস ধরেই এইভাবে নানা জায়গায় ঘুরেছেন। আজ বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের। নির্যাতিতার ঠাকুমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কখনও ওকে মামলা তুলে নিতে বলেনি। আমিও অভিযু্ক্তের শাস্তি চাই।‘


ঘটনার কথা জানতেই কাটোয়া ১ নম্বর ব্লকের বিডিও মরগুব ইলমি বলেন, ‘প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। কিশোরীকে তার ঠাকুমার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাদের নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করা হবে।‘


২০১৪-২০১৮.. সময়টা মোটেও কম নয়। নির্যাতনের বিচার এখনও পাননি নির্যাতিতা। প্ল্যাটফর্মের শেডের নীচে যেন মুখ গুঁজে বসে রয়েছে দেশের বিচারব্যবস্থা।