কৌশিকী অমাবস্যার রাতেই সিদ্ধিলাভের শুভ যোগ? তৈরি হচ্ছে তারাপীঠ
বৌদ্ধ ও হিন্দু তন্ত্রে এই দিনের এক বিশেষ গুরুত্ব আছে, তন্ত্র মতে আজ এই রাতকে তারা রাত্রি বলা হয়। সাধক নিজের ইচ্ছা মতো ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক শক্তি নিজের সাধনার মধ্যে আত্মস্থ করে, ও সিদ্ধি লাভ করতে পারেন।
কমলাক্ষ ভট্টাচার্য: কৌশিকী অমাবস্যা, অন্য সব অমাবস্যার থেকে একটু আলাদা কারণ তন্ত্র মতে ও শাস্ত্র মতে ভাদ্র মাসের এই তিথি একটু বিশেষ কারণ অনেক কঠিন ও গুহ্য সাধনা আজকের দিনে করলে আশাতীত ফল মেলে। বৌদ্ধ ও হিন্দু তন্ত্রে এই দিনের এক বিশেষ গুরুত্ব আছে, তন্ত্র মতে আজ এই রাতকে তারা রাত্রি বলা হয়। সাধক নিজের ইচ্ছা মতো ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক শক্তি নিজের সাধনার মধ্যে আত্মস্থ করে, ও সিদ্ধি লাভ করতে পারেন। সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়কারীনি মা তারা "কৌশিকী" রূপে এই দিব্য তিথিতেই অশুভের প্রতীক শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেছিলেন। তাই কৌশিকী অমাবস্যার মহারাত্রিকে "তারা রাত্রি" বলা হয়। ১৮৬৪ সালে , মাত্র ২৬ বছরের যুবক অবস্থায় এই দিব্য কৌশিকী অমাবস্যাতেই বামদেব পরমসিদ্ধি লাভ করেন - মহাপীঠ তারাপীঠ এর মহাশ্মশানেই। অখন্ড মহাকলের সদা-চৈতন্যময় পরমপুরুষ , ত্রিলোকজননী মা তারার জীবন্ত বিগ্রহ শ্রী শ্রী বামদেব এর অপার লীলায় তখন থেকেই - মহামোক্ষ ও সিদ্ধি লাভের জন্য মহা-কৌশিকী অমাবস্যা সর্বশ্রেষ্ঠ পুন্যতিথি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং কৌশিকী অমাবস্যায় শক্তি আরাধনা সর্ব-পরিব্যাপ্ত ।
আরও পড়ুন, Weather Report: রাজ্যে ফের বৃষ্টির পূর্বাভাস, বাড়ছে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি
চন্ডীতে বর্ণিত মহা সরস্বতী দেবীর কাহিনীতে বলা আছে, পুরাকালে একবার শুম্ভ ও নিশুম্ভ কঠিন সাধনা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করলে চতুরানন তাদের বর প্রদান করেন কোনও পুরুষ তাদের বধ করতে পারবে না । শুধু কোনো অ-যোনি সম্ভূত নারী তাদের বধ করতে পারবে অর্থাৎ এমন এক নারী যে কোনও মাতৃ গর্ভ থেকে উৎ পন্ন হয়নি। তার হাতেই এই দুই অসুর ভাই এর মৃত্যু হবে। কিন্তু পৃথিবীতে এমন নারী কোথায়? এমনকি আদ্যা শক্তি মহামায়া মেনকা রানীর গর্ভে জন্ম নিয়েছেন। তাই তিনিও ওদের নাশ করতে পারবেন না,তবে কি উপায়?
পূর্ব জন্মে পার্বতী যখন সতী রূপে দক্ষ যজ্ঞ স্থলে আত্মাহুতি দেন তার কারণে এই জন্মে ওনার গাত্র বর্ণ কালো মেঘের মতো তাই ভোলা নাথ আদর করে তাকে কালিকা ডাকতেন। একদিন দানব ভাইদের দ্বারা পীড়িত দেবতারা যখন ক্লান্ত কৈলাসে আশ্রয় নিলেন, শিব সব দেবতাদের সামনেই পার্বতীকে বললেন "কালিকা তুমি ওদের উদ্ধার করো " সবার সামনে কালী বলে ডাকাতে পার্বতী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ,অপমানিত ও ক্রোধিত মনে মানস সরোবরে কঠিন তপস্যা করলেন ও তপস্যান্তে শীতল মানস সরোবরের জলে স্নান করে নিজের দেহের সব কালো কোশিকা পরিত্যাগ করলেন ও পূর্নিমার চাঁদের মতো গাত্র বর্ণ ধারণ করলেন। ওই কালো কোশিকাগুলি থেকে এক অপূর্ব সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ দেবীর সৃষ্টি হয়। ইনি দেবী কৌশিকী। আজ সেই তিথি যেদিন এই দেবীর উৎপত্তি হয় ও শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। তাই এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা।
আবার আজকের এই দিনে দশ মহাবিদ্যার অন্যতম দেবী তারা আজ বামদেবের সন্মুখে আবির্ভূত হন। বামদেব পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে আজকের দিনেই সিদ্ধিলাভ করেন। পশ্চিমবঙ্গের বীরভুম জেলায় অবস্থিত তারাপীঠ এ আজ এই উপলক্ষ্যে বিশাল উৎসব হয়, তারা দেবীকে বৌদ্ধ ধর্মের অন্তর্গত বজ্রযানে নীলসরস্বতীও বলা হয়। লোকে বিশ্বাস করে এই তিথিতে ভাত খেতে নেই।