কমলিকা সেনগুপ্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

শাসনে তাঁর শাসনই শেষ কথা ছিল। তাঁর অনুমতি ছাড়া একটা মাছিরও প্রবেশাধিকার ছিল না শাসনে। কিন্তু এখন সময় বদলেছে, দিন বদলেছে, আর তার সঙ্গেই বদল এসেছে শাসনের শাসনভারেও। কলকাতায় বসে এখনও শাসন মানে মজিদ মাস্টারের কথাই সবার আগে মনে পড়ে। তাই শাসনের বর্তমান শাসনব্যবস্থা বুঝতে মজিদ মাস্টারের কাছে যাওয়াটা অনিবার্য। কিন্তু, শাসনের একদা বেতাজ বাদশা এখন আর শাসনে নয়, থাকেন বারাসতে। শাসন থেকে গত ৯ বছর তিনি নির্বাসিত।


বারাসতে পৌঁছে যেকোনও দোকানে জিজ্ঞাসা করলেই দেখিয়ে দিচ্ছে মাস্টারের বাড়ির রাস্তা। একতলা ছোট্ট এক ঘরে দেখা পাওয়া গেল শাসনের ভূতপূর্ব শাসককে। স্বাভাবিকভাবে প্রথম প্রশ্নেই জানতে চাইলাম, শেষ কবে শাসন গিয়েছেন? প্রৌঢ় জানালেন, ২০১৪-তে শেষ বার গিয়েছিলেন। তবে তাড়া খেয়ে ফিরতে হয়েছিল সে যাত্রায়। কিন্তু নিজের ভিটে ছাড়তে হলেও দমছেন না মাস্টার। বরং তিনি মনে করিয়ে দিলেন, "বিদ্যাসাগরও বঙ্গ ছেড়েছিলেন। যিশু খ্রিষ্টও মারা গিয়েছিলেন। ফলে, আমার বাড়ি থাকা নিয়ে আর কিছু বলার নেই"। কিন্তু এককালের ডাক সাইটে বাম নেতার বর্তমান রাজনৈতিক কর্মসূচীর খবর কী? প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই সটান জবাব, "সদস্যপদ পুনর্নবিকরণ করিনি"। এরপর আরও বললেন, "রাজনীতিতে আর থাকার ইচ্ছা নেই। দুঃখ হয়, দল ঠিক পথে চলছে না। আদর্শচ্যুত হচ্ছে দল, তাই আর দলে ফেরা সম্ভব না। সিপিআইএম এখন হাত মিলিয়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে। আর এদের সঙ্গে লড়াই করেই সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছি। এটা ঠিক নয়।"


এ যেন এক অন্য মজিদ মাস্টার! নিজেই জানালেন, কিছু বইপত্রই এখন তাঁর সঙ্গী। মূলত লেখাপড়া নিয়েই আছেন একদা নিজেকে শাসনের মুখ্যমন্ত্রী বলে দাবি করা মজিদ। তবে অবাক হওয়ার মতো আরও অনেক রসদ আছে এই মজিদ মাস্টারের মধ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেই হদিস দিলেন সেইসব রসদের। রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের বেশ কয়েকটা দিক যে তাঁর বেশ ভালই লাগে, সে কথা জানাতে কোনও কুণ্ঠা দেখা গেল না মজিদের মধ্যে। এককালে যে মমতাকে শাসনে ঢুকতে দেননি মজিদ, সেই মমতা সরকারের কন্যাশ্রী, সবুজ সাথীর মত প্রকল্পের প্রশংসাতেই এখন পঞ্চমুখ দলের সদস্যপদ পুনর্নবিকরণ না করা মাস্টার। তাঁর স্পষ্ট কথা, "এসব প্রকল্পে উপকৃত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাই ভাল লাগছে"। এরপরই জেগে উঠছে তাঁর 'মাস্টার সত্ত্বা', "যখন দেখি কন্যাশ্রীর টাকাতে বাচ্চা বাচ্চা মেয়েরা লেখাপড়া করছে, ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে, তখন খুব ভাল লাগে।"


তৃণমূল নেত্রীর এত প্রশংসা শুনলেই যে সন্দেহটা তৈরি হয় পেশাদার সাংবাদিকের মনে, এবার সেটাই খোলসা করে ফেললাম, "কী ব্যাপার বলুন তো, আপনি কি তৃণমূলে যোগ দিতে ইচ্ছুক"? প্রশ্ন শুনতে না শুনতেই মাস্টারের উত্তর যেন তৈরি ছিল, বললেন, ''বয়স হয়ে গেছে, আর রাজনীতি করার ইচ্ছা নেই''।


তবে, শাসন এখনও অবাধ্য। এবারও পঞ্চায়েত ভোটের আবহে মনোনয়ন জমার পর প্রকাশ্য দিনের আলোয় খুন হয়েছেন তৃণমূলের এক নেতা। যে খুন করেছে তাকেও মারা যেতে হয়েছে জনরোষে। এসব খবরও জানা আছে শাসনের একদা শাসকের। সমাজের সবাই চায়, অবাধ্য শাসনে সুশাসন ফিরে আসুক। শান্তি ফিরুক। আর স্বয়ং মজিদ মাস্টারও সুশাসন চাইছেন। অবাক হলেও এটাই সত্যি! বারাসতের মাস্টার নিবাস থেকে বেরিয়ে মনে হচ্ছিল, মজিদও শান্তি চায়! এটাই বোধ হয় পরিবর্তন।