নিজস্ব প্রতিবেদন: চা বাগানের রাস্তায় ছিঁড়ে পড়েছিল বিদ্যুতের তার। আর সেই তার পায়ে জড়িয়ে তড়িতাদহ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ল ১০ বছরের ছাত্রী। মালবাজার মহকুমার সাইলি চা বাগানের ঘটনা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

শনিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ওই ছাত্রী বৃষ্টির মধ্যেই স্কুলে যাচ্ছিল। বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফ্যাক্টারি লাইনে পৌঁছে রাস্তার জমা জলে পা দিতেই বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়। ওই জমা জলে যে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে ছিল তা বুঝতেই পারনি ছাত্রীটি। মৃত স্কুল ছাত্রীর নাম প্রিয়া টোপ্পো(১০)। বাড়ি সাইলি চা বাগানের চেল লাইনে। সাইলি চাবাগানের বাজার লাইনের মনসা স্কুলে পড়ত সে।  


সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটে গেলেও বিদ্যুত্ দপ্তরের কোন আধিকারি বা কর্মী ঘটনাস্থলে না আসায়, মৃতদেহ আটকে বিক্ষোভ এলাকাবাসী। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে রাঙ্গামাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অশোক চিক বড়াইক,  এলাকার তৃণমূল চা শ্রমিক নেতা অর্জন ছেত্রী, সাইলি এলাকার তৃণমূল নেতা আগাষ্টুষ কেরকাট্টা,  মাল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুশীল কুমার প্রসাদ। তাঁরা এসে উত্তেজিত চা শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।


খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে আসে মালবাজার থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী।  মালবাজার পুলিশের এস ডি পি ও রবীন থাপা, আই সি সুজিত লামা।  পুলিশ এসে গ্রামের মানুষদের বোঝান যাতে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠানো যায়। কিন্তু বিদ্দুৎ দপ্তরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে না আসায় বিক্ষোভ দেখাতে থাকে এলাকার মানুষ।


মৃতের বাবা রতন টোপ্পো বলেন, শনিবার সকালে স্কুলে যাবার জন্য মেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর  কিছুক্ষণ পর জানতে পারি আমার মেয়ে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়েছে।  তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে এসে দেখি মেয়ে আর নেই। ঘটন স্থলে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে রাস্তার ওপর মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বিদ্যুত্ দফতরের গাফিলতির জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাস্তার ওপর বিদ্যুতের তার ঠিকঠাক নেই। বহু পুরনো তার এখনও রয়েছে। 


এলাকার বাসিন্দা, তথা প্রত্যক্ষদর্শী বিনয় বরা বলেন, আমার গ্রামের মেয়ে এটি। শনিবার আমি সাইকেল করে বাড়ি ফিরছিলাম। প্রায় ২০০ মিটার দূর থেকে দেখছি একটি স্কুল ছাত্রী হঠাৎ রাস্তার উপরে পড়ে গেল। আমি তড়িঘড়ি এসে মেয়েটিকে উঠাতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু দেখি বিদ্যুতের তার মেয়েটির গায়ে লেগে আছে। লাঠি দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। এরপর স্থানীয় মানুষজন মেন লাইন বন্ধ করে দেয়। এরপর শ্রমিকেরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। সকাল সাড়ে আট টায় এই দুর্ঘটনা ঘটে গেলেও বিদ্দুৎ দপ্তরের আধিকারিকেরা ১২টা নাগাদ ঘটনাস্থলে আসে। আর এতেই এলাকার মানুষ আর বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। 


রাঙ্গামাটি গ্রাম পঞ্চায়েতর প্রধান অশোক চিক বড়াইক বলেন, খুব দুঃখজনক ঘটনা। স্কুলে যাবার সময় বিদ্দুৎ এর তার ছিরে জলে পড়ে যায়। এরপর ওই জলে পা পরতেই মৃত্যু হয় প্রিয়া টোপ্পোর মত এক ফুটফুটে মেয়ের। পরিবার টি যাতে উপযুক্ত ক্ষতিপুরন পায়, তার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি বিদ্দুৎ এর তার ঠিকঠাক করার চেষ্টা করছি। 


মালবাজার মহকুমা পুলিশের এস ডি পি ও রবীন থাপা বলেন, মৃতদেহ দুপুর ১২ টা নাগাদ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জলপাইগুড়ি পাঠানো হয়েছে। মালবাজার পুলিশের উদ্যোগে মৃত দেহ ময়না তদন্ত করে আবার বাড়িতে পৌছে দেওয়া হবে। পাশাপাশি এলাকায় বিদ্দুৎ এর তারগুলো ঠিক করতে বলা হয়েছে বিদ্যুত্ দপ্তরকে। 


মালবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুশীল কুমার প্রসাদ বলেন, প্রায় ৪ ঘন্টার বেশি সময় ধরে মৃতদেহ রাস্তায় পড়ে ছিল। কারন গ্রামের মানুষের দাবি ছিল যতক্ষণ বিদ্যুত্ দপ্তরের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে না আসছে ততক্ষন মৃতদেহ তুলতে দেওয়া হবে না। এরপর প্রায় ১২ টা নাগাদ বিদ্যুত্ দপ্তরের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে আসেন। এলাকার মানুষকে ক্ষতিপুরণের আশ্বাস দেন। বিদ্দুৎ এর তার ঠিকঠাক করার আশ্বাস দেন এরপর দুপুর সাড়ে বারটা নাগাদ মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।


মালবাজারের বিদ্দুৎ দপ্তরের   ডিভিশনাল ম্যানেজার   নবীন কুমার এবং ওদলাবাড়ি স্টেশন ম্যানেজার কুশল সরকার বলেন, এই দুর্ঘটনা খুবই দুঃখের। আমাদের আসতে একটু দেরি হয়েছে ঠিকই, সেই জন্য এলাকার মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমরা এসে দেখলাম ২২০ ভোল্টেজের একটি তার ছিঁড়ে রাস্তার ওপর পড়ে রয়েছে। আমরা সব ঠিকঠাক করে দিচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের ওই এলাকায় সেফটি ডিভাইসও লাগানো ছিল। পরিবারটি যাতে দ্রুত ক্ষতিপূরণ পায়, সে ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে সব জানিয়েছি।


আরও পড়ুন-"বিদেশী শক্তি ভারতের বিদেশনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না", ভারতের প্রশংসায় Imran Khan


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)