রসালো সুস্বাদু মালদার আম এক ক্লিকেই এবার ঘরে আপনার হাতের মুঠোয়!
`আপাতত আমরা হিমসাগর, লক্ষ্মণভোগ ও ল্যাংড়া, এই তিন প্রজাতির আমের অর্ডার নিচ্ছি৷ তার দাম ওয়েবসাইটে দেওয়া রয়েছে৷ তার মধ্যেই ক্যুরিয়র চার্জ ধরা রয়েছে৷ দেশের যে কোনও জায়গায় আমরা পাঁচ থেকে ছ’দিনের মধ্যে আম পৌঁছে দেব৷`
রণজয় সিংহ: ঘরে বসেই এবার মালদার আমের স্বাদ পাবেন দেশবাসী৷ দেশের যে কোনও জায়গায়, যে কোনও মহল্লায় পৌঁছে যাবে মালদার এই অমৃত ফল৷ www.maldaamritfal.com এই ওয়েব সাইটে এক ক্লিক করলেই হাতের মুঠোয় পেয়ে যাবেন মালদার আম। অনলাইনে দেশ জুড়ে মালদার আম পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা শুরু করেছেন এক দম্পতি৷ জেলা উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তর এই দম্পতিকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দিয়েছে। এই দম্পতির সাফল্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছে প্রশাসন। তাকিয়ে আমচাষিরাও।
মালদা ইংরেজবাজার শহরের বালুচর এলাকার বাসিন্দা প্রসূন চিৎলাঙিয়া ও তাঁর স্ত্রী প্রীতা চিৎলাঙিয়া দীর্ঘদিন ধরেই মালদার আমকে কীভাবে দেশে একটা ব্র্যান্ড হিসাবে তুলে ধরা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন। তখনই তাঁদের মাথায় আসে অনলাইন পরিষেবা কথা৷ কিন্তু আম পচনশীল ফসল।তাই ঝুঁকিও রয়েছে৷ ফলে খুব কম সময়ের মধ্যেই গ্রাহকদের কাছে পৌঁছোতে হবে এই আম৷ এই ভাবনা থেকেই গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে তাঁরা এই পরিষেবা চালু করেন৷ প্রথমে ক্যুরিয়র সার্ভিসের মাধ্যমে কত কম সময়ে জেলার আম দেশের প্রত্যন্ত এলাকাতেও পৌঁছোনো যায়, কোন কোন প্রজাতির আম দেশবাসীর প্লেটে তুলে দেওয়া সুবিধেজনক, এসব নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেন তাঁরা৷
এরপর যোগাযোগ করেন লখনউ সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট অফ সাবট্রপিক্যাল হর্টিকালচার এবং মালদা জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের সঙ্গে৷ অবশেষে এই বছর তাঁরা পুরোপুরি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই পরিষেবা দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। www.maldaamritfal.com নামে একটি ওয়েবসাইটও তৈরি করেছেন৷ তাতে ক্লিক করলেই ঘরে বসে পেয়ে যাবেন মালদার আম। প্রসূনবাবু জানান, “গোটা দেশের মানুষ যাতে বাড়িতে বসেই এই জেলার আমের স্বাদ পায়, তার জন্য আমরা একটি ওয়েবসাইট চালু করেছি৷ ওই ওয়েবসাইটের মধ্যেই আমের অর্ডার থেকে শুরু করে পেমেন্ট গেটওয়ে রয়েছে৷ কেউ চাইলে হোয়াটসঅ্যাপেও অর্ডার করতে পারেন৷ আপাতত আমরা হিমসাগর, লক্ষ্মণভোগ ও ল্যাংড়া, এই তিন প্রজাতির আমের অর্ডার নিচ্ছি৷ তার দাম ওয়েবসাইটে দেওয়া রয়েছে৷ তার মধ্যেই ক্যুরিয়র চার্জ ধরা রয়েছে৷ দেশের যে কোনও জায়গায় আমরা পাঁচ থেকে ছ’দিনের মধ্যে আম পৌঁছে দেব৷ আমাদের আমে কোনও রাসায়নিক সার কিংবা বিষ ব্যবহার করা হয় না৷ ফলে দেশের মানুষ পুরোপুরি মালদার অর্গানিক আমের স্বাদ পাবে৷”
প্রসূনবাবু আরও বলেন, “এক সপ্তাহ ধরে আমরা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রচার শুরু করেছি৷ ইতিমধ্যেই গোটা দেশ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া মিলছে৷ তবে এখনও মালদার আম পুরোপুরি পরিপক্ক হয়নি৷ চলতি মাসের শেষ থেকে আমরা দেশ জুড়ে অনলাইনে আম সরবরাহ শুরু করব৷ আমরা প্রতি প্রজাতির আমের জন্য চার কিলোর প্যাকেট তৈরি করেছি৷ তবে যেহেতু আম পচনশীল, তাই আমরা কোনো রিস্ক নিচ্ছি না৷ ক্রেতাদের যাতে কোনও অসুবিধে না হয়, তার জন্য প্রতি প্যাকেটে অতিরিক্ত ৫০০ গ্রাম আম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ এই জেলার আমকে শুধু দেশ নয়, আগামীতে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য৷ এর জন্য সরকারের কাছে একটু সহযোগিতাও আশা করছি৷ ভবিষ্যতে আমরা আম থেকে তৈরি বিভিন্ন তরল, আমসত্ত্ব, জ্যাম, জেলি নিয়েও কাজ করতে চাই৷ আগামীতে আমাজন, বিগ বাস্কেট এবং জিও মার্টের মাধ্যমে এসব দেশ তথা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে৷”
প্রসূনবাবুর উদ্যোগ নিয়ে জেলা উদ্যানপালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সামন্ত লায়েক বলেন, “এবছর মালদার আমের বেশ ভালো উৎপাদন হবে বলে আমাদের আশা রয়েছে৷ গত বছর থেকে মালদার এক যুবককে কেন্দ্র করে আমরা জেলার আমের দেশব্যাপী অনলাইন মার্কেটিং ভবিষ্যৎ দেখতে শুরু করেছি৷ দেশের আমপ্রেমী মানুষ যাতে বাড়িতে বসেই মালদার আমের স্বাদ পান, তার জন্যই এই উদ্যোগ৷ এতে মালদার আমের যেমন প্রসার ঘটবে, তেমনই জেলার অর্থনীতি আরও দৃঢ় হবে৷ ওই যুবক গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে এই পরিষেবা চালু করেছিলেন৷ এবার তিনি ব্যাপক আকারে কাজ শুরু করেছেন৷ এর জন্য আমরা তাঁকে একটি প্রশিক্ষণও দিয়েছি৷ অনলাইন ব্যবসায় আমের প্যাকেজিং, লেভেলিং, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কীভাবে তিনি গ্রাহকদের ঘরে আম পৌঁছে দিতে পারবেন, সেসব শেখানো হয়েছে৷ এখন গোটা বিশ্বেই অনলাইন ব্যবসার রমরমা৷ তাই আমরা এভাবেই জেলার আমকে চারদিকে ছড়িয়ে দিতে চাইছি৷”