রণজয় সিংহ: ঘরে বসেই এবার মালদার আমের স্বাদ পাবেন দেশবাসী৷ দেশের যে কোনও জায়গায়, যে কোনও মহল্লায় পৌঁছে যাবে মালদার এই অমৃত ফল৷ www.maldaamritfal.com এই ওয়েব সাইটে এক ক্লিক করলেই হাতের মুঠোয় পেয়ে যাবেন মালদার আম। অনলাইনে দেশ জুড়ে মালদার আম পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা শুরু করেছেন এক দম্পতি৷ জেলা উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তর এই দম্পতিকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দিয়েছে। এই দম্পতির সাফল্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছে প্রশাসন। তাকিয়ে আমচাষিরাও।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

মালদা ইংরেজবাজার শহরের বালুচর এলাকার বাসিন্দা প্রসূন চিৎলাঙিয়া ও তাঁর স্ত্রী প্রীতা চিৎলাঙিয়া দীর্ঘদিন ধরেই মালদার আমকে কীভাবে দেশে একটা ব্র্যান্ড হিসাবে তুলে ধরা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন। তখনই তাঁদের মাথায় আসে অনলাইন পরিষেবা কথা৷ কিন্তু আম পচনশীল ফসল।তাই ঝুঁকিও রয়েছে৷ ফলে খুব কম সময়ের মধ্যেই গ্রাহকদের কাছে পৌঁছোতে হবে এই আম৷  এই ভাবনা থেকেই গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে তাঁরা এই পরিষেবা চালু করেন৷ প্রথমে ক্যুরিয়র সার্ভিসের মাধ্যমে কত কম সময়ে জেলার আম দেশের প্রত্যন্ত এলাকাতেও পৌঁছোনো যায়, কোন কোন প্রজাতির আম দেশবাসীর প্লেটে তুলে দেওয়া সুবিধেজনক, এসব নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেন তাঁরা৷ 


এরপর যোগাযোগ করেন লখনউ সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট অফ সাবট্রপিক্যাল হর্টিকালচার এবং মালদা জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের সঙ্গে৷ অবশেষে এই বছর তাঁরা পুরোপুরি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই পরিষেবা দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। www.maldaamritfal.com নামে একটি ওয়েবসাইটও তৈরি করেছেন৷ তাতে ক্লিক করলেই ঘরে বসে পেয়ে যাবেন মালদার আম। প্রসূনবাবু জানান, “গোটা দেশের মানুষ যাতে বাড়িতে বসেই এই জেলার আমের স্বাদ পায়, তার জন্য আমরা একটি ওয়েবসাইট চালু করেছি৷ ওই ওয়েবসাইটের মধ্যেই আমের অর্ডার থেকে শুরু করে পেমেন্ট গেটওয়ে রয়েছে৷ কেউ চাইলে হোয়াটসঅ্যাপেও অর্ডার করতে পারেন৷ আপাতত আমরা হিমসাগর, লক্ষ্মণভোগ ও ল্যাংড়া, এই তিন প্রজাতির আমের অর্ডার নিচ্ছি৷ তার দাম ওয়েবসাইটে দেওয়া রয়েছে৷ তার মধ্যেই ক্যুরিয়র চার্জ ধরা রয়েছে৷ দেশের যে কোনও জায়গায় আমরা পাঁচ থেকে ছ’দিনের মধ্যে আম পৌঁছে দেব৷ আমাদের আমে কোনও রাসায়নিক সার কিংবা বিষ ব্যবহার করা হয় না৷ ফলে দেশের মানুষ পুরোপুরি মালদার অর্গানিক আমের স্বাদ পাবে৷”


প্রসূনবাবু আরও বলেন, “এক সপ্তাহ ধরে আমরা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রচার শুরু করেছি৷ ইতিমধ্যেই গোটা দেশ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া মিলছে৷ তবে এখনও মালদার আম পুরোপুরি পরিপক্ক হয়নি৷ চলতি মাসের শেষ থেকে আমরা দেশ জুড়ে অনলাইনে আম সরবরাহ শুরু করব৷ আমরা প্রতি প্রজাতির আমের জন্য চার কিলোর প্যাকেট তৈরি করেছি৷ তবে যেহেতু আম পচনশীল, তাই আমরা কোনো রিস্ক নিচ্ছি না৷ ক্রেতাদের যাতে কোনও অসুবিধে না হয়, তার জন্য প্রতি প্যাকেটে অতিরিক্ত ৫০০ গ্রাম আম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ এই জেলার আমকে শুধু দেশ নয়, আগামীতে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য৷ এর জন্য সরকারের কাছে একটু সহযোগিতাও আশা করছি৷ ভবিষ্যতে আমরা আম থেকে তৈরি বিভিন্ন তরল, আমসত্ত্ব, জ্যাম, জেলি নিয়েও কাজ করতে চাই৷ আগামীতে আমাজন, বিগ বাস্কেট এবং জিও মার্টের মাধ্যমে এসব দেশ তথা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে৷”


প্রসূনবাবুর উদ্যোগ নিয়ে জেলা উদ্যানপালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সামন্ত লায়েক বলেন, “এবছর মালদার আমের বেশ ভালো উৎপাদন হবে বলে আমাদের আশা রয়েছে৷ গত বছর থেকে মালদার এক যুবককে কেন্দ্র করে আমরা জেলার আমের দেশব্যাপী অনলাইন মার্কেটিং ভবিষ্যৎ দেখতে শুরু করেছি৷ দেশের আমপ্রেমী মানুষ যাতে বাড়িতে বসেই মালদার আমের স্বাদ পান, তার জন্যই এই উদ্যোগ৷ এতে মালদার আমের যেমন প্রসার ঘটবে, তেমনই জেলার অর্থনীতি আরও দৃঢ় হবে৷ ওই যুবক গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে এই পরিষেবা চালু করেছিলেন৷ এবার তিনি ব্যাপক আকারে কাজ শুরু করেছেন৷ এর জন্য আমরা তাঁকে একটি প্রশিক্ষণও দিয়েছি৷ অনলাইন ব্যবসায় আমের প্যাকেজিং, লেভেলিং, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কীভাবে তিনি গ্রাহকদের ঘরে আম পৌঁছে দিতে পারবেন, সেসব শেখানো হয়েছে৷ এখন গোটা বিশ্বেই অনলাইন ব্যবসার রমরমা৷ তাই আমরা এভাবেই জেলার আমকে চারদিকে ছড়িয়ে দিতে চাইছি৷”