নিজস্ব প্রতিবেদন: জলপাইগুড়ি শহর-লাগোয়া ৭৩ মোড় সংলগ্ন অরবিন্দ পঞ্চায়েতের অধীন সেবাগ্রাম এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা সন্তোষ শীল। এলাকায় সুন্দর ছায়া পাবেন বলে বছর ২৫ আগে শখ করে রাস্তার ধারে একটি বট গাছ লাগিয়েছিলেন। নিয়ম করে সেই গাছে জল দিতেন, লালন-পালন করতেন। গাছের পরিচর্যা দেখে এলাকাবাসীরা বলতেন, এটিই তোর মেয়ে! পরে সেই গাছের মধ্যে জন্ম নেয় একটি পাকুড় গাছও। দীর্ঘ ২৫ বছরে সেই গাছ যথেষ্ট বড় হয়েছে। এলাকাবাসীরা সন্তোষকে বলতেন, মেয়ে তো বড় হয়ে গেছে, এবার বিয়ে দিয়ে দাও। তিনি শুনতেন আর ভাবতেন কী করা যায়। একদিন শেষমেশ 'মেয়ের বিয়ে' দিতে রাজিও হয়ে যান সন্তোষ।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সব চেয়ে প্রথমে লাগবে পাত্র পক্ষ। পাত্র পক্ষের ব্যবস্থা কী ভাবে হয়? খবর চাউর হতেই পাত্রপক্ষ হিসেবে রাজি হয়ে যান ঝন্টু ঘোষ। স্থানীয় পুরোহিত মানিক ব্যানার্জীকে ডেকে ৯ জুন বিয়ের দিন ধরা হয়। 


পাত্র নয় হল, কিন্তু বিয়ের খরচও তো প্রচুর! কী হবে? স্থানীয় ক্লাব "ভক্ত সঙ্ঘ" মারফত গ্রামের মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন রাখা হয়েছিল। লোকের মুখে মুখে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এগিয়ে এলেন প্রচুর গ্রামবাসী। অর্থসাহায্য আসতে শুরুও করে। এরপর শুরু হয় বিয়ের বাজার। কেনা হয় টোপর, সিঁদুর-সহ বিয়ের অন্যান্য সামগ্রী। যৌতুক হিসেবে কেনা হয় সোনার দুল ও আংটি।


বিয়ের দিন সকাল থেকে শুরু হয় সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান। হয় হলুদ কোটা। এরপর কোটা হলুদে তেল-সিঁদুর গাছে মাখিয়ে গাছকে স্নান করানোর পরে সকালে পুরোহিত বিয়ের কাজ শুরু করেন। সন্ধ্যা নামতেই আসে বরযাত্রী। আলোকোজ্জ্বল প্যান্ডেলে ব্যান্ড বাজিয়ে তাঁদের বরন করা হয়। পরদিন কন্যাদানের মাধ্যমে শেষ হয় বিয়ে। বিয়ে উপলক্ষে বিশাল ভোজের আয়োজন করা হয়। মেনু ছিল ভাত, ডাল, ভাজা, পটলের ডালনা, পনির কারি, চাটনি, মিষ্টি। এদিন পাত পাড়েন প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষ। ছিল কফিস্টলও।


কনের (বট) বাবা সন্তোষ শীল বলেন বিয়ে উপলক্ষে আমাদের গ্রামবাসীরা গতকাল রাতে গঙ্গা নিমন্ত্রণ করে। সকাল থেকে হলুদ কোটা-সহ বিয়েতে যা যা নিয়ম করতে হয় সব করা হয়। রাতে বরযাত্রী এল। কন্যাদান করলাম। আমি সবার কাছে সাহায্যের আবেদন রেখেছিলাম। সবাই পাশে দাড়িয়েছে। আজ আমার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। কান্নায় আমার চোখ ভেঙে জল আসছে। বটের মা কৃষ্ণা শীল বলেন মেয়ের বিয়ে দিলাম। বিয়েতে সোনা-সহ যাবতীয় জিনিসপত্র দেওয়া হয়েছে। সবাই সাহায্য নিয়ে মেয়েকে পার করলাম। পাত্র পাকুড়ের বাবা ঝন্টু ঘোষ জানান, ছেলের বিয়ে দিলাম। খুব আনন্দ লাগছে। পুরোহিত মানিক ব্যানার্জী বলেন আমি বহু বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু গাছের বিয়ে কোনও দিন দেইনি। খুব ভালো লাগছে।


'সায়েন্স অ্যান্ড নেচার' ক্লাবের সম্পাদক রাজা রাউতের ধারণা বট-পাকুড়ের বিয়ে আসলে পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তা। বট এমন গাছ, যে প্রকৃতিকে সব চেয়ে বেশি অবদান রাখে। দূষণ কমানোর ক্ষমতা এর খুবই বেশি। একটি পূর্ণবয়স্ক বট বিপুল অক্সিজেন দিয়ে থাকে। প্রচুর পাখি বট ফল খেয়ে বেঁচে থাকে। বট গাছে প্রচুর পশু পাখি বসবাস করে। এ ধরনের গাছের সংরক্ষণ জরুরি।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) 


আরও পড়ুন: Jalpaiguri: সবুজ বাঁচিয়ে ঘুঁটে দিয়ে দাহকাজ! ৪০ বছরে ১৬৩৩টি সৎকার