চম্পক দত্ত: অ্যাম্বুল্যান্সে রোগী আনার পর এবার স্ট্রেচারের জন্য হাহাকার। স্টেচার অমিল। বাধ্য হয়েই, রোগীকে কোলে করে কিংবা চ্যাংদোলা করে নিয়ে যেতে হচ্ছে ওয়ার্ডে। কিন্তু এরও সমাধান রয়েছে। টাকা দিলেই মিলছে স্ট্রেচার। রেট কখনও ৫০ টাকা তো কখনওবা ১০০ টাকা। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে এভাবেই চলছে দালাল চক্রের উত্পাত। জি ২৪ ঘণ্টার ক্যামেরায় উঠে এল সেই চিত্র।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। যেখানে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলি ছাড়াও ঝাড়খন্ড থেকেও অনেক রোগীরা চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে থাকেন। এই হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা এখন দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে হয়রানির শেষ সীমায়। যেমনই অসুস্থ রোগী হোক না কেন, পরিবারের দায়িত্ব তাকে এমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া। কোন স্ট্রেচার ছাড়াই অসহায় রোগীর পরিবারের লোকেরা রোগীকে টেনে হিঁচড়ে, কাঁধে কোলে ভর্তি করছেন হাসপাতালে। সব জেনেও মুখ ঘুরিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।


গত কয়েক মাস ধরেই মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রেচার সমস্যা দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ রোগীর লোকজনই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এমার্জেন্সিতে আনলে সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয় স্ট্রেচার নেই। যেকোনোভাবে আপনারাই ওয়ার্ডে নিয়ে যান। প্রায়ই মুমূর্ষু থাকলেও তাকে ওয়ার্ডে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব রোগীর লোকজনের। প্রায়সই চোখে পড়ছে রোগীর পরিবারের লোকজন কাঁধে কোলে পিঠে করে রোগীকে হাসপাতালে ভেতরে ঢোকাচ্ছেন। যারা পারছেন না, তারা বাইরে পড়ে থেকে ছটফট করছেন।


এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে হাসপাতালের এক দালাল চক্র। মুমূর্ষু রোগীর পরিবারের লোকজনের কানের কাছে তারাই জানিয়ে দিচ্ছে ৫০ টাকা দিয়ে দিন স্ট্রেচার পেয়ে যাবেন। তবে নিয়ে যেতে হবে আপনাকেই। বাধ্য হয়ে অনেকেই টাকা দিয়ে সরকারি হাসপাতালের স্ট্রেচার নিয়ে রোগীকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। পরিবারের মহিলা সদস্যরাও টেনে হিঁচড়ে স্টেচারে নিয়ে যাচ্ছে এমন ছবিও নজরে এল। ক্যামেরায় ধরা পরল টাকা নিয়ে স্ট্রেচার দেওয়ার ছবি।


হাসপাতালে আগত রোগীর পরিবারের সদস্য নিরাপদ মাহাতো বলেন, সরকারি এই হাসপাতালের পরিষেবা চরম দুরবস্থা। আমার পরিবারের লোকজনকে ভর্তি করতে টাকা দিয়ে স্ট্রেচার নিতে হয়েছে। রমরমা দালাল চক্র কাজ করছে এখানে।


এই হাসপাতালে চিকিত্সক ও চিকিত্সা কর্মী মিলে রয়েছেন ৫১৬ জন। ৬৫০ টি বেড রয়েছে। বেডের বাইরেও অনেকেই মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে থাকেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন হাজার মানুষ চিকিৎসার জন্য আসেন এখানে। বেশিরভাগ লোকজনেরই দাবি বেহাল চিকিৎসার অবস্থা।


হাসপাতালের ভিতর দেখা গেল ভাঙচুর হয়ে কোনায় পড়ে রয়েছে বহু স্ট্রেচার। সেটা ভেঙে গিয়েছে নাকি পরিকল্পিতভাবে ভেঙে দেওয়া হয়েছে দালাল চক্রের কারণে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। রোগীদের এই হয়রানির কথা পরোক্ষে শিকার করে নিয়েছেন হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার সঞ্জীব গোস্বামী। তিনি বলেন, দালালচক্রের বিষয়ে কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। সমস্যা তো হচ্ছে। বেশ কিছু স্ট্রেচার ভেঙে গিয়েছে তবে কাজ চালানোর মত স্ট্রেচার রয়েছে। বিভিন্ন রোগীরা ওয়ার্ডে ও অন্যান্য জায়গায় স্ট্রেচার নিয়ে গেলে এমার্জেন্সিতে আর ফেরত পাঠাচ্ছে না। যে কারণে এমার্জেন্সির কাছে স্ট্রেচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি আমরা দেখছি।


ইতিপূর্বে এই হাসপাতালে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সি আর্ম মেশিন পরিকল্পিতভাবে খারাপ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠছিল হাসপাতালে একদল কর্মীদের বিরুদ্ধে। মেদিনীপুরে প্রশাসনিক সভায় বিধায়ক দিনেন রায় মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগ করেছিলেন, কেউবা কারা এই মেশিন কে বারবার খারাপ করে দিচ্ছে, যাতে হাড়ের অস্ত্রপাচার হাসপাতালে না হয়ে নার্সিংহোমের আশ্রয় নেয় সকলে। সেই অভিযোগ এর পর অবশ্য সেই ক্ষেত্রে দালালচক্র বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু নতুন দালাল চক্র ফের সক্রিয় হয়েছে স্ট্রেচার নিয়ে। যার কারণে চরম ভোগান্তি রোগীর পরিবারের লোকজনদের।


এই ঘটনা নিয়ে সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি,বিজেপির জেলা সহ সভাপতি অরূপ দাসের বক্তব্য, রাজ্যের সমস্থ সরকারি হাসপাতালে দুর্নীতি ছেয়ে গেছে ।সবকটাই পরিচালিত হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বারা। আমরা পুরো বিষয়টা নিয়ে কলেজের প্রিন্সিপাল, হাসপাতাল সুপার কে জানানোর পরেও তাদের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখতে পাইনি। হাসপাতালে দালাল চক্রের রমরমা বাজার। স্ট্রেচার নিতে গেলে দিতে হয় পয়সা। হাসপাতালের একটি বিভাগ এই অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত। আমি বিশ্বাস করিনা এই বিষয় গুলি ওয়ার্ড মাস্টারের গোচরে নেই। ওয়ার্ড মাস্টার থেকে শুরু করে হাসপাতাল সুপার পুরো বিষয়টি জানেন।এখান থেকেও একটা বড় কমিশন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে যায় বলেও দাবি করেন অরূপ দাস।
 
পাল্টা তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন,বিজেপি কী বলল তাতে কিছু যায় আসেনা। বর্তমান সরকারের আমলে হাসপাতালগুলোর প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। তবে রোগীর আত্মীয় পরিজনেরা স্ট্রেচার ব্যবহার ঠিক মত না জানার জন্য স্ট্রেচারগুলো অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। এই সময় স্ট্রেচার কিছু হয়ত কম রয়েছে। আগামীদিনে সেই সমস্যা থাকবে না,এই বিষয়ে কথা বলবো মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।


আরও পড়ুন-Journalist Murder: সাংবাদিককে খুন করে লুকিয়েছিল এরাজ্যে, চন্দননগরে গ্রেফতার বিহারের ৩ যুবক


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)