নিজস্ব প্রতিবেদন : নিমতা খুনে সামনে এল আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। খুনের পর দুদিন বাড়িতেই ছিল অভিযুক্ত প্রিন্স সিং। কিন্তু তারমধ্যে একবারও প্রিন্স সিংয়ের খোঁজে তাঁদের বাড়িতে আসেনি পুলিস। অর্থাৎ দুদিন বাড়িতে থাকার পরেও অধরা থেকে যায় প্রিন্স সিং। দেবাঞ্জন দাস খুনে প্রথম থেকেই প্রশ্নের মুখে নিমতা থানার পুলিসের ভূমিকা। খুনের পরদিন সকালে অর্থাৎ দশমীর দিন নিহত দেবাঞ্জন দাসের পরিবার এফআইআর দায়ের করতে গেলে, তা নিতে অস্বীকার করেছিল পুলিস। এবার সামনে এল আরও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। অভিযুক্তের দাদা দীপক সিং জি ২৪ ঘণ্টাকে জানিয়েছেন, দ্বাদশীর দিন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে বাড়িতেই ছিল প্রিন্স সিং। সবমিলিয়ে দেবাঞ্জন দাসকে খুনের ঘটনায় পুলিসের ভূমিকা নিয়ে উঠছে আরও প্রশ্ন।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

দীপক সিং জানিয়েছেন, তাঁর ভাই প্রিন্স কলকাতায় পড়াশোনা করে। বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে থাকে। নবমীর পর দ্বাদশী পর্যন্ত বাড়িতেই ছিল সে। তারপর কাউকে কিছু না বলেই সে চলে যায়। সেই থেকে প্রিন্সের ফোন সুইচড অফ। যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাননি। দীপক সিং দাবি করেছেন, খুনের ঘটনার বিন্দুবিসর্গ তাঁরা কিছু জানেন না। সংবাদমাধ্যমেই তাঁরা শুধু দেখছেন। একইসঙ্গে তিনি আরও জানিয়েছেন, যে দুদিন প্রিন্স সিং বাড়িতে ছিল বা তারপরেও তার খোঁজে পুলিস তাঁদের বাড়িতে আসেনি। বাড়ির লোকেদের কোনও জিজ্ঞাসাবাদ করেনি বা কোনওরকম তল্লাশি চালায়নি পুলিস।


আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। ঘটনার পর এতদিন হয়ে গেলেও কেন অভিযুক্তের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গেল না পুলিস? পরিবারের লোকেদেরকে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করল না পুলিস? যে তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে দেবাঞ্জনকে হুমকি দিত প্রিন্স, তার কথা কী দীপক সিংরা জানতেন? সেই তরুণীর সঙ্গে প্রিন্স সিংয়ের ৩ বছরের সম্পর্ক ছিল বলে জানিয়েছেন নিহত দেবাঞ্জনের বাবা অসীম দাস। তাঁর অভিযোগ, মাত্র আড়াই থেকে ৩ মাস আগে দেবাঞ্জনের সঙ্গে আলাপ হয় ওই যুবতীর। আর তারপর থেকেই দেবাঞ্জনকে হুমকি দিত প্রিন্স। প্রসঙ্গত, দেবাঞ্জন দাসকে খুনের ঘটনার তদন্তে প্রথম থেকেই গাফিলতি, সত্যিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে পুলিসের বিরুদ্ধে। শেষমেশ ব্যারাকপুর পুলিস কমিশনার মনোজ ভার্মা নিজে এই তদন্তে হস্তক্ষেপ করেন। গতকাল নিজে নিমতা থানায় এসে নিহত দেবাঞ্জনের গাড়িটি ঘুরে দেখেন তিনি। এরপর সন্ধ্যাতেই নিমতা থানার আইসি শিবু ঘোষের বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।



নবমীর দিন রাতে বান্ধবীকে বাড়িতে নামিয়ে ফেরার পথে মৃত্যু হয় নিমতার দাগা কলোনির বাসিন্দা দেবাঞ্জন দাসের। পুলিস প্রথমে দাবি করে যে, গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দেবাঞ্জনের। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে গাড়ির চেহারা দেখে সন্দেহ হয় নিবত দেবাঞ্জনের পরিবারের। পরদিন সকালে থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে দেবাঞ্জনের বাবার চোখে পড়ে গাড়ির মধ্যে পড়ে থাকা বুলেটের অংশ, গুলির খোল। এরপর গতকাল ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে আসতেই খারিজ হয়ে যায় পুলিসের খাড়া করা দুর্ঘটনার তত্ত্ব। রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয় গুলি করে খুন করা হয়েছে দেবাঞ্জনকে। নিহতের ঘাড়ে ও হাতে বুলেটের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।


আরও পড়ুন, গুলি করেই খুন দেবাঞ্জনকে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ বুলেটের দুটি ক্ষতচিহ্নের কথা


এরপরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দেবাঞ্জনের ওই বান্ধবীকে আটক করে নিমতা থানার পুলিস। রাতভর বান্ধবীকে দফায় দফায় জেরা করে তদন্তকারী আধিকারিকরা জানতে পারেন, সুপারি কিলার নিয়োগ করে খুন করা হয়েছে দেবাঞ্জনকে। খুনের জন্য ২ জন ভাড়াটে খুনিকে নিয়োগ করা হয়েছিল। পাশাপাশি সামনে এসেছে আরও একটি চাঞ্চল্যকর বিষয়। পুলিস যখন দেবাঞ্জনের দেহ উদ্ধার করে তখন গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসা অবস্থায় ছিল সে। গাড়ির তিন দিকের জানলা ছিল বন্ধ। একমাত্র দেবাঞ্জনের সিটের জানালাটি খোলা ছিল।  


আরও পড়ুন, সুপারি কিলার নিয়োগ করেই দেবাঞ্জনকে খুন! নিমতাকাণ্ডের তদন্তে নেমে একপ্রকার নিশ্চিত পুলিস


এদিকে দেবাঞ্জনের দেহ পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ঘাড়ের বাঁদিকে ও হাতের বাঁদিকে গুলির দাগ রয়েছে। এখন আততায়ী বা সুপারি কিলার যদি গাড়ির বাইরে থেকে গুলি চালাত তাহলে সেই গুলি লাগত দেবাঞ্জনের ঘাড় ও হাতের ডান দিকে। তাহলে? এখানেই উঠছে প্রশ্ন। তাহলে কি খুনের সময়ে গাড়ির ভেতরেই ছিল আততায়ী বা সুপারি কিলার? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খতিয়ে দেখা হচ্ছে দেবাঞ্জনের বান্ধবীর মোবাইল লোকেশন ও কল ডিটেলস। ঘটনার সময় ওই তরুণী ঠিক কোথায় ছিলেন, সেটাই খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।