সুকান্ত মুখার্জি : গাড়ির বাইরে থেকেই গুলি করে খুন করা হয়েছে দেবাঞ্জন দাসকে। গাড়ির চালকের আসনের ডানদিকে জানলার কাচ নামিয়েই প্রিন্সের সঙ্গে কথা বলে দেবাঞ্জন। কথা বলার সময় তর্কাতর্কি বাধে। তারপরই দেবাঞ্জনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে প্রিন্স। ফরেন্সিকের প্রাথমিক রিপোর্টে এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে।  


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কোথা থেকে গুলি চালানো হয়েছিল? গাড়ির মধ্যেই ছিল আততায়ী নাকি বাইরে থেকে গুলি চালানো হয়েছিল? নিমতা খুনে এই নিয়ে ধন্দে পড়েছিলেন তদন্তকারী অফিসাররা। যার প্রধান কারণ, দেবাঞ্জনের শরীরে বুলেটের ক্ষতচিহ্নের অবস্থান। একটি গুলি লেগেছিল দেবাঞ্জনের ডান হাতের কবজির উপরে। আরেকটি ক্ষতচিহ্ন পাওয়া যায় গলার বাঁদিকে অংশে। যা ঘিরেই ধোঁয়াশা দেখা যায়। বাইরে থেকে গুলি চালালে কী করে দেবাঞ্জনের ডান হাতে ও গলার বাঁদিকে গুলি লাগল? তবে কী গাড়ির ভিতরই ছিল আততায়ী? বুলেটের ক্ষতচিহ্ন নিয়ে গুলি কোনদিক থেকে আসে তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা যায়। শেষমেশ ফরেন্সিকের প্রাথমিক রিপোর্টে সেই ধোঁয়াশা কাটল। গাড়ির বাইরে থেকেই দেবাঞ্জনকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল প্রিন্স।


রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুটি গুলি চালানো হয়েছিল। ডানদিকের জানলার বাইরে থেকেই দুটি গুলি চালানো হয়। মনে করা হচ্ছে, প্রিন্স সিং গাড়ি আটকানোর পর দেবাঞ্জন গাড়িটি থামায়। চালকের আসনের জানলার কাচ নামিয়ে কথা বলতে শুরু করে। এরপরই তর্কাতর্কি বেধে যায় প্রিন্সের সঙ্গে। সেইসময় প্রিন্সের আচরণে সম্ভবত বিপদের আঁচ করে দেবাঞ্জন। বিপদের আশঙ্কা করে গাড়ি স্টার্ট দেয় দেবাঞ্জন। এদিকে দেবাঞ্জন গাড়ি স্টার্ট দিতেই প্রিন্স আগ্নেয়াস্ত্র বের করে উদ্যত হয়। সম্ভবত তখন আগ্নেয়াস্ত্রটি ঠেকাতে বা গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট করে দেবাঞ্জন তাঁর ডান হাতের অংশ বাইরে বের করে দেয়। সেইসময়ই প্রথম গুলিটি ছোড়ে প্রিন্স। যা দেবাঞ্জনের ডান হাতের কবজির নীচের অংশে লাগে।



সম্ভবত হাতে গুলি লাগতেই কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেবাঞ্জনের মাথা গাড়ির জানলা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। আর ঠিক তখনই দ্বিতীয় গুলিটি ছোড়ে প্রিন্স। সেই গুলিটি-ই একেবারে সোজা দেবাঞ্জনের গলার বাঁদিকের অংশে এসে লাগে। আর তাতেই মৃত্যু হয় দেবাঞ্জনের। এখন গাড়িটি ফার্স্ট গিয়ারে স্টার্ট দেওয়া অবস্থায় ছিল। হন্ডা সিটির ক্ষেত্রে ফার্স্ট গিয়ারে গাড়ির গতি ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত উঠে যায়। গুলিবিদ্ধ দেবাঞ্জনকে নিয়ে সেই অবস্থাতেই গাড়ি গিয়ে দেওয়ালে ধাক্কা মারে। তারপর প্রায় ৭ মিটার ঘষটাতে ঘষটাতে চলে।


আরও পড়ুন, গাড়ির হর্ন বাজানো নিয়ে বচসায় চড়, প্রৌঢ়ের মৃত্যুর ৪ দিন পর থানায় এসে আত্মসমর্পণ অভিযুক্তের


গুলি কোনদিকে চালানো হয়েছিল, ফরেন্সিক রিপোর্টে সেই নিয়ে ধোঁয়াশা কাটার পাশাপাশি সামনে এসেছে আরও একটি তথ্য। গাড়ির ভয়েস ডেটা রেকর্ডার পরীক্ষা করে কথা কাটাকাটির প্রমাণ মিলেছে। একাধিক কণ্ঠস্বরের নমুনা পাওয়া গিয়েছে। এখন কোন কণ্ঠস্বরটি কার? খতিয়ে দেখছে পুলিস। একইসঙ্গে আজ সন্দীপ দাস (নাটা) ও অভিজিৎ মণ্ডল (ভুটু) নামে প্রিন্সের আরও ২ বন্ধুকে আটক করেছে পুলিস। অভিযুক্ত প্রিন্সকে তারা-ই আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করেছিল বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে জেরায় প্রিন্স জানিয়েছে, দেবাঞ্জনের সঙ্গে প্রাক্তন প্রেমিকার সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি সে। সেই আক্রোশেই দেবাঞ্জনকে খুন করে সে।