নিজস্ব প্রতিবেদন: শেষ হল লড়াই। চলে গেলেন শতায়ু বীণাপানি দেবী। দীর্ঘ রোগভোগের পর প্রয়াত মতুয়া সম্প্রদায়ের বড়মা। ধর্মক্ষেত্রে দাবি আদায়ের আন্দোলন, আর সেই আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়েই ঠাকুরবাড়িতে আশ্রয় নেয় রাজনীতি। নাগরিকত্বের দাবিতে কখনও মেট্রো চ্যানেল, কখনও ঠাকুরনগরেই অনশনে বসেছিলেন বীণাপানি দেবী। এই লড়াইয়ের ইতিহাসটা আজকের নয়, স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকেই। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

শেষ হল একটা অধ্যায়। শেষ হল একটা যুগ। মতুয়া সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ে সুদীর্ঘ লড়াই। একইভাবে লড়াইটা বজায় ছিল বয়সের সঙ্গেও, অসুস্থতার সঙ্গেও। তবুও তিনি ছিলেন, এটাই যেন স্বস্তি দিচ্ছিল দেশের পাঁচ কোটি ভক্তকে, বাংলার কয়েক কোটি মতুয়া ধর্মালম্বী মানুষকে। শেষের কটা দিন চলাফেরা, কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে জীবনশিখা নিভল। চলে গেলেন বড়মা


১৯১৯ সালে অবিভক্ত বাংলাদেশের বরিশালের জব্দকাঠি গ্রামে জন্ম বীণাপানি দেবীর। সমাজের নিয়ম মেনেই খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয় ফরিদপুরের ওরাকান্দির প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের সঙ্গে। দেশভাগের পর ইছামতী পেরিয়ে স্বামীর সঙ্গে অশোকনগরের ঠাকুরনগরে চলে আসেন। শুরু হয় নতুন অধ্যায়। বীণাপানি দেবী যখন অশোকনগরে এলেন, তার আগেই ওপার বাংলায় পথ চলা শুরু করে মতুয়া সম্প্রদায়। ফরিদপুরের কৃষক পরিবারের সন্তান হরিচাঁদ ঠাকুর প্রবর্তন করেছিলেন বৈষ্ণব ধর্মের নতুন এই শাখা। হরিচাঁদের ছেলে গুরুচাঁদ তৈরি করেন মতুয়া সংগঠন। আর সেই সংগঠনকেই বিস্তার করেছিলেন বীণাপানি দেবী ও তাঁর স্বামী প্রমথরঞ্জন। 



দেশভাগের পর ঠাকুরনগরই হয়ে ওঠে মতুয়াদের নতুন ধর্মক্ষেত্র, নতুন ঠিকানা। অধিকার আদায়, নাগরিকত্ব আদায়। ধর্মক্ষেত্রে দাবি আদায়, স্বাভাবিকভাবেই ঠাকুরবাড়িতে প্রবেশ করে রাজনীতি। যদিও রাজনীতির ইতিহাসটা অনেক আগের। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ  ১৯৪৬ প্রমথরঞ্জন ঠাকুর গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত। ১৯৫২ কংগ্রেসের সাংসদ নির্বাচিত হন প্রমথরঞ্জন ঠাকুর। হাঁসখালির বিধায়কও হন। 


আরও পড়ুন- প্রকৃত সত্য জানতে চাই, সমালোচনা করলেই বলছে দেশদ্রোহী, পাকিস্তানি: মমতা


স্বামীর মৃত্যুর পর মতুয়া সম্প্রদায়ের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বীণাপানি দেবী। মতুয়া সম্প্রদায়ের অধিকাংশরই নাগরিকত্ব নেই। দাবি আদায়ে অনশনেও বসেন বড়মা। বাম আমলে মেট্রো চ্যানেলের সেই আন্দোলনে আশ্বাস মিলেছিল বটে, তবে তা পূরণ হয়নি। তারপর থেকে প্রতি ভোটে, বারবার ঠাকুরবাড়ির উঠোনে পা রেখেছে রাজনীতি। ভোট মিটতেই ফের হারিয়েছে ভোটপাখিরা। কিন্তু কেউই মতুয়াদের উপেক্ষা করার সাহস দেখাতে পারেনি। হবে নাই বা কেন, রাজ্যের ২৯৪ বিধানসভা আসনের মধ্যে  প্রায় ৬০টি আসনে ফ্যাক্টর মতুয়ারাই। বাংলার ৪২ লোকসভা আসনের প্রায় ৬ থেকে ৭ আসনেও ফ্যাক্টর । রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ঠাকুরবাড়ির আরও কাছে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। বারবার ছুটে গিয়েছেন বড়মাকে দেখতে। যা বজায় ছিল শেষ দিন পর্যন্ত। বড়মার আশীর্বাদ নিতে ঠাকুরবাড়ি  ছুটে গেছেন খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রীও। আবার এই রাজনীতির কারণেই ফাটল ধরেছে ঠাকুরবাড়ির অন্দরেও। তবুও অটল ছিলেন বড়মা। শেষ হল সেই লড়াই। শেষ হল একটা যুগ। 


আরও পড়ুন- অভিভাবকের মতো ছিলেন, আমায় সমর্থন করতেন, বড়মার প্রয়াণে প্রতিক্রিয়া মমতার