নিজস্ব প্রতিবেদন: করোনাভাইরাসের জন্য গোটা বিশ্বে চলছে লকডাউন। ব্যতিক্রম নয় ভারতও। দেড় মাসের বেশি লকডাউন। আর তাতেই ঘটেছে  ছন্দপতন। স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু লকডাউনে আলাদা কোন অনুভূতি নেই নদিয়ার দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝোরপাড়া গ্রামের ৭৫ পরিবারের।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এই গ্রামটি অবস্থিত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের  জিরো পয়েন্টে। একদিকে ইচ্ছামতী  নদী অন্য দিকে তারকাঁটার বেড়া। নদীর ওপারে বাংলাদেশ। আর তারকাঁটার এ পারে ভারত। ১৯৫৫ সাল থেকে এই মাটি আঁকড়ে এনারা এখানে রয়েছেন।  সীমানাভাগের সময় জমি ভিটে ছেড়ে যেতে রাজি হননি তাঁরা। যার ফলে এই পঁচাত্তরটি পরিবারকে বাদ দিয়েই তারকাঁটার বেড়া  দেওয়া হয়। মোতায়েন করা সীমান্তরক্ষী বাহিনী। যার ফলে সাড়ে তিনশো মানুষের স্থায়ী ঠিকানা হয়ে যায় ভারত-বাংলাদেশের  জিরো পয়েন্টে। তাই স্বাধীন ভারতের নাগরিক হয়েও ধীমান, সাগর চপলাদেবীরা আজও  ‘পরাধীন’।


একদিকে বাংলাদেশী দুষ্কৃতীদের অত্যাচার অন্যদিকে বিএসএফের ভারী বুটের আওয়াজ , সেই  ফাঁক গলে কোনমতেই বাইরে যাওয়ার উপায় নেই এই সমস্ত পরিবারগুলোর ।  তাই এখানকার প্রতিটি মানুষের কাছে ৩৬৫ দিনই লকডাউন। নববর্ষ থেকে বর্ষবিদায় কিংবা দুর্গাপুজো থেকে ইদ কোনও আনন্দ  এদের স্পর্শ করে না। কয়েক দশক ধরে এই চিরাচরিত লকডাউনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন নদিয়া জেলার দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝোরপাড়া গ্রামের মানুষ। কিন্তু গত দেড়মাস ধরে এক অজানা অচেনা লকডাউন নামক নির্দেশ  এই পঁচাত্তরটি পরিবারকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। খাদ্যসামগ্রীর  চরম সংকট। কেউ অসুস্থ হলে পাওয়া যাচ্ছে না চিকিৎসা। সব মিলিয়ে বেঁচে থাকার জীবনযুদ্ধে ঝোরপাড়া গ্রামের সাড়ে তিনশো মানুষ দিনরাত  লড়াই করে চলেছেন ।



বছরের অন্যসময় প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঝোরপড়া গ্রামের মানুষ প্রয়োজন হলে বিএসএফ-র  কাছে তাদের ভারতের নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র দেখিয়ে তারকাঁটা পেড়িয়ে ভারতে ঢুকতে পারত। কিন্তু আজ দেড়মাস লকডাউনের জন্য এই রাস্তা একদম বন্ধ হয়ে গেছে । কয়েক দশক ধরে ৩৬৫ দিন বন্দিদশায় এদের জীবন কাটলেও দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে পারতেন এরা। কিন্তু লকডাউনের  বন্দিদশায় ঝোরপড়া গ্রামের মানুষের সামনে শুধুই অন্ধকার। এই গ্রামের বাসিন্দা ধীমান,  সাগর ও চপলাদেবীদের বক্তব্য,  আমরা দুই পুরুষ ধরে সারা বছর লকডাউনের মধ্যেই বড় হয়েছি। আমাদের হাজারো সমস্যা। ছোটবড় কোন জিনিসের প্রয়োজন হলে BSF -র অনুমতি নিয়ে বাইরে যেতে পারতাম। কিন্তু  হঠাৎ একদিন বাইরে যাব বলে গেছি , তখন সীমান্তরক্ষীরা বলল যাওয়া যাবে না। করোনা ভাইরাসের জন্য দেশজুড়ে লকডাউন। যে যেখানে আছে সেখানেই থাকবে। বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। আমরা তো কিছুই জানতাম না । খবরও পাইনি। তাই এখানকার সবাই পরিবার নিয়ে না খেতে পেয়ে মৃত্যু পথযাত্রী । আমরা এখানে থাকি বলে সরকার আমাদের সেইভাবে কোনও খোঁজখবর রাখে না । কিন্তু আমাদের ভোটার কার্ড এবং আধার কার্ড সব আছে। ভোটও দেই। তবুও আমরা সব সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত । জানি না এই পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে কি করে বাঁচব। "



BSF-র কাছে নির্দেশ লকডাউনের  মধ্যে  এখান থেকে কাউকে আপাতত তারকাঁটার ওপারে যেতে দেওয়া যাবে না । তাই   BSF -র কড়া অনুশাসনে জিরো পয়েন্টে থেকেও এদেরও বাড়ির বাইরে যাওয়া বারণ। এই পরিস্থিতিতে এদের কষ্ট অনুভব করে সাড়ে তিনশো মানুষের হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দিয়েছেন রানাঘাট উত্তর পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক সমীর পোদ্দার। তার বিধানসভা কেন্দ্রের এই ঝোরপাড়া গ্রামটি । BSF-কে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের প্রতিটা ঘরে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন তিনি । সমীর  পোদ্দার জানান, "নিয়মের বেড়াজালে পড়ে সারা বছর এরা পরাধীন । লকডাউনে আরও সমস্যার মধ্যে এরা পড়েছেন । খাদ্যসামগ্রী আর ওষুধপত্র পৌছে দিয়েছি । চেষ্টা করছি যাতে রেশনের চাল এদের কাছে পৌছে দেওয়া যায়।" খাদ্যসামগ্রী পেয়ে জীবনযুদ্ধে লড়াই করার রসদ পেয়ে খুশি নদীয়া জেলার দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝোরপাড়া গ্রামের ঝোরপাড়া গ্রামের সাড়ে তিনশো মানুষ ।


তথ্য সংগ্রহে---  বিশ্বজিত মিত্র