kalipuja 2023: বলির সময়ে রক্তপ্রিয় মা কালীকে কেন কোমরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়, জানেন?
kalipuja in Kalna: প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে অরণ্যে ভরা কালনার ধাত্রীগ্রামে ডাকাতরা মোষ বলি দিয়ে কালীপুজো করে তবে ডাকাতি করতে বেরত। সেসব তো বহুকালই অতীত। কালনার সেই ডাকাতে কালী এখন ধাত্রীগ্রামের `চ্যাটার্জী বাড়ির বুড়ো মা` বলেই পরিচিত।
সঞ্জয় রাজবংশী: প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে অরণ্যে ভরা কালনার ধাত্রীগ্রামে ডাকাতরা মোষ বলি দিয়ে কালীপুজো করে তবে ডাকাতি করতে বেরত। সেসব তো বহুকালই অতীত। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন সেসব জায়গায় আর নেই অরণ্যের ছায়াটুকুও। বেড়েছে জনবসতি। অনেকদিনই আর ডাকাতে কালী সেই অর্থে 'ডাকাতে-কালী' নেই। ডাকাতই তো নেই! এখন তাই সেই ঘোর জঙ্গলের ভয়াল ডাকাতেপুজো বাড়ির পুজোর আকার নিয়েছে।
আরও পড়ুন: kalipuja 2023: ৩০০ বছরের পুরনো কালীমূর্তির কাঠ উঠল পুকুর থেকে! অলৌকিক আদেশ পেলেন জমিদার...
কালনার সেই ডাকাতে কালী, এখন ধাত্রীগ্রামের 'চ্যাটার্জী বাড়ির বুড়ো মা' বলেই পরিচিত হয়ে উঠেছেন। ঠিক কত বছর আগে থেকে তিনি এখানে এই নামে পরিচিত হয়ে উঠেছেন, তা অবশ্য এখন আর কারওর মনে পড়ে না। কথিত আছে, প্রায় তিনশো বছর আগে ডাকাত সর্দাররা মা কালীর পুজো করে ডাকাতির উদ্দেশ্যে বেরতেন। পরে পরে এই গভীর অরণ্য কেটে সেখানে গড়ে ওঠে বসত, গড়ে ওঠে গ্রাম। ক্রমে এই এলাকা ধাত্রীগ্রামের ব্রাহ্মণপাড়া নামে চিহ্নিত হয়। তবে বসতি গড়ে উঠলেও এলাকায় তখনও গভীর জঙ্গল কিছু ছিল। সেই জঙ্গল থেকেই বর্তমান পূজক-পরিবারের পূর্বপুরুষ ত্রিলোচন চট্টোপাধ্যায় এই প্রতিমাকে পেয়েছিলেন। শুরু করেন আরাধনা। তার পর থেকে একই ভাবে এই চ্যাটার্জি পরিবার মায়ের আরাধনা করে আসছেন। ক্রমে ডাকাতের কালী হয়ে গেলেন ঘরের কালী। চ্যাটার্জী বাড়ির বুড়ো মা! তবে যে-নামেই ডাকা হোক না কেন, এই মা'কে, তাঁকে খুব জাগ্রত বলেই বিশ্বাস করেন তাঁর অগণিত ভক্তকুল। এবং এই পুজোকে ঘিরে একযোগে আনন্দে মেতে ওঠেন গ্রামের সমস্ত মানুষ।
পুজোয় মাকে বিশেষ অন্নভোগ দেওয়া হয়। দেওয়া হয় পাঁচ রকমের মাছ, পাঁচ রকমের তরকারি, পাঁচরকম ভাজা। দেবীর নিজস্ব রয়েছে পুকুর, সেখান থেকে মাছ ধরেই দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয়। পূর্বে মোষ বলির প্রচলন থাকলেও এখন তা বন্ধ হয়েছে। এখন পাঁঠা বলি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: Kalipuja 2023: ইসমাইলের শ্যামা! মুসলিম শিল্পীর হাতেই নয়ন মেলেন হিন্দুর দেবী...
তবে এই বলির সঙ্গে জড়িত এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর অত্যাশ্চর্য অলৌকিক ব্যাপার। বলা হয়, বলির সময় খুবই চঞ্চলা হয়ে পড়েন মা কালী। এতই যে, বলির সময়ে যাতে দোদুল্যমান হয়ে তিনি পড়ে না যান এবং তাঁর যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য তাঁর কোমরে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় তাঁকে! বেঁধে রাখার সেই রীতি আজও রয়েছে। 'চ্যাটার্জী বাড়ির বুড়ো মা'র এটিই সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক ব্যাপার।