Purba Bardhaman: দাম ৫০০ থেকে ৫০০০, পাঞ্জাবি-টোপর পড়ে ভ্যানে করে বর ফেরি!
দীর্ঘদিনের পুরনো এই রীতি মেনেই বুড়ো শিবের গাজন হয়ে আসছে। প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো বুড়ো শিবের গাজন। বর ফেরি অন্যতম আকর্ষণ।
অরূপ লাহা: বর ফেরি! গ্রামাঞ্চল বা শহরে বিভিন্ন সামগ্রী ফেরি করা হয়। কেউ মাথায় করে, কেউ আবার ভ্যানে করে, আবার কেউ টোটো করে ফেরি করে। কিন্তু তাই বলে বর ফেরি? তাও আবার ভ্যানে চাপিয়ে! নিশ্চয় অবাক লাগছে? অবাক হওয়ার-ই কথা। তবে ঘটনাটি একশো শতাংশ সত্যি। রীতিমতো মাইকিং করে ভ্যানে করে ঘুরে ঘুরে বর ফেরি করা হচ্ছে। বিভিন্ন বরের বিভিন্ন দাম। যার যেমন সামর্থ্য সে তেমন বর নিতে পারে। পাজামা পাঞ্জাবি পরে মাথায় টোপর মাথায় দিয়ে বাবাজীবনরা বসে আছে ভ্যানে। আর ফেরিওয়ালা খদ্দেরকে মাইকিং করে ডাকছে। আর গ্রামের বাসিন্দারাও দরদাম করে বর কিনছেন।
পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের বোসপাড়া সংলগ্ন এলাকায় বুড়ো শিবের গাজনকে ঘিরে প্রতিবছরই এইসব রঙ্গ তামাশা হয়। তিন দিনের গাজনকে ঘিরে গোটা গ্রামে চরম উন্মাদনাও থাকে। গাজনের অন্যতম পুরোহিত রাজেশ ভট্টাচার্য জানান,খণ্ডঘোষের রায়পাড়া, ভট্টাচার্য পাড়া ও বোসপাড়া মোট তিনটি পাড়া মিলিয়ে বুড়ো শিবের গাজন হয়। তিন দিনের এই গাজনে পুরোহিত উমাপদ ভট্টাচার্য জানান, দীর্ঘদিনের পুরানো রীতি মেনেই গাজন হয়ে আসছে । গাজনে এলাকার ১০০ থেকে ১৫০ জন সন্ন্যাসগ্রহণের পর বুড়ো শিবের পুজোপাটে অংশ নেয়। আর বুড়ো শিবের গাজনকে ঘিরে সন্ন্যাসরা বিভিন্ন সং সাজার মাধ্যমে বিভিন্ন চরিত্র ও কাহিনী তুলে ধরেন । সেখানে যেমন থাকে বর্তমান বিষয়, তেমনই প্রাধান্য পায় পৌরাণিক কাহিনী ।
এবার বুড়ো শিবের গাজনে জামাই ফেরি নিয়ে বেশ হৈচৈ পড়ে যায়। জামাই ফেরি বলে কথা! একেবারে হাতে গরম বর! কেউ কেউ একটু ঠাট্টা করে বলেন, দুয়ারে বর! তা যে যাই বলুন। তাতে কী আসে যায়। ফেরি করা হয় ৫০০ থেকে ৫০০০ মূল্যের জামাই বা বর। তবে ৫০০ টাকার জামাইয়ে কোনও গ্যারান্টি নেই বলে জানান হয় ফেরিওয়ালাদের পক্ষ থেকে । আর গ্রামবাসীরাও বেশ মজা করে দরদাম করছে সেটাও দেখা গেল । এ এক অভিনব ঘটনা। এমন ফেরি কিন্তু আগে আর কোথাও কখনো দেখা যায়নি। শোভাযাত্রা করে ফেরিওয়ালা গ্রাম ঘুরে শিবমন্দিরে পৌঁছায়।
পুরোহিত উমাপদ ভট্টাচার্য বলেন, দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষজন বুড়ো শিবের গাজনে ভিড় করেন। দীর্ঘদিনের পুরনো এই রীতি মেনেই বুড়ো শিবের গাজন হয়ে আসছে। তিনি বলেন প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো বুড়ো শিবের গাজন। তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য এবার গাজনের তারিখ একটু পিছিয়ে দিতে হয়েছে। খণ্ডঘোষ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম বলেন, এই বুড়ো শিবের গাজন মানে গোটা এলাকার মানুষজন আসবে, উৎসবে মাতবে এটাই দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে।আর বর ফেরি নিয়ে তিনি বলেন, মানুষ উৎসবে আনন্দ পায়, মজাও লাগে। বর ফেরি অন্যতম আকর্ষণ। তাই সবাই তাড়িয়ে তাড়িয়ে গাজন উপভোগ করেন।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)