Raju Jha Murder: ঝাড়খণ্ড থেকে সুপারি কিলারদের আনতে গিয়েছিল সেই নীল গাড়ি, পুলিসের হাতে সিসিটিভি ফুটেজ
Raju Jha Murder:প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী ওই দিন শক্তিগড়ে ল্যাংচার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভয়ানক কাণ্ড ঘটে যায়। নীল রঙের গাড়িটি থেকে কয়েকজন নেমেই একেবারে শার্প শুটারের কায়দায় দাঁড়িয়ে থাকা ওই ফরচুনা গাড়ির আরোহীদের লক্ষ্য করে পরপর গুলি চালায়
অরূপ লাহা: তিন দিন অতিক্রান্ত। এখনও রাজু ঝা খুনের রহস্য ভেদ করতে পারেনি পুলিস। তবে নিখুঁত পরিকল্পনা করেই যে “ইডির“ ডাক পাওয়া রাজ্যের খনি অঞ্চলের বেতাজ বাদশাকে যে খুন করা হয়েছে সে ব্যাপারে অন্তত আর কোন দ্বিমত নেই পুলিস কর্তাদের। এই খুনে যে ঝাড়খণ্ডের সুপারি কিলাররা যুক্ত ছিল সেটা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কী কারণে রাজু ঝা কে খুন হতে হল? কেনইবা রাজু খুন হওয়ার পরেই গরু পাচার মামলায় ফেরার অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ ঘটনাস্থল থেকে গা ঢাকা দিল ? তা নিয়ে রহস্য রয়েই গিয়েছে।
আরও পড়ুন-ছাড়া পেয়ে বাইডেনকে তুলোধনা ট্রাম্পের, কী বললেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট?
কয়লা পাচার মামলায় রাজু ঝা-র ইডি দফতরে হাজিরা দেওয়ার দিন ছিল গত সোমবার। তার ঠিক একদিন আগে অর্থাৎ গত শনিবার রাত ৮টা নাগাদ শক্তিগড়ে কলকাতামুখি ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি ল্যাংচার দোকানের সামনে দাঁড়ায় সাদা রঙের একটি ফরচুনা গাড়ি। ওই গাড়ির চালকের বাম পাশের আসনে বসে ছিলেন কয়লা করবারী রাজু ঝা। গাড়ির পিছনের আসনে বসে ছিলেন রাজু ঝার সহযোগী ব্রতীন মুখোপাধ্যায় ও সিবিআইয়ের তদন্তাধীন গরু পাচার মামলায় ফেরার অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ। ওই ফরচুনা গাড়ির পিছন পিছন নীল রঙের একটি চারচাকা গাড়ি এসে দাঁড়ায়। তারপরই সাদা গাড়িটিকে ঘিরে ধরে গুলি চালায় নীল গাড়ি থেকে নামা আততায়ীরা।
তদন্তকারী সিটের সদস্যদের কাছে এখন তদন্তের যাবতীয় কেন্দ্র বিন্দুতে আততায়ীদের ব্যবহার করা ওই নীল গাড়িটি। ওই গাড়িতে চেপে ঝাড়খণ্ডের সুপারি কিলাররা শক্তিগড়ে এসে খুনের ঘটনা ঘটিয়ে যে পালিয়েছে তা ধরে নিয়ে তদন্তকারী পুলিসের একটি দল এখন পড়শি রাজ্য চষে বেড়াচ্ছে। সূত্রের খবর,“ঝড়খণ্ডের বিভিন্ন জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা একপ্রকার নিশ্চিৎ যে ঘটনার দিন অর্থাৎ ১ এপ্রিল খুব ভোরে ওই নীল চারচাকা গাড়িটি ঝাড়খণ্ডে যায়। তারপর ওই দিনই দুপুর দুপুর ঝাড়খণ্ডের কোন ডেরা থেকে সুপারি কিলারদের চাপিয়ে নিয়ে একই নীল চারচাকা গাড়ি শক্তিগড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ঝাড়খণ্ড যাওয়া ও ফিরে আসার সময়ে নীল গাড়িটিতে যে নম্বর প্লেট লাগান ছিল সেই একই নম্বারের (WB 06P 3454)নীল চারচাকা গাড়ির হদিস শক্তিগড় থানার কাছে পায় পুলিস। এইসবের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তকারী পুলিস কর্তারা একপ্রকার নিশ্চিৎ যে রাজু ঝা-কে খুনে ঝাড়খণ্ডের সুপারি কিলারদের কাজে লাগানো হয়েছিল”। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ দল এদিনও আরো একবার ওই গাড়ি ও ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায় । ঘটনার দিন ভোর ৩ টে ৫৬ মিনিটে গাড়ি ঢুকছে ঝাড়খণ্ডে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী ওই দিন শক্তিগড়ে ল্যাংচার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভয়ানক কাণ্ড ঘটে যায়। নীল রঙের গাড়িটি থেকে কয়েকজন নেমেই একেবারে শার্প শুটারের কায়দায় দাঁড়িয়ে থাকা ওই ফরচুনা গাড়ির আরোহীদের লক্ষ্য করে পরপর গুলি চালায়। গুলি চালিয়েই নীল রঙের গাড়িতে চেপেই দুষ্কৃতীরা দ্রুত কলকাতামুখি রোড ধরে পালিয়ে যায়। গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায় রাজু ঝার শরীর। পিছনের আসনে বসে থাকা রাজুর সহযোগী ব্রতীন মুখোপাধ্যায়ের বাম হাতে গুলি লাগে। কিন্তু আশ্চর্য জনক ভাবে আব্দুল লতিফ ও তাঁর গাড়ির চালক নুরকে দুস্কৃতিদের ছোঁড়া একটিও গুলি স্পর্শ করে না। আর এই ঘটনার দিন রাজু ঝার সঙ্গে একই গাড়িতে যে আব্দুল লতিফও ছিল সেটা ১ এপ্রিল শক্তিগড় থানায় দায়ের করা অভিযোগে লতিফের গাড়ির চালক নূর স্পষ্ট করে দিয়েছে।
ঘটনার পর গুলিবিদ্ধ দু’জনকে উদ্ধার করে অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা রাজু ঝা কে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ব্রতীন মুখোপাধ্যায়ের বাম হাতে অস্ত্রোপচার হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । সোমবার তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান । ওই দিনই ব্রতীন
ও লতিফের গাড়ির চালক নূর কে পুলিস টানা জিজ্ঞাসাবাদ চালায় ।কিন্তু তার পর থেকে ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও খুনিদের একজনেরও নাগাল পুলিশ পায় নি।আততায়ীদের ব্যবহৃত নীল গাড়িটি ও গাড়িটি থেকে আগ্নেআস্ত্র ,কার্তুজ,একাধিক নম্বর প্লেট এইসব পুলিশ পেলেও আব্দুল লতিফ বেপাত্তা। এই খুনের ঘটনার তদন্তে খুব শীঘ্র “ব্রেক থ্রু “ পাওয়া যাবে বলে সোমবার জেলা পুলিল সুপার কামনাশীষ সেন আশা প্রকাশ করলেও মঙ্গলবার সারাটা দিন তার কিছুই হয় নি।