Royal Bengal Tiger: একদিকে ভয়, অন্য দিকে হঠাৎ-বাঘ-দেখতে-পাওয়ার রোমাঞ্চ! কেমন আছে ঝাড়গ্রাম-বেলপাহাড়ির পর্যটন?
Royal Bengal Tiger on Bengal-Jharkhand: ১৫ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারী টাইগার রিজার্ভ থেকে বাঘটিকে সিমিলিপালে আনা হয়েছিল। জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়ার আগে তার গলায় রেডিও কলার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে সেটি সিমলিপাল থেকে কোনও ভাবে বেরিয়ে পড়ে।
সৌরভ চৌধুরী: ভরা মরসুমে বাঘের জেরে কিছুটা ব্যাহত ঝাড়গ্রাম-বেলপাহাড়ির পর্যটন। বাঘের উদয় সংক্রান্ত বন দফতরের সতর্কবার্তার জেরে অনেকেই এ অঞ্চলে কাটছাঁট করছেন তাঁদের ট্যুর। অনেকেই আবার বেলপাহাড়ি ছেড়ে ঝাড়গ্রামে চলে আসছেন। কেন আসছেন? অনেকে আবার বাঘ দেখতে পাওয়ার আশায় রীতিমতো রোমাঞ্চিত।
আরও পড়ুন: Bangladesh: 'সাংবাদিকদের জন্য খুবই বিপজ্জনক ইউনূসের বাংলাদেশ'! এবার সতর্ক করল খোদ আন্তর্জাতিক...
বাঘমামাকে ঘিরে দুই রাজ্যে তীব্র উৎকন্ঠা, উদ্দীপনা। শোনা যাচ্ছে, বেলপাহাড়ি থেকে মাত্র ১২ কিমি দূরে অবস্থান বাঘমামার। বেলপাহাড়িতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের মধ্যে একদিকে ভয়, অন্য দিকে হঠাৎ বাঘকে সামনে থেকে দেখতে পাওয়ার রোমাঞ্চ। এদিকে বাঘের লোকেশন ট্র্যাক করে তাকে ঘরে ফেরাতে নাজেহাল ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ড বন দফতর। সঙ্গে উৎসাহী জনতাকে সামলাতে হিমসিম অবস্থা। শেষে ১৬৩ ধারা জারি করে এলাকা খালি করতে হয়েছে।
গতকাল, বুধবার বাঘটিকে ট্রাঙ্কুইলাইজ করার অনুমতি পাওয়ার পরই ৮০ জনের এক বিশেষ টিম তৈরি করা হয়েছে। আনা হয়েছে ৩টি মোষ। সারা দিন চাকুলিয়ার গোরামচাটি, ভালুলবিধাঁ, কাঠিয়াবেরা এলাকায় ঘোরাফেরা করলেও লাভ হয়নি। শেষে রাত ৮টা নাগাদ চিঁয়াবাধির জঙ্গলে ট্র্যাক করে তাকে দেখতে পান বন দফতরের কর্মীরা। তবে ধরা সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে বেলপাহাড়ির সীমান্ত-লাগোয়া গ্রাম জড়মা থেকে বেশ কিছুটা দূরে রয়েছে এটি। তবে বেলপাহাড়িতে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা বাঘের কথা শুনে একদিকে যেমন আতঙ্কিত, অন্য দিকে তেমনই রোমাঞ্চিত। তারা এটা ভাবতেই পারছেন যে, ঘুরতে এসে বাঘের সামনে পড়লে কী করণীয়। তবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত ঝাড়গ্রাম বন দফতর এবং জেলা পুলিস।
গতকালই জানা গিয়েছিল ফের বাঘের আতঙ্ক ঝাড়গ্রাম জেলা জুড়ে। কয়েকদিন ধরে ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের গতিবিধি নজরে আসে। তার আক্রমণে বেশ কিছু গবাদি পশুর মৃত্যু এবং আহত হওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়। ঝাড়খণ্ড সীমান্ত-লাগোয়া হওয়ায় ঝাড়গ্রামেও বাঘের আতঙ্ক ছড়ায়। এ বিষয়ে ঝাড়গ্রাম বন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ঝাড়খণ্ডে তিন বছর বয়সী বাঘিনী (রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার)-র অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে নেন। ঝাড়গ্রামের ডিএফও বলেন, বাঘটি বর্তমানে বেলপাহাড়ি সীমান্ত-লাগোয়া চাকুলিয়া এলাকায় আছে। জামবনি এবং বেলপাহাড়ি-- এই দুটি ব্লকের সীমান্ত এলাকায় জঙ্গলে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
বন দফতরের তরফে জানানো হয়েছে--- তিন বছর বয়সী এই বাঘিনীর নাম 'জিনাত'। এটিকে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার সিমলিপাল টাইগার রিজার্ভ (এসটিআর) ফরেস্টে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই 'জিনাত'ই এখন ঝাড়খণ্ডে প্রবেশ করেছে। আদতে মহারাষ্ট্র থেকে ১৫ নভেম্বর আনা হয়েছিল বাঘটিকে। ২৪ নভেম্বর তাকে সিমলিপালের জঙ্গলে ছাড়া হয়। সেই বাঘটি পরে সিমলিপাল থেকে পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ডে প্রবেশ করে। জিনাত রবিবার ঝাড়খণ্ডের একটি জঙ্গলে প্রবেশ করেছে বলে জানা গিয়েছে। সিমলিপালের তরফে প্রকাশচাঁদ গোগিনেনি বলেছেন, বাঘটি সুস্থ আছে, বর্তমানে এটি ঝাড়খণ্ডে রয়েছে। জিনাতকে মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারী টাইগার রিজার্ভ থেকে এনে সিমলিপালের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়ার আগে তার গতিবিধির উপর নজরদারির জন্য সিমলিপাল বন দফতরের একটি বিশেষ দল এর গলায় রেডিও কলার পরিয়ে দিয়েছিল। আতঙ্ক ছড়াতেই এলাকায় বাঘের খাঁচা, টোপ-- সব কিছু নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। গতকালই ঠিক করা হয়েছিল, প্রয়োজনে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুঁড়ে ঘুম পাড়িয়ে তাকে ফেরানো হবে সিমলিপালে। তবে তার আগে ঝাড়গ্রামের বন আধিকারিকেরা গোটা বিষয়টির উপর নজর রাখছেন। তবে তার আগে সাধারণ মানুষ যাতে অযথা আতঙ্কিত হয়ে না পড়েন, সেজন্য সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষদের মাইকিং করে সাবধানে থাকার কথা বলা হয়েছে। গতবারে লালগড়ের মতো বাঘের মৃত্যুর ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।