নিজস্ব প্রতিবেদন:পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গা থেকে গত দু'সপ্তাহে তিনটি কুমির ছানা উদ্ধার হয়েছে। এগুলি মূলত সল্ট ওয়াটর ক্রোকোডাইল। এগুলির এ অঞ্চলে থাকার কথা নয়। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

তা হলে কী করে এল? সেটা নিয়ে পরিবেশবিদদের পরিসরে চর্চা চলছে। গবেষণা চলছে। অনুসন্ধানও চলছে। এই ধরনের নোনাজলের কুমির সাধারণত সুন্দরবনেই পাওয়া যায়। এরা কী ভাবে এখানে এল, সেটা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বন দফতরের আধিকারিকেরা বলছেন, গত কয়েকদশক ধরে পূর্ব মেদিনীপুরের কিছু নদীর চরে ম্যানগ্রোভ রোপণ করা হয়েছে। তাঁদের অনুমান, এই ম্যানগ্রোভই এ অঞ্চলে কুমিরের নতুন বাসস্থান তৈরি করে দিচ্ছে। এবং সেখানে এসেই কুমিরেরা ডিম পাড়ছে। 



তিনটির মধ্যে প্রথম কুমির ছানাটি ধরা পড়ে ১২ সেপ্টেম্বর। ১৩ ইঞ্চি লম্বা এই ছানাটি মেলে বাজকুল রেঞ্জের নিজকসবা বিটের হুগলি নদীর খাঁড়িতে। এখানে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল থেকেই স্থানীয় মৎস্যজীবীরা এটিকে উদ্ধার করেন। এর পরে দ্বিতীয় ছানাটি উদ্ধার হয় ২৪ সেপ্টেম্বর। এটিও লম্বায় ১৩ ইঞ্চি। এই কুমিরছানাটি পাওয়া যায় ওই নিজকসবা বিটেরই পাঞ্চুরিয়া অঞ্চল থেকে। এটিকেও উদ্ধার করেন মৎস্যজীবীরাই। আগের জায়গা থেকে ১ কিলোমিটার দূরে এটিকে পাওয়া যায়। তৃতীয় কুমিরছানাটি ধরা পড়ে আজ। এটি ১৪ ইঞ্চি দীর্ঘ। এটি এগরা রেঞ্জের পটাশপুরের বাগুই নদী থেকে উদ্ধার হয়। মৎস্যজীবীদের উদ্ধার করা এই ছানাটিকে হুগলি নদী থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে পাওয়া যায়।



দু'টি ছানাকে ইতিমধ্যেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে যেটিকে আজ উদ্ধার করা হয়েছে, সেটিকে নিয়ে গবেষণার জন্য কলকাতায় আলিপুর চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হবে। বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞেরা মোটামুটি দু'টি বিষয় অনুমান করছেন। নিজকসবা বিটে যে ম্যানগ্রোভ রোপণ করা হয়েছে, তা এখন যথেষ্ট  ভাল ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এবং অঞ্চলটি ক্রমে সুন্দরবনের পাশাপাশি এ রাজ্যে কুমিরদের জন্য একটি বিকল্প বাসস্থান হয়ে উঠছে। ফলে এখানে মা-কুমিররা এসে ডিম পাড়ছে। তা থেকে ছানা জন্ম নিচ্ছে এবং ছানাগুলি তাদের অনুকূল জায়গা পেয়ে যাচ্ছে। অন্য মতটি হল, আমফানের ফলেই কোনও ভাবে এক বা একাধিক মা-কুমির তাদের নিজস্ব জায়গা থেকে স্থানচ্যুত হয়ে এই এলাকায় চলে আসে। আমফান কুমিরদের ব্রিডিং-সিজনেই হয়েছিল। সেই সময়েই তারা এখানে চলে এসে ডিম পাড়ে।



ঘটনাটির সূত্রে চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন ভি কে যাদব বলেন, "আজ যে-ছানাটিকে পাওয়া গিয়েছে, তার মেডিক্যাল টেস্ট এবং তাকে নিয়ে অনুসন্ধান চালানোর জন্য সেটিকে আলিপুর চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হচ্ছে। ওদিকে বন দফতরের তরফে নিজকসবা বিটে মাইকিং শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুরোধ করা হচ্ছে, তাঁরা যাতে খেয়াল রাখেন আরও কোথাও কোনও কুমিরছানা পাওয়া যায় কিনা। মা-কুমিরটির থেকেও সতর্ক থাকার কথা বলা হচ্ছে। স্পষ্ট করে এলাকাবাসীদের বলে দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা যেন কোনও ভাবেই কোনও মা-কুমির বা কুমিরছানাকে আঘাত না করেন।"