পার্থ চৌধুরী: অষ্টমীকে মণ্ডপে মণ্ডপে হচ্ছে সন্ধিপুজে। পুরনো পথা অনুযায়ী বর্ধমান সর্ববমঙ্গলা বাড়ির সন্ধিপুজোয় দাগা হত কামান। সেই কামানের আওয়াজ শুনে দূরদরান্তের মন্ডপে শুরু হতো খ্যানের পুজো। এখন তা আর হয় না। বন্ধ হয়েছে কামান দাগা। ঐতিহ্যময় ওই প্রথা বন্ধের পেছনে রয়েছে এক দুর্ঘটনা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন-রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতে সাময়িক বিরতি, অষ্টমীর সকালে কুণালের পাড়ায় আনন্দ বোস


১৯৯৭ সালে ঘটনা সেটা। সে বছর অষ্টমীর রাতে যথাবিহিত নিয়মে শুরু হল প্রস্তুতি। প্রথা মেনে রেডি করা হল কামান। সন্ধির ব্রাহ্মমুহূর্তে বিস্ফোরণ ঘটান হল। কিন্তু কোনও এক গোলমালে কামান ফেটে টুকরো ছড়িয়ে গেল এলাকায়। মারা গেছিলেন একজন। আহত হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন। তাদের একজন ফোটোগ্রাফার। সেই থেকে বন্ধ করে দেওয়া হল কামান দাগা। যদিও এখনও কামানের একটি রেপ্লিকা রাখা আছে মন্দিরের সামনে। এভাবেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে রাজ আমলের চলে আসা প্রাচীন প্রথা। আর এক প্রাচীন প্রথা বলিদান আর মোষবলিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে কয়েক বছর আগে প্রশাসনের উদ্যোগে।


রাজ আমল থেকে চলে আসা প্রথা অনুসারে রাজাদের খনন করা গহীন জলের দিঘি কৃষ্ণসায়রে থেকে ঘটোত্তলন করা হয়। বিধি মেনে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয় এই লোকাচার। বর্ধমানের রাজারা ছিলেন পাঞ্জাবী। পরে বধূ হিসেবে নানা রাজ্যের মেয়েরা এসেছেন পরিবারে। তাই রাঢ়-জননী সর্বমঙ্গলার পুজো শুরু হয় প্রতিবার প্রতিপদে। কৃষ্ণসায়র থেকে আচার মেনে জল ভরা হয়। এরপর ঘটস্থাপন হয়। পুজো চলে নবমী অর্থাৎ নবরাত্রি অবধি। ঘোড়ার গাড়ি, ঢাক ঢোল বাদ্যি সবই থাকে প্রথমদিনে। গোটা প্রকরণে রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ, মায়ের প্রধান পুরোহিত থেকে সব পুরোহিতেরা শহরের কিছু বিশিষ্ট মানুষ এবারেও অংশ নিয়েছিলেন এই অনুষ্ঠানে। রাজার আমল থেকে চলে আসা প্রথাগুলির কোনো ব্যত্যয় হয় না বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্বমঙ্গলার পুজোয়।


পূর্ব বর্ধমানের সবচেয়ে প্রাচীন আর জনপ্রিয় মন্দির দেবী সর্বমঙ্গলা। রাজা তেজচন্দের আমলে এই মন্দির নির্মাণ হয়েছিল। মন্দির ঘিরে অনেক উপকথা। চুনুরী বাড়ির মেয়েরা মায়ের পাষাণপ্রতিমায় গুগলি থেতো করতেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে মাকে এই প্রাচীন মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। মন্দির সংস্কার হয়েছে। দেবী দুর্গা এখানে সর্বমঙ্গলা রূপে পুজিতা। সারাবছর বিরাজ করেন তিনি। সব ক'টি উৎসব রাজ-আমল থেকেই মহাসমারোহে পালিত হয়ে আসছে। পুজোর চারদিন ষোড়শোপচারে দেবী আরাধানা হয়। আগে মহিষ ও পাঁঠা বলি হত। পূর্বতন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের উদ্যোগে এখন বলি বন্ধ। তেমনিই কামান ফাটানো হতো সন্ধিপুজোর মহালগ্নে। তাও বন্ধ। তবু পুজোর পাঁচদিন এখানে তিলধারণের জায়গা থাকে না। হাজারে হাজারে ভক্ত সমবেত হন। মাছের টক সহ নানা উপাচারে মায়ের ভোগ হয়। মালসাভোগ নিতে ভক্তরা ভিড় করেন।


(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)