নিজস্ব প্রতিবেদন:  সিরিয়াল কিলার উদয়ন দাসকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল বাঁকুড়া ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। মঙ্গলবার আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল।  প্রেমিকা আকাঙ্খা শর্মা এবং নিজের বাবা বীরেন্দ্রনাথ দাস ও মা ইন্দ্রানী দাসকে খুন করার অপরাধে এই সাজা দিল আদালত।

COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

 ২০১৭ সালে আকাঙ্খা শর্মা খুনের ঘটনায় রীতিমত তোলপাড় হয় দেশ জুড়ে।  সূত্রের খবর ২০০৮ সালে সোশ্যাল সাইটে উদয়নের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় আকাঙ্খা শর্মার।  উদয়ন নিজেকে আমেরিকার একটি মাল্টি ন্যাশনাল সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে দাবি করে।  আকাঙ্খাকে আমেরিকায় ইউনিসেফে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার নাম করে দিল্লিতে ডেকে নিয়ে যায় উদয়ন। ইউনিসেফে চাকরির একটি নিয়োগপত্রও পাঠিয়েছিল উদয়ন।


 পুলিসের তদন্তে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী,  ২০১৬ সালের ২৩ জুন দিল্লিতে পৌঁছন আকাঙ্খা।  সেখানে গিয়ে আকাঙ্খা জানতে পারে  ওই নিয়োগপত্র ভুয়ো ছিল।  আকাঙ্খা বিষয়টি জানিয়েছিল তাঁর পরিবারকে। দিল্লি যাওয়ার পর প্রথম প্রথম পরিবারের সাথে যোগাযোগ থাকলেও ধীরে ধীরে আকাঙ্খার সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয় পরিবারের। পরবর্তীতে টেলিফোনে কথাবার্তা না হলেও নিয়মিতভাবে বাড়িতে মেসেজ আসতে থাকে আকাঙ্খার মোবাইল থেকে।


পরবর্তীতে পুলিশের জেরায় উদয়ন জানায় আকাঙ্খা দিল্লি পৌছানোর পর সেখান থেকে তিনি যান ভোপালে।  ২০১৬ সালের ২৭ জুন ভোপালের একটি কালী মন্দিরে আকাঙ্খাকে বিয়ে করে উদয়ন।  উদয়নের সঙ্গে থাকতে গিয়ে প্রেমিকের  স্বরূপ জানতে পারেন আকাঙ্খা। ভুল ভাঙতেই বাড়ি ফেরার তোড়জোড় শুরু করেন তিনি।


২০১৬ সালের ১২ জুলাই বাঁকুড়ায় ফেরার জন্য উদয়নকে লুকিয়ে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটেন আকাঙ্খা। বিষয়টি জানতে পেরেই ১৫ জুলাই আকাঙ্খাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে উদয়ন।  এরপর মৃতদেহ টিনের বাক্সে ভরে ভোপালের ঘরের মধ্যেই সিমেন্টের বেদি তৈরি করে লুকিয়ে ফেলে।

 প্রেমিকাকে  খুনের পরই তাঁর পরিবারের হাওয়া বুঝতে ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর আকাঙ্খার বাঁকুড়ার বাড়িতে আসে উদয়ন। আকাঙ্খার পরিবারকে জানায় তাঁদের মেয়ে আমেরিকায় রয়েছেন।  প্রয়োজনে সেখানে গিয়ে তাঁরা মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। ভিসার জন্য আকাঙ্খার মা বাবাকে দিল্লিতে যাওয়ার কথাও বলে উদয়ন।
পরে উদয়নের কথা মতো দিল্লি যায় আকাঙ্খার বাবা ও দাদা।  কিন্তু দিল্লিতে যাওয়ার পর আর উদয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অগত্যা বাড়ি ফিরে আসেন আকাঙ্খার বাবা ও দাদা।  এরপরই পরিবারের সন্দেহ বাড়তে থাকে উদয়নের ওপর।


এরপর আকাঙ্খার বাবা ও দাদা ভোপালের সাকেতনগরে আকাঙ্খার খোঁজে গেলেও কোনো সন্ধান পাননি।  এতেই সন্দেহ আরও তীব্র হয়।  এরপর ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর আকাঙ্খার বাবা  শিবেন্দ্র নারায়ন শর্মা বাঁকুড়া সদর থানার দ্বারস্থ হয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করেন।  এরপরই তদন্তে গতি আসে। আকাঙ্খার মোবাইল টাওয়ার লোকেশান ট্র‍্যাক করে জানা যায় মোবাইল ফোনটি রয়েছে ভোপালের সাকেতনগর এলাকায়।  ভোপালের উদ্দেশে রওনা দেয় বাঁকুড়া সদর থানার তদন্তকারী দল।

২০১৭ সালের  ২ ফেব্রুয়ারি ওই তদন্তকারী দল ভোপালের সাকেতনগরে আকাঙ্খার প্রেমিক উদয়ন দাসের বাড়িতে হানা দিয়ে উদয়নকে গ্রেফতার করে।  উদয়নের বাড়ির মেঝেতে থাকা সিমেন্টের বেদি খুঁড়ে উদ্ধার হয় আকাঙ্খার দেহ। পরে উদয়নকে নিয়ে ছত্রিশগড়ের রায়পুরে যায় তদন্তকারীরা। সেখানে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ তদন্তকারী অফিসারদের। বাবা মাকেও খুন করেছে উদয়ন।

আরও পড়ুন: কেঁপে উঠল মাটি, বাংলার এই জেলায় ভূমিকম্প

  ৫ ফেব্রুয়ারি রায়পুরের সুন্দরনগরে উদয়ন দাসের বাড়ির উঠোন খুঁড়ে উদ্ধার হয় উদয়ন দাসের বাবা বীরেন্দ্রনাথ দাস ও মা ইন্দ্রানী দেবীর মৃতদেহ।   এরপর পুলিস উদয়ন দাসকে বাঁকুড়ায় নিয়ে আসে।  তার বিরুদ্ধে বাঁকুড়া ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্টে অপহরণ,  খুন ও প্রমাণ লোপাটের চার্জ আনা হয়। এরপর থেকে মোট ১৯ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত উদয়নকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।