প্রসেনজিত্‍ সর্দার: দীর্ঘ প্রায় ৪০ কিমি পথ অতিক্রম করে পথচারী এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করতেই দেখিয়ে দিলেন বাড়িটা। একটি মন্দির তারপর পাকা বিদ্যালয় তারপরেই ছোট্ট একখানি কুটীর, সেখানেই খালি গায়ে ঘুমিয়ে আছেন। বারান্দায় দূর থেকে দেখলেই মনে হবে যেন সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার শীতের সকালে রোদ পোহাচ্ছে। বিশাল আকৃতির দেহ। বয়স প্রায় ৮০ ছুঁই ছুঁই। এখন কাজ বলতে মানব সেবা। তিনিই শোনালেন, ডাকাত জীবনের নানান চড়াই-উৎরাইয়ের কথা। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন, Hooghly: খাবার চাওয়াই অপরাধ একরত্তির! গুপ্তিপাড়ায় শিশু মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য...


নাম গোকুল নস্কর। পেশা ছিল ডাকাতি। একদা সমগ্র সুন্দরবন ভয়ে কাঁপত গোকুল ডাকাতের কথা শুনে। জলে-স্থলে উভয় দিকেই ডাকাতিতে পারদর্শী ছিলেন তিনি। লোক মুখে আজও শোনা যায়, গোকুলের দাপটে বাঘে-হরিণে একঘাটে জল খেত। তার ভয়ে আতঙ্কে প্রহর গুনত এলাকা। দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার সুন্দরবনের মেরীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা গোকুল নস্কর। ৭৮ টি ফৌজদারি মামলার আসামী। এমন একটি দিন যায়নি যে তার খোঁজে পুলিস গ্রামে আসেনি। প্রত্যেক দিন পুলিসের জিজ্ঞাসাবাদে অতিষ্ট হয়ে ডাকাত গোকুল নস্করকে পুলিসের হাতে তুলে দেন তার স্ত্রী সবিতা নস্কর। তারপর থেকেই গোকুল নস্করের ঠিকানা ছিল জেলাখানার চার দেওয়াল।বর্তমানে মামলা থেকে বেকসুর খালাস গোকুল ডাকাত। 


ডাকাতি করতে গিয়ে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ বার পুলিসের হাতে ধরা পড়েছেন। জেলার কুলতলি, ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা, নোদাখালি, বারুইপুর, মগরাহাট, জয়নগর, ডায়মন্ডহারবার-সহ হাওড়া, হুগলী, বাঁকুড়া, মেদনীপুর, বর্ধমান এমনকি উড়িষ্যার পারাদ্বীপ-সহ একাধিক জায়গায় দাপটের সঙ্গে ডাকাতি করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় ধরাও পড়েছেন। ধরা পড়ার পর জনসাধারণের সামনে থেকে পুলিস ধরে নিয়ে যাওয়ায় অপমানিত বোধ করেন। সেই থেকে নিজেকে সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নেন ডাকাত গোকুল। এক কথায় রামায়ণের দস্যু রত্নাকর থেকে ঋষি বাল্মীকি। 


গোকুল বাবুর কথায়, “ডাকাত জীবনে কোনওদিনই কোন নারীকে অত্যচার করা কিংবা তাঁদের গায়ে হাত পর্যন্ত দেননি। কাউকে খুন করেননি কিংবা মারেননি। শুধুমাত্র আগ্নেয়াস্ত্র আর ভয় দেখিয়ে সব জায়গায় ডাকাতি করেছেন। অনেকবার মৃত্যুর হাত থেকেও বেঁচে ফিরেছেন গোকুল নস্কর। জয়নগর থানার তৎকালীন ওসি সোমদেব ব্যানার্জীর সহযোগিতায় ১৯৮২ সাল নাগাদ ডাকাতি পেশা ছেড়ে পাড়ায় পাড়ায় সাহায্য চেয়ে একটি কালী মন্দির স্থাপন করলেন। সোমনাথ বাবুও সেই সময় ডাকাত গোকুলকে সৎপথে আনার জন্য ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। 


তখন অবশ্য এলাকার অনেকেই গোকুল ডাকাতকে নিয়ে হাসি ঠাট্টায় মেতে থাকতেন। গোকুল নস্কর সেসব কথায় কর্ণপাত না করে নিজের কাজে ব্রতী হলেন। গোকুল নস্কর ডাকাত থেকে আমূল পরিবর্তন হয়ে এলাকায় পরিচিত হলেন গোকুল মহারাজ নামে। তিনি বলেন, জয়নগর থানার তৎকালীন ওসি সোমদেব ব্যানার্জী আমার পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে না দাঁড়ালে শেষ জীবন পর্যন্ত ডাকাত থেকেই যেতাম। সোমদেববাবু বছরে চার হাজার টাকা অনুদানও দিতেন। অর্থনৈতিকভাবে অভাবের জন্য কোন ব্যক্তি তাঁর মেয়ের বিয়ে দিতে অপারগ হলে গোকুল বাবুর কানে এমন কথা পৌঁছালে তিনি দুহাত দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ান। এলাকার যে কোনও ব্যক্তি সাহায্যের জন্য গোকুল বাবুর কাছে গিয়ে খালি হাতে ফেরেন না। ডাকাত গোকুল জীবনের শেষ লগ্নে পৌঁছে আজ রামায়ণের দস্যু রত্নাকর থেকে বাল্মিকী।



আরও পড়ুন, Hooghly: গুড়াপে ৫ বছরের নাবালিকাকে 'ধর্ষণ-খুন'! পড়শির বাড়়িতে মিলল রক্তাক্ত, সংজ্ঞাহীন...


(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)