শ্রীকান্ত ঠাকুর: স্কুলের মিড ডে মিলের লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু এক স্কুল ছাত্রের। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমন্ডি ব্লকের কচড়া হাইস্কুলে। মারা গিয়েছে এই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। মৃত ওই ছাত্রের নাম অভিজিৎ সরকার। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে খুব স্বাভাবিক ভাবেই উত্তেজিত এলাকা। শোকার্তও।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: Lucknow: ছাড় নেই IAS অফিসারের স্ত্রীরও! চার দিন ঘরে আটকে নাগাড়ে দেহ-ভোগ, ভিলেন ছেলেই...


তবে স্কুলের মিড ডে মিলের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে এলাকা। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী স্কুলে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এমনকি, বিদ্যালয় চত্বরে মারধরও করা হয় শিক্ষকদের।


কেন স্কুলের প্রতি জনসাধারণের এত রাগ-ক্ষোভ?


তাঁদের অভিযোগ, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মৃত ছাত্র অভিজিৎ সরকারকে হাসপাতালেই নিয়ে যায়নি। এই অভিযোগ তুলে মৃতের পরিবার এবং ওই অঞ্চলের গ্রামবাসীরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপর চড়াও হন। অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক রানা বসাককে গ্রামবাসী তথা মৃত ওই ছাত্রের পরিবারের লোকজন বেধড়ক মারধর করে। 


এদিকে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থানীয় কুশমন্ডি থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিস ঘটনাস্থলে আসে কিন্তু উপস্থিত গ্রামবাসীরা পুলিসের কথায় সংযত না হয়ে উল্টে বিদ্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। অবস্থা বেগতিক দেখে খবর দেওয়া হয় র‍্যাফ এবং কমব্যাট ফোর্সকে। পরে কুশমন্ডি থানা থেকে বিরাট পুলিস বাহিনী এসে পরিস্থিতি  নিয়ন্ত্রণে আনে। বিদ্যালয় চত্বরে মোতায়েন রয়েছে র‍্যাফ এবং কমব্যাট ফোর্স।


স্থানীয় সূত্র এবং পুলিসের তরফ থেকে জানা গিয়েছে, মৃত ওই ছাত্র এদিন মিড ডে মিলের খাবারের জন্য দুপুর আনুমানিক দেড়টার সময়ে লাইনে দাঁড়ায়। সে সময়ে হঠাৎই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মাটিতে পড়ে যায়। শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ওই ছাত্রের। এর পরই তার সহপাঠীরা তাকে ধরাধরি করে ঘরের মধ্যে বসায় এবং চোখে-মুখে জল দেয়। এরপর ওর ক্রমাগত অবস্থার অবনতি হলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রের বাড়ির লোকদের ফোনে বিষয়টি জানায়। যেহেতু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও যানবাহন ছিল না তাই ওই পড়ুয়াকে নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হাসপাতালে নিয়ে যেতে বেশ কিছুটা সময় ব্যয় হয়েছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের।


বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কুশমন্ডি হেলথ সেন্টারে যোগাযোগ করেছিলেন কিন্তু সেখানে তখন কোনও ডাক্তার না থাকায় তাঁরা আর অসুস্থ ওই ছাত্রকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবেননি। এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রানা বসাক জানান, 'প্রতিদিন মিড ডে মিল খাওয়ার জন্য ছাত্ররা লাইনে দাঁড়ায়। এদিনও সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। অন্য ছাত্রদের সঙ্গে সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রও মিড ডে মিলের খাবার নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ায়। আনুমানিক বেলা দেড়টার সময় প্রতিদিন আমাদের বিদ্যালয়ে মিড ডে মিলের খাবার দেওয়া হয়। মিড ডে মিলের খাবার বিতরণ চলাকালীন ওই ছাত্র হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্ররা তাকে ধরাধরি করে নিয়ে একটা ঘরে বসায় এবং চোখে মুখে জল দেয়। কিন্তু তার পরও সে সুস্থ না হলে তার বাড়ির লোককে খবর দেওয়া হয়। যেহেতু আমাদের বিদ্যালয়ে কোনও রকম যানবাহনের ব্যবস্থা নেই, তাই ওই ছাত্রকে তৎক্ষণাৎ কোনও হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা সম্ভব হয়নি আমাদের পক্ষে। এর মধ্যে খবর পেয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীরা এবং ওই ছাত্রের বাড়ির লোকজন এসে বিদ্যালয়ের উপর চড়াও হন। বিদ্যালয়ের সম্পত্তি ভাঙচুর করে এবং আমাকে মারধরও করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে কুশমন্ডি থানায় খবর দেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে র‍্যাফ এবং কমব্যাট ফোর্স এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ভাঙচুরের ঘটনায় বিদ্যালয়ে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।'


আরও পড়ুন: Gautam Gambhir Salary: বিরাটদের নতুন গুরু জিজি, টিম ইন্ডিয়ার কোচ হিসাবে কত টাকা পাবেন, জানেন!


এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুলিস সুপার চিন্ময় মিত্তাল জানিয়েছেন, 'কুশমন্ডিতে স্কুলে ভাঙচুরের ঘটনায় এবং প্রধান শিক্ষককে মারধরের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে চারজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। মৃত ওই ছাত্রের পরিবারের তরফ থেকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রের চিকিৎসায় কোনরকম গাফিলতির অভিযোগ লিখিতভাবে জানানো হলে পুলিস তদন্ত করে দেখবে। আপাতত ওই বিদ্যালয়ে প্রচুর পুলিস মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।'


(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)