প্রসেনজিত সর্দার: এরা সকলেই মুক বধির। কথা বলেন নিজস্ব ভাষায়, নিজস্ব ভঙ্গিতে। যাকে বলা হয় সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ। আর সেই ভাষাতেই প্রতিদিন আড্ডা জমান তারা। নিজেদের মধ্যে চলে হাসি ঠাট্টা, কান্না, সুখ, দুঃখ এমনকি রাগারাগি থেকে মারামারি পর্যন্ত। সব মিলিয়ে স্টেশন তাদের আড্ডার আস্তানা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রান্তিক স্টেশন তথা সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার হলো ক্যানিং। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের নিত্য যাতায়াত এই স্টেশন দিয়ে। কিন্তু সকলের অলক্ষেই থাকেন তারা। তাদের চাওয়া-পাওয়া ভালোলাগা বোঝেননা আর পাঁচ জন সাধারণ মানুষ। তাদের আনন্দ দুঃখকে ভাগ করে নেওয়ার মতো নেই কেউ। এবার তাই নিজেদের ভাষাতেই নিজেদের মতো করে আড্ডা বসালেন তারা। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘না বলা কথা’।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সমস্ত কাজকর্ম শেষ করে প্রতিদিন বিকাল পাঁচটা নাগাদ ক্যানিং ষ্টেশনে  উপস্থিত হন রঞ্জিত, সুভাষ, সুলেখা, পারমিতারা। আপাতভাবে দেখলে আর পাঁচ জন সাধারণ মানুষের মতোই মনে হলেও তারা কেউই কথা বলতে পারেন না। এক কথায় সকলেই তারা মুক-বধির। সকলেই কথা বলেন নির্দিষ্ট সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে। একে অপরকে সেই ভাবেই বুঝিয়ে থাকেন মনের কথা। আর সেই বোঝাকে কেন্দ্র করে কখনও ওঠে হাসির ফোয়ারা কখনও আবার বিষাদের ছবি। কেউ আবার মারতে যায় আরেক জনের দিকে। সব মিলিয়ে তাদের এই আড্ডায় এক নতুন ভাবনা মানুষের মধ্যে ।


প্রতিদিন বিকাল হলেই বহু মানুষ সময় কাটাতে চলে আসেন ক্যানিং স্টেশনের প্লাটফর্মে। রাত পর্যন্ত বসে সেখানেই চলে বহু মানুষের নানান আলোচনা। শিক্ষক থেকে উকিল, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী থেকে ব্যস্ত মানুষের কর্ম তৎপরতা সবই ঘটে স্টেশনে। আর সেখানেই একেবারে টিকিট কাউন্টারের পাশেই তারা বসে নিজেদের মধ্যে মেতে ওঠেন আলোচনায়। প্রতিদিন বাড়ছে তাদের সংখ্যা। আগে দুজন বা চারজন উপস্থিত হলেও এখন সেই সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে প্রায় কুড়ির কাছাকাছি। বিকেল হলেই প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার দূর থেকেও চলে আসেন কেউ কেউ। মহিলারাও কাজ সেরে চলে আসেন সেখানে।


আরও পড়ুন: Weather Today: অক্টোবরেই বর্ষা বিদায়? পুজোতে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা কি রয়েছে?


এই বিষয়ে তাদেরই পাশে বসে থাকা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক নিরঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘আমরা সবাই যেমন নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারি ওরা সেটা পারেনা কিন্তু এত সুন্দর ভাবে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনায় মাতে এবং হাসিতেই মেতে থাকে দেখেও ভালো লাগে। মোবাইলে যুগে এখন সবাই নিজেদের মোবাইলে গেম খেলতেই ব্যস্ত। উঠে গেছে আড্ডা মারার প্রসঙ্গটায়। কিন্তু এই কয়েকজন মুক ও বধির মানুষকে দেখেই আমরা সত্যিই আনন্দ পাই’।


তাদের কাছে মোবাইল থাকলেও তারা এই সময় কেউ সেটা ব্যবহার করেন না। মাঝেমধ্যে ভিডিও কলে অন্যান্য তাদেরই কিছু মানুষের সঙ্গে নিজস্ব অঙ্গভঙ্গিতেই কথা সেরে নেন তারা। সব মিলিয়ে আড্ডা জমে ওঠে ক্যানিং স্টেশনে। কথা না বলা মানুষগুলোই যেন প্রতিটা মুহূর্তের কথা ফুটিয়ে তোলেন স্টেশনের এক প্রান্তে।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)