নিজস্ব প্রতিবেদন: প্রায় এক যুগ ধরে শিকল দিয়ে নিজেরই বাড়ির উঠানে খুঁটিতে বাঁধা মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে আর তাঁর চিকিৎসার জন্যে বাড়ি বাড়ি ভিক্ষে করেন অসহায় মা। অবশেষে নড়ে-চড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। জেলাশাসক খোঁজ-খবর নিয়েছেন। খোঁজ নিয়েছেন চাইল্ড লাইনের আধিকারিকেরাও।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

করুণ এই ছবি ধরা পড়ল পশ্চিম মেদিনীপুর (West Midnapur) জেলার চন্দ্রকোনা (Chandrakona) ২ ব্লকের কুঁয়াপুর পঞ্চায়েতের কুঁয়াপুর গ্রামে। ওই গ্রামের বাসিন্দা বছর ৪৭-এর ছবি পূজারী। একচিলতে ভাঙাচোরা মাটির বাড়িতে বসবাস তাঁর। তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন অনেক আগেই। রয়েছেন একমাত্র ছেলে বছর ২৭-এর প্রশান্ত। কিন্তু তিনি অসুস্থ। এদিকে জমি-জায়গা নেই, চাষাবাদও কিছু নেই। এখন তাই একমাত্র উপার্জন বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা আর তার মাধ্যমে কোনওক্রমে দিনযাপন।


আরও পড়ুন: Raiganj: সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশিক্ষণের খেসারত, বিষধর সাপ কৌটোবন্দি করতে গিয়ে বিপত্তি


ছেলে প্রশান্ত ছোট থেকেই মানসিক সমস্যায় জর্জরিত। ১০ বছর ধরে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে এখন তিনি সম্পূর্ণ মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন বলে শোনা গিয়েছে। ১০ বছর ধরে তাই বাড়ির উঠানে ছেলে প্রশান্তকে লোহার শিকলে বেঁধে তালাচাবি দিয়ে ভিক্ষে করতে যান মা। তার আগে ছেলের সকালের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা সেরে নেন। দিনভর শিকল-বাঁধা থাকেন প্রশান্ত। শৌচকর্ম থেকে যাবতীয় কাজ তাঁকে বাধ্য হয়ে বাঁধা অবস্থায় উঠানেই সারতে হয়। এদিকে ভিক্ষে সেরে বাড়ি ফিরে তারপর ছেলের দিকে নজর দেওয়ার সময় পান মা। কষ্ট হলেও এভাবেই ছেলেকে শিকলবন্দি করে রাখতে হয়। ছেলে কখন কোথায় চলে যাবে বা গ্রামেই যদি কারও সঙ্গে কোনও অঘটন ঘটিয়ে ফেলে এই সব দুশ্চিন্তা তাড়া করে মাকে। 


এখন ভিক্ষের উপার্জন থেকেই ছেলের চিকিৎসা, ওষুধ, খাবার সব কিছুই ব্যবস্থা করতে হয় মা ছবি পূজারীকে। সরকারি আর্থিক সাহায্য মিললে এখনও হয়তো তাঁর ছেলে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন এমনই আশায় বুক বাঁধছেন ভিক্ষাজীবী মা ছবিদেবী। যদিও এ ক্ষেত্রে নির্বাক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে উচ্চতর প্রশাসন-- সকলের ভূমিকা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। 


স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় প্রতিবেশীদের কেউ প্রশান্তর ধারেকাছে যান না। আর এর মধ্যে সরকারি ভাবেও কোনও সাহায্য তাঁদের দিকে আসেনি। প্রাপ্তি বলতে রেশনটুকু। ভগ্নপ্রায় বাড়িতে এভাবেই দিন কাটছে মা-ছেলের। প্রতিবেশীদের তরফেই জানা গিয়েছে, ছেলে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় আর মা সহায়সম্বলহীন। কার কাছে যেতে হবে, কী করতে হবে-- এ সব বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। ফলে তাঁরা নিজেরা যেমন খোঁজ-খবর নিয়ে কিছু করে উঠতে পারেননি, উল্টো দিকে স্থানীয় প্রশাসনিক স্তরেও তাঁদের জন্য কিছু করা হয়নি বলে প্রতিবেশীদের দাবি।


যদিও শোনা গিয়েছে, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরেই ওই পরিবারের জন্য সমস্ত রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে স্থানীয় ব্লক আধিকারিকের তরফে। পঞ্চায়তে সমিতির সদস্য হীরালাল ঘোষও খোঁজখবর নিয়েছেন এবং এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে প্রয়োজনীয় খোঁজ-খবর নিয়েছেন জেলাশাসকও। শিশুসুরক্ষা দফতরের আধিকারিকরাও এসেছেন।


(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)


আরও পড়ুন: Durgapur: টিকার লাইনে 'ঘাড়ধাক্কা' TMC কাউন্সিলরের! অপমানে আত্মহত্যার চেষ্টা গৃহবধূর