Bardhaman: সহানুভূতির বন্ধন! মালিকানাহীন পথকুকুরদের পাশেই দিনরাত `ভয়েস ফর দ্য ভয়েসলেস`...
Street Dogs of Bardhaman: কেউ বলতেই পারেন, কুকুর বেড়েছে তো নিকেশ করে দিলেই হল! শোনা যায়, এককালে রসগোল্লার টোপ দিয়ে সাঁড়াশি দিয়ে চেপে ধরে হল্লা গাড়ি কুকুর ধরে নিয়ে যেত এলাকা থেকে। তারপর তাদের কী পরিণতি হত, সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। কিন্তু আজ আর এভাবে ভাবা সম্ভব নয়।
পার্থ চৌধুরী: বর্ধমান শহরে এখন পথকুকুরের সংখ্যা কত জানেন? শুনলে চমকে উঠতে পারেন! ১৭০০০ হাজারের বেশি! রীতিমতো রিসার্চ করে এই তথ্য পেয়েছে একটি পশুপ্রেমী সংস্থা।
কুকুর বেড়েছে, তবে একদিনে তো বাড়েনি। একদিকে শহর যেমন বেড়েছে, সঙ্গে বেড়েছে তার নানা অনুষঙ্গ এবং তার সঙ্গে জড়িত নানা সমস্যাও। কিন্তু এই সব সমস্যা নিয়ে হয়তো কোনও পরিকল্পনা কোনোদিন করা হয়নি সেভাবে। যেসব পুর-এলাকায় এসব নিয়ে নিয়মিত ভাবা হয়, সেখানে সমস্যাটা তত প্রকট নয়। তবে বর্ধমান পুরসভার হয়তো এসব নিয়ে ভাবার তেমন অবকাশ হয়নি বলেই মনে করে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
এ প্রসঙ্গে কেউ বলতেই পারেন, কুকুর বেড়েছে তো নিকেশ করে দিলেই হল! শোনা যায়, এককালে রসগোল্লার টোপ দিয়ে সাঁড়াশি দিয়ে চেপে ধরে হল্লা গাড়ি কুকুর ধরে নিয়ে যেত এলাকা থেকে। তারপর তাদের কী পরিণতি হত, সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। কিন্তু আজ আর এভাবে ভাবা সম্ভব নয়। কুকুর-বিড়াল এদের এভাবে মেরে ফেলা অমানবিক এবং বে-আইনিও। একমাত্র জন্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই সমস্যার কিছুটা সমাধান হতে পারে।
অনেকেই যেমন রাত-বিরেতে কুকুরের অত্যাচার নিয়ে রীতিমতো সরব। তেমনই অনেকেই আবার এদের নিয়ে বাঁচতেও ভালবাসেন। ভাবুন তো, এত কুকুর বেঁচে আছে কীভাবে? শহরে তো আর খাদ্যের প্রচুর সংস্থান নেই! মানুষেরই ফেলে দেওয়া বা ভালবেসে দেওয়া খাবার খেয়ে এরা কোনও রকমে টিকে থাকে। তাই লকডাউনের সময়ে খুবই সমস্যায় পড়েছিল এই সারমেয়রা। তবে অনেক ব্যক্তি এবং সংস্থা এগিয়ে এসে এদের খাবার জুগিয়ে গিয়েছে। এখনও ব্যাপারটা অনেক এলাকাতেই চালু আছে।
এত কুকুর যখন, তাদের অসুখ-বিসুখ হলে দেখে কে? কুকুরের ভয়ংকর অসুখ হল-- পার্ভো, ডিস্টেম্পার, র্যাবিস। এছাড়া অন্যান্য অসুখ-বিসুখ তো লেগে থাকে-- ক্যানসার থেকে সাধারণ জ্বর। এইসব হলে নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজে নেমে পড়েন অল্পবয়সী একদল ছেলেমেয়ে।
বর্ধমানে তৃপ্তি চক্রবর্তী প্রথম এই পশুক্লেশ নিবারণের কথা ভাবেন। কিছুদিন আগে প্রবীণ এই শিক্ষিকা মারা গিয়েছেন। এখন শহর জুড়ে কুকুরদের এবং অসুস্থ কুকুরদের দেখভাল করে তাদের সমস্যায় ছুটে যায় আর একটি সংস্থা। যাদের সদস্যরাও তরুণ। সংস্থার নাম 'ভয়েস ফর দ্য ভয়েসলেস'। যেসব কুকুর-বিড়ালের কোনো মালিক নেই, সেই মালিকানা প্রাণীদের জন্য তাঁরা সর্বত্র হাজির হন। বিনামূল্যে স্যালাইন, ইঞ্জেকশন, ওষুধ দেন। সবটাই স্বেচ্ছাশ্রম আর মানুষের ভালবাসায় চলে।
গত শনিবার বর্ধমানের একটি কলেজে একটি পুরুষ-কুকুর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। অন্য কুকুর তাকে আক্রমণ করে আহত করে। একটু শান্ত প্রকৃতির এই কুকুরটি আক্রান্ত হওয়ার পর খুব কষ্ট পাচ্ছিল। কলেজেরই এক ছাত্রী দেখতে পেয়ে পশুপ্রেমী সংস্থায় খবর দেন। তিনদিন ধরে চিকিৎসার পরে কুকুরটি বেঁচে যায়। কলেজের ক্যান্টিনকর্মী কুকুরদের খেতে দেন। তিনিও পাশে আছেন। স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়েছেন, কুকুরটি বিপদমুক্ত। তবে আরও কিছুদিন চিকিৎসা চলবে।
'ভয়েস ফর দ্য ভয়েসলেস' সংস্থার তরফে তাঁরা জানান, প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৭টি কল আসে তাঁদের কাছে। এলেই তাঁরা পৌঁছে যান। কেউ বলতেই পারেন, মানুষকেই কে দেখে, তার ঠিক নেই, আবার কুকুর! কিন্তু এই প্রাণীটি সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মানুষের সঙ্গে আছে। আমরা যাকে রাস্তার কুকুর বা নেড়ি বলি, তাদের ভালো নাম-- ইন্ডিয়ান পারিয়া ডগ। গবেষকরা জানান, এরা খুব বিশ্বস্ত ও কষ্টসহিষ্ণু হয় এবং সব সময় ভালোবাসা খোঁজে। ওদের জন্যও ভাবনা তাই দরকার। কারণ মানুষও তো একলা বাঁচতে পারে না।
'ভয়েস ফর দ্য ভয়েসলেসে'র তরফে সভাপতি অভিজিৎ মুখার্জি এবং সম্পাদক স্বপন ঘোষাল একযোগে জানান, ২০১৯ সালের কুকুরগণনার হিসেবমতো কুকুর ও অন্য স্ট্রে অ্যানিমালের মোট সংখ্যাটা ছিল ১৭০০০। এর মধ্যে কুকুর ছিল ১৪৩০০। ২০২৩ সালে ডিস্টেম্পারে অনেক কুকুর মারা যায়। এর পরে অবশ্য অনেক জন্মেছে। তবে আর কোনো গণনা হয়নি বলেই জানা গিয়েছে।