নিজস্ব প্রতিবেদন: একেই বলে যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। আর পাঁচটা সাধারণ বাড়ির মহিলার মতো নয়, টোটো চালিয়ে নিজের দুই সন্তান, ভাই ও বাবার দেখভাল করেন বীরভূমের সিউড়ির গৌরী হাজরা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন- স্কুল বাঙ্ক করে মদের আসর, সোশ্যাল মিডিয়ায় নগ্ন নাচের ভিডিয়ো পোস্ট পড়ুয়াদের!


এ  টোটো আর পাঁচটা সাধারণ টোটো নয় বরং সবকিছুকে জয় করে অদম্য সাহস ও শক্তির প্রতীক হল এটি। এই টোটোর চালক একজন মহিলা। হ্যাঁ!  বছর সাতাশের তরুণী গৌরী দেবী দারিদ্র-কে জয় করার জন্য বেছে নিয়েছেন এই পেশাকে। তাঁর অতীতকে ঘাঁটতে গিয়ে জানা গেল গৌরীদেবী একজন বিবাহিত মহিলা। বছর পাঁচেক আগে বিয়ে হয়। এখন চার বছরের একটি কন্যা সন্তান ও  এক পুত্রের মা তিনি। বাপের বাড়ি সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের বিপরীতে। যেখানে গৌরীদেবীর বর্তমান সংসার । বাড়িতে গৌরীর নিজের কন্যা সন্তান ছাড়াও রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা। আর দুর্ঘটনায় আহত একটি মাত্র ভাই। টোটোই তাঁর বেঁচে থাকার এখন একমাত্র রসদ। টোটোয় চালকের আসনে চেপেই সে সুখ শান্তির এবং দারিদ্র-কে জয় করার গন্তব্যে পৌঁছতে মরিয়া। আর তার জন্য যত ঝড় ঝাপটাই আসুক না কেন কোনও কিছুই তাঁর চলার পথ আঁটকাতে পারবে না।



যদিও প্রথমে সাইকেলে চেপে শহরের চারিদিকে পড়ে থাকা কাগজ প্লাস্টিক কুড়িয়ে সংসারের হাল ধরেন তিনি। পরে জুটেছে একটা প্যাডেল করা ট্রলি। সদরের মানুষ দেখেছে ছিপছিপে চুড়িদার পড়া একটি মেয়ে কোমরে ওড়না জড়িয়ে ট্রলি ভরতি কাগজ কুড়িয়ে বাড়ি ফিরছে। অভাবের তাড়নায় পড়াশুনা হয়নি। গৌরি এইট পাস। দারিদ্রতা আর পড়াশুনা একসঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলতে পারেনি। বাস্তব যে কত কঠিন বুঝতে দেরি হয়নি গৌরীর। আর তাই দু’মাস আগে ঋণ করে কিনে ফেলেছেন টোটো, যা থেকে দু পয়সা বাড়তি আয় করা যায় ।



ভাল আর মন্দ সবকিছুকে নিয়েই সমাজ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন নারীর এই পেশা বেছে নেওয়া যে কতটা ঠিক সে নিয়ে চলুক না বুদ্ধিজীবী মানুষদের যুক্তি তর্ক,  এসবকে আমল দিতে নারাজ গৌরী। তাঁর কথায়, “কে কী বললো বা কোন চোখে দেখল তাতে কী এসে যায়? দুর্গা মা, সেও গৌরী। একজন নারী হয়ে দুষ্টের দমন করতে পারে তবে আমিও একজন গৌরী হয়ে কেন পারবো না অভাব নামক অসুরকে বিনাশ করতে?” তিনি আরও বলেন, “তবে এতে আমার একদিকে যেমন শারীরিক পরিশ্রম কম হচ্ছে আবার অনেক বেশি কাগজ জোগাড় করতে পারছি তেমনই অন্যদিকে ফাঁকা টোটো নিয়ে যাওয়া আসার সময় যাত্রী চাপিয়েও বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছি। আবার পথে যেতে আসতে যাত্রী ভাড়াও মিলছে।”


আরও পড়ুন- একশো দিনের কাজ না পেলে পদত্যাগ করবে উপপ্রধান! বিডিও অফিস ঘেরাওয়ের হুমকি তৃণমূল নেতার


মা দূর্গার মতো নাই বা থাকলো দশটা হাত কিন্তু কন্যাকে খাওয়ানো পড়ানো, সংসারের রান্নাবান্না করা,  অসুস্থ ভাইকে সেবাযত্ন করা, বৃদ্ধ বাবার দেখাশোনা করা আর সাথে সাথে দিনরাত টোটো নিয়ে অর্থ উপার্জনের জন্য ছুটে বেড়ানো শহরের একপ্রান্ত মা দুর্গার থেকে কোনো অংশে কম নয়।