Amartya Sen: ১৫ দিনের মধ্যে জায়গা ছাড়ুন, নইলে... অমর্ত্য সেনকে কড়া উচ্ছেদ নোটিস বিশ্বভারতীর!
অমর্ত্য সেন স্পষ্টভাবে জানান, `শান্তিনিকেতনের `প্রতীচী` বাড়ী যা ১৯৪৩ সাল থেকে আমার পরিবারে দখলে এবং আমি নিয়মিত ব্যবহার করে আসছি। পারিবারিক ভিটে জমির ধারক আমি এবং এটি হস্তান্তর করা হয়েছিল। আমার বাবা আশুতোষ সেন এবং মা অমৃতা সেন এর মৃত্যুর পরও দীর্ঘ ৮০ বছর জমির ব্যবহার একই রয়ে গেছে। জমি ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত কেউ এই জমির অধিকার দাবি করতে পারে না। প্রশাসনকে তার নিশ্চিত করারও নির্দেশ দিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট।`
প্রসেনজিৎ মালাকার: অমর্ত্য সেনকে ফের উচ্ছেদ নোটিস। বেঁধে দেওয়া হল ১৫ দিনের সময়সীমা। ৬ মে এর মধ্যে ওই ১৩ ডেসিমেল জমি খালি করার নির্দেশ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। আর ১৫ দিনের মধ্যে জায়গা না ছাড়লে বলপ্রয়োগেরও হুঁশিয়ারি কর্তৃপক্ষের।
অনুমোদিত দখলদার উচ্ছেদ আইনের ১৯৭১ ধারা ৫-এর উপধারা ১-এর অধীনে ক্ষমতা প্রয়োগ করে ফেরানো হবে ১৩ ডেসিমেল জমি।
কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের মাধ্যমেও জমি খালি করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বেঁধে দেওয়া হয়েছে ১৫ দিনের সময়সীমা। ৬ মে-র মধ্যে বিশ্বভারতীর প্লট নাম্বার ২০১ উত্তর-পশ্চিম কোণে অর্থাৎ এল আর প্লট নাম্বার ১৯০০/২৪৮৭ সুরুল মৌজার ১৯০০ জেএল নম্বর ১০৪ পাবলিক সম্পত্তির উপর অনুমোদিত 'দখল' জমি খালি করা নির্দেশ বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম কর্মসচিব ও এস্টেট অফিসারের। উল্লেখ্য বিশ্বভারতীর শুনানিতে ১৯ এপ্রিল অমর্ত্য সেন অথবা তাঁর প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকার কারণে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের বিরুদ্ধে এবার কড়া সিদ্ধান্ত এবং হুঁশিয়ারি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের।
পারিবারিক ভিটে জমি উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁরই প্রাপ্য। এ নিয়ে কোনও বিতর্কের অবকাশ নেই। জুনে শান্তিনিকেতন ফিরে এলে আলোচনা হতে পারে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে ১৭ এপ্রিল এই চিঠি পাঠান নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেন। চিঠি পাঠিয়ে আলোচনার জন্য ৩ মাস সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ৩ মাসের বদলে জমি খালি করার জন্য মাত্র ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিল। এই মুহূর্তে অমর্ত্য সেন বিদেশে থাকলেও জমি পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি কর্ত্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সময়সীমার মধ্যে জমি খালি না করা হলে বলপ্রয়োগ করা হবে।
বিশ্বভারতীকে দেওয়া চিঠিতে অমর্ত্য সেন স্পষ্টভাবে জানান, 'শান্তিনিকেতনের 'প্রতীচী' বাড়ী যা ১৯৪৩ সাল থেকে আমার পরিবারে দখলে এবং আমি নিয়মিত ব্যবহার করে আসছি। পারিবারিক ভিটে জমির ধারক আমি এবং এটি হস্তান্তর করা হয়েছিল। আমার বাবা আশুতোষ সেন এবং মা অমৃতা সেন এর মৃত্যুর পরও দীর্ঘ ৮০ বছর জমির ব্যবহার একই রয়ে গেছে। জমি ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত কেউ এই জমির অধিকার দাবি করতে পারে না। প্রশাসনকে তার নিশ্চিত করারও নির্দেশ দিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট।' সেই বিষয়টি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে মনে করিয়ে দিয়ে সেন চিঠিতে জানান, 'কোনও হস্তক্ষেপ বা শান্তি ভঙ্গের অনুমতি দেওয়া উচিত নয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। এরপরও যদি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ মানতে রাজি না হন, তাহলে আমি জুন মাসে শান্তিনিকেতনে ফিরে আসব। তখনই আলোচনা করা যেতে পারে।'
কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের পালটা দাবি,দখলদার উচ্ছেদ আইন ১৯৭১ সালের ১০ ধারায় বলা আছে, যিনি ইজারাদাতা তিনি জমির মালিক। তিনি জমির স্থানান্তর, উত্তরাধিকারী উইল করতে পারবেন না। ব্যতিক্রম শুধুমাত্র বিশ্বভারতীর আজীবন সদস্যদের। অমর্ত্য সেন বিশ্বভারতীর আজীবন সদস্য নন। সদস্য হলে ইজারাদাতা হিসেবে স্বীকৃত হতেন। বিশ্বভারতী শতাব্দী প্রাচীন জাতীয় গুরুত্বের প্রতিষ্ঠান। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ ডেসিমেল জমি দখল করে রেখেছেন অমর্ত্য সেন। অর্থাৎ জমি উদ্ধারের জন্য বিশ্বভারতী যে অনড় মনোভাব নিয়ে চলছে, তা কার্যত পরিষ্কার। দখল হওয়া জমি পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিশ্বভারতী। এবার অমর্ত্য সেন বা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত কী পদক্ষেপ নেন, এখন সেটাই দেখার। যদিও চিঠি প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন অথবা তাঁর আইনজীবীর কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।