নিজস্ব প্রতিবেদন : নন্দীগ্রামের বয়াল ৭ নম্বর বুথের, মোকতাব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, ভোটগ্রহণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির প্রেক্ষিতে 'মিনিটস' ধরে ধরে উত্তর দিল নির্বাচন কমিশন। স্পষ্ট জানাল,  "আপনার হাতে লেখা চিঠিতে করা অভিযোগ তথ্যগতভাবে ভুল। এবং অভিযোগের স্বপক্ষে কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণও নেই।" প্রসঙ্গত, ১ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার, দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ ঘিরে সকাল থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়েছিল নন্দীগ্রামের বয়াল ৭ নম্বর বুথে। তৃণমূলের এজেন্টদের বসতে না দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে এরপর দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় সটান বুথে হাজির হলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। একপক্ষের এজেন্টকে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ, অন্যপক্ষের ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ, দুয়ের প্রেক্ষিতে কার্যত সংঘর্ষ পরিস্থিত সৃষ্টি হয়েছিল সেদিন বয়াল ৭ নম্বর বুথে। প্রায় ২ ঘণ্টা সেদিন ওই বুথে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বুথে বসেই তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পোলিং অফিসারদের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোটে মদতদানের অভিযোগে চিঠি লেখেন উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈনকে। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই এবার কড়া উত্তর দিল নির্বাচন কমিশন। যেখানে সাফ খারিজ করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বয়াল ৭ নম্বর বুথের ভোটগ্রহণের 'মিনিটস'-


সকাল সাড়ে ৫টা- বিজেপি, সিপিআইএম ও নির্দল প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতিতে মক পোল শুরু হয়।


সকাল ৭টা- ৩ দলের পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতিতে নির্বিঘ্নেই ভোটগ্রহণ শুরু। 


সকাল ৭টা ৪০- সেক্টর অফিসার নিজের মোবাইলে ও ব্লক কন্ট্রোল রুম থেকে ৭ নম্বর বুথে একজন পোলিং অফিসারকে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ পান।


সকাল ৮টা ৪-  সেক্টর অফিসার ৭ নম্বর বুথে পৌঁছন। তখন সেখানে ৩ জন পোলিং এজেন্টের উপস্থিতিতে নির্বিঘ্নেই চলছিল ভোট। ৪৫টা ভোট পড়েছিল তখন। সেক্টর অফিসার  সেইসময় অভিযোগকারীকে ফোন করেন। তিনি জানান, তিনি কিছুক্ষণ পর আসছেন। 


এর একঘণ্টা পর সেক্টর অফিসার আবার সেই পোলিং এজেন্টকে ফোন করেন। তখন তিনি বলেন, কিছু লোক তাঁকে হুমকি দিচ্ছে, তাই তিনি আসতে পারছেন না। 
সেক্টর অফিসার তাঁকে আশ্বস্ত করেন যে পুলিস তাঁকে নিরাপত্তা দিয়ে বুথে নিয়ে আসবেন, কিন্তু ওই পোলিং এজেন্ট আসতে অস্বীকার করেন।


সকাল ৯টা ৩- কন্ট্রোল রুম থেকে প্রিসাইডিং অফিসারকে ফোন করা হয়। তিনি নিশ্চিত করেন যে বুথে এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি, ভোট শান্তিপূর্ণ হচ্ছে।


সকাল ৯টা ৩৩- নন্দীগ্রাম ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার নগেন্দ্র ত্রিপাঠিকে বুথে যেতে ও অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি রিপোর্ট করেন যে সবকিছু শান্তিপূর্ণভাবে চলছে।


সকাল ১০টা ১৯- ব্লক কন্ট্রোল রুম থেকে আবার একটি 'অ্যালার্ট' পেয়ে সেক্টর অফিসার ৭ নম্বর বুথে যান। দেখেন, তখনও পর্যন্ত নির্বিঘ্নেই ২৭১টি ভোট পড়েছে।


সকাল ১১টা ৬- পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিস সুপার কুইক রেসপন্স টিম নিয়ে বুথ পরিদর্শন করেন। ভোট নির্বিঘ্নে হওয়ার কথা জানান।


নাগাড়ে অভিযোগের ভিত্তিরে নগেন্দ্র ত্রিপাঠি আবার ঘটনাস্থলে যান, ভোট শান্তিপূর্ণভাবে চলতে দেখেন।


জেনারেল অবজারভার IAS হেমেন দাস ও পুলিস অবজারভার IPS আশুতোষ রায় বুথ পরিদর্শন করে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের কথা জানান।


DEO স্মিতা পান্ডে মুখ্যমন্ত্রীর ৭ নম্বর বুথে যাওয়ার কথা জানতে পেরে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেন।


বেলা ১টা ৪৫- ৭ নম্বর বুথে পৌঁছন মমতা ব্যানার্জি। বুথের বাইরে তখন বিজেপি ও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা জমায়েত করেন। এর জেরে উত্তেজনা ছড়ায়।


বেলা ২টো ৫৫- জেনারেল অবজারভার IAS হেমেন দাস ও পুলিস অবজারভার IPS আশুতোষ রায় ৭ নম্বর বুথে পৌঁছে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী বুথের বাইরে বারান্দায় হুইলচেয়ারে বসে। তাঁর পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।


তৃণমূলের পোলিং এজেন্ট ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই বুথে 'রিপোর্ট' করেননি বলে জানানো হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। তখনও পর্যন্ত ৬৪২ টা ভোট পড়েছিল। নির্বিঘ্নেই চলছিল ভোটগ্রহণ। মুখ্যমন্ত্রীকে আরও জানানো হয় যে, সেক্টর অফিসার ও পুলিস তাঁকে বুথ পর্যন্ত নিরাপত্তার আশ্বাস দিলেও তিনি আসতে অস্বীকার করেন। আর কোনও 'অনিচ্ছুক'কে ECI পোলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করার জন্য জোর করতে পারে না। আর জমায়েত ভিড়কে ধীরে ধীরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। 


বিকেল ৩টে ৩৫- আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে বুথের বাইরে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে আসেন নগেন্দ্র ত্রিপাঠি। জমায়েত ভিড় থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থনে স্লোগান ওঠে। এরপর ধীরে ধীরে পুরো ভিড়টাই হাল্কা হয়ে যায়।  


PO ডায়েরি অনুযায়ী সেদিন বয়াল ৭ নম্বর বুথে ভোটগ্রহণ হয় নির্বিঘ্নেই। প্রতি ২ ঘণ্টায় সেদিন বয়াল ৭ নম্বর বুথে ভোট পড়েছে-
সকাল ৯টা- ১২৫টা ভোট (১৩ শতাংশ)
বেলা ১১টা- ৩৫০টা ভোট (২৩ শতাংশ)
দুপুর ১টা- ৫৬৫টা ভোট (২৪ শতাংশ)
দুপুর ৩টে- ৬৫৫টা ভোট (৯ শতাংশ)
বিকাল ৫টা- ৭২৮টা ভোট (৮ শতাংশ)
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা- ৭৪৫টা ভোট (২ শতাংশ, শেষ ৯০ মিনিটে)


একইসঙ্গে কমিশন জবাবি চিঠিতে আরও জানিয়েছে যে, "সেদিন বুথের নিরাপত্তায় থাকা বিএসএফ জওয়ানদের দুর্ব্যবহারের কোনও প্রমাণ মেলেনি। আর তাদের বিরুদ্ধে ভোটারদের বুথে ঢুকতে না দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তা একদমই সত্যি নয় (Far from Truth)। বিভিন্ন স্তরের আধিকারিকরা সেদিন বয়াল ৭ নম্বর বুথের ভোটগ্রহণ নিয়ে যে রিপোর্ট কমিশনে জমা দিয়েছে, তাতে কোথাও বহিরাগত বা বন্দুক দেখিয়ে দুষ্কৃতীদের বুথ দখলের কোনও অভিযোগ নেই।"


পাশাপাশি কমিশন আরও জানিয়েছে যে, "২ ঘণ্টা ধরে প্রার্থী বুথে থাকা অবস্থায়, পক্ষে ও বিপক্ষে স্লোগানের মধ্যেও ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোনও বাধা পড়েনি। কোনও হিংসার ঘটনা ঘটেনি। না কোনও ভোটারকে ভয় দেখানো হয়েছে।" জবাবি চিঠিতে কমিশন মুখ্যমন্ত্রীর করা অভিযোগ সাফ উড়িয়ে দিয়ে স্পষ্ট জানিয়েছে, "আপনার হাতে লেখা চিঠিতে করা অভিযোগ তথ্যগতভাবে ভুল। এবং অভিযোগের স্বপক্ষে কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণও নেই।"


আরও পড়ুন, West Bengal Election 2021: আক্রান্ত BJP প্রার্থী, রিপোর্ট তলব নির্বাচন কমিশনের