তন্ময় প্রামাণিক: বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা এবং প্যাথলজি টেস্টের লাগামছাড়া বিলে নাভিশ্বাস রোগী ও তার পরিবারের। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনে জমা পড়া অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়েই কার্যত চক্ষু চড়কগাছ তদন্তকারীদের। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বেসরকারি হাসপাতালের প্যাথলজিগুলি যে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে, স্বীকারোক্তি খোদ চেয়ারম্যানেরই। এরপরই হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে নড়েচড়ে বসে কমিশন। শুধু তাই নয়, সত্ত্বর টাকা ফেরতের নিদানও দেওয়া হয়েছে অভিযুক্ত হাসপাতালগুলোকে। 


আরও পড়ুন: NIA ধরতেই গায়ে ধুম জ্বর ছত্রধরের, সোজা গেলেন হাসপাতাল


বিল সংক্রান্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়েই একের পর এক অসঙ্গতি ধরা পড়ছে। আর ধরা পড়তেই অজুহাত, বাহানা, সময় চাওয়া, বীমা কোম্পানির ঘাড়ে দায় চাপানোর পাশাপাশি রোগীর পরিবারকে নগদ ফেরানোর প্রতিশ্রুতি। কমিশনের চাপে এমনই অবস্থা শহরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের।


কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অধিকাংশই লাগামছাড়া প্যাথলজিক্যাল টেস্ট-এর চার্জ নিচ্ছে। একাধিক অভিযোগের শুনানি এবং তদন্ত শেষে এমনই প্রমাণ পেয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন। সতর্ক করা হয়েছে ডিসান, মেডিকা, বি পি পোদ্দার, বি এম বিড়লার মতো একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। শুক্রবার এমনই বেশ কয়েকটি অভিযোগের শুনানি ছিল। 


আরও পড়ুন:  একবালপুরে রক্তারক্তি কাণ্ড! মা ও দুই মেয়েকে খুনের চেষ্টার পর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ খুনির


এ দিন বিকেল চারটে নাগাদ এক সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা দেখতে পেয়েছি ডিসান হাসপাতালে মাত্র ১৯ ঘণ্টা ভর্তি ছিলেন এক ব্যক্তি। ১৯ ঘণ্টায় তাঁর বেড চার্জ নেওয়া হয়েছে ২৬ হাজার টাকা। কেন এত টাকা? প্রশ্ন করাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, দুপুর ১২টার পরে আরেকটি দিন হিসেব করা হয় হোটেলের মতো!"


তিনি আরও বলেন, "তাঁদের প্যাথলজিক্যাল বিল দেখতে গিয়ে আমরা চমকে গিয়েছি।  অনেক বেশি টাকা নেওয়া হয়েছে। এক রোগীর অভিযোগের ভিত্তিতেই এটা ধরা পড়েছে ঘটনা। সেই রোগীর পরিবারকে আমরা ৬,৫,৪৬৮ টাকা তা ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছি।"


পাশাপাশি বি পি পোদ্দার হাসপাতালের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। সেখানেও ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ১৫৯ টাকার একটি বড় বিল তৈরি হয়েছে। রাজীব নামের ব্যক্তি এই অভিযোগ করেছিলেন। বিল খতিয়ে দেখা গিয়েছে সরকারি নিয়ম ভেঙে অনেক বেশি চার্জ নেওয়া হয়েছে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায়। শুধু তাই নয় প্যাথলজিক্যাল বিলেও দেখা যায় সেখানে অনেক বেশি চার্জ করা হয়েছে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখানে বসেই রোগীকে ৫০,০০০ টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 


আরও পড়ুন:  বাইক কিনে দেননি বাবা, ছক সাজিয়ে নে দেননি বাবা, ছক নিজের ঘরেই চুরি করতে গিয়ে শ্রীঘরে গুনধর


ছবিটা কার্যত একই মেডিকা সুপার স্পেস্যালিটি হাসপাতালেও। এর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। সেই বিলে দেখা গিয়েছে, সেখানেও প্যাথলজি টেস্টের চার্জ অনেক বেশি নেওয়া হয়েছে। কেন, সে প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করায় তাঁরা বলেছেন, বীমা সংস্থার সঙ্গে চূড়ান্ত বিলের রফা করেই এ বিষয়ে তাঁরা জানাবেন। কমিশন এ বিষয়ে অপেক্ষা করছে বলেই জানানো হয়েছে। 


অন্যদিকে বি এম বিড়লা হাসপাতালে এক ব্যক্তিকে রাত্রে ভর্তি করানো হয়েছিল। তিনি মারা যান। তাঁর কোভিড টেস্ট না করানো হলেও টাকা নেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে।  আরও একটি অভিযোগে দুর্গাপুর মিশন হাসপাতাল এবং বিবেকানন্দ হাসপাতালকে রোগীর চিকিৎসার রেকর্ড এফিডেভিট জমা দিতে বলা হয়েছে।


সবমিলিয়ে ছবিটা মোটেই স্বস্তি দিচ্ছে না। বরং বেসরকারি হাসপাতাল ও প্যাথল্যাবে লাগামছাড়া বিলে ঘুম ছুটেছে অনেকেরই। তবে পরিস্থিতি সামলাতে ইতিমধ্যেই ময়দানে নেমেছে রাজ্য-স্বাস্থ্য কমিশন।