Mamata In Purulia: `BLRO অফিসের কাজ হয় সামনের ২ দোকান থেকে!` প্রশাসনিক বৈঠকে তোপ মমতার
মমতা বলেন, এইসব পরিবারগুলিকে কেউ যদি ধমকায়, চমকায় তাহলে তাদের আমি গ্রেফতার করে ঢুকিয়ে দেব
নিজস্ব প্রতিবেদন: পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে এসে জেলা প্রশাসনকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে, জেলায় পড়ে থাকা প্রকল্প থেকে জমির মিউটেশন, একশো দিনের টাকা-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে সরব হন। বিশেষ করে জমির মিউটেশন করা নিয়ে প্রশাসনকে কড়া বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, বিএলআরও এখানে কারা এসেছেন? সবার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ নেই। জঙ্গলমহলে একসময় রাস্তায় মানুষ বের হতে পারত না। অনেক কষ্টে এখানে শান্তি ফিরেছে। ভেবেছিলাম বিএলআরও অফিসের কাজকর্ম নিয়ে বিচ্ছিন্ন কয়েকটা অভিযোগ পাব। আজ আমি সাক্ষী নিয়ে এসেছি। আমারে পেছনে দেখো কিছু দরিদ্র আদিবাসী পরিবার বসে রয়েছে। অভিযোগ কী? অনেকে আগে জমির মিউটেশন করাতে পারতেন না। এখন যখন তারা মিউটেশন করাতে যাচ্ছেন তখন তা তাকে করতে দেওয়া হচ্ছে না।
মুখ্যমন্ত্রী খোঁজ নেন, বলরামপুরের আইসি কে আছেন? এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলতে শুরু করেন, বলরামপুরের বিএলআরও অফিসের ঠিক উল্টো দিকে ২টো দোকান রয়েছে। একটি হল করালীকিঙ্কর মোহান্তির দোকান। তার সাইনবোর্ড ভাঙা, অন্যটি হল প্রিয়াঙ্কা ভ্যারাইটিস। বিএলআরও অফিসের সব কাজ ওই দুটি দোকানে হয়। সাধারণ মানুষ বিএলআরও অফিসে সাধারণ মানুষ গেলে বলা হচ্ছে ওই দুটি দোকানে গিয়ে বুঝে আসতে হবে।
এখনেই থেমে থাকেননি মমতা। বলেন, গরিব মানুষকে বলা হচ্ছে জমি মিউটেশনের জন্য় রেট চালু হয়েছে। জমির মাপ অনুয়ায়ী ওই দোকান থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত মিউটেশনের খরচ বলা হচ্ছে। এরা হচ্ছে মিডল ম্যান। ওরা যেই হোক দ্রুত তদন্ত করে আমি এর একটা রিপোর্ট চাই। একসময় এখানে তপসিলি জাতি উপজাতিদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এখন অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তারা আগে ভাবতেই পারতো না বিএলআরও অফিসে যাবে। কৃষক বন্ধু প্রকল্পে এখন অনেকে জমি মিউটেশন করাতে চাইছে। জমি রেকর্ড করা নেই বলে অনেক আদিবাসী পরিবার কৃষক বন্ধুর টাকা পাচ্ছে না। এনিয়ে প্রশাসনের তত্পর হওয়া উচিত। সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ জেলা এই পুরুলিয়া। দূরের জেলা বলে অনেকেই হয়তো জানাতে পারেন না। হুড়া বিএলআরও অফিসেও ঝামেলা চলছে।
জমির মিউটেশন নিয়ে যেসব অভিযোগ এসেছে সেইসব অভিযোগের সাক্ষীদের মঞ্চে হাজির করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, বলরামপুর ব্লকের বড়উম্মা পঞ্চায়েতের নামশোল আগুইবেড়া গ্রামের মানুষ রাজেন হেমব্রম। তাঁকে স্টেজে ডেকে নেন মুখ্যমন্ত্রী। ওঁর বাবা মারা গিয়েছেন ২০১১ সালে। জমি মিউটেশন করতে গেলে বিএলআরও অফিস থেকে বলা হয় জমির পরচা বের করতে হবে। পরচার প্রতি কপি বের করতে দালাল নিয়েছে ১০০ টাকা করে। বিএলআরও অফিসের উল্টো দিকের দোকান মিউটেশন করতে নিয়েছে দেড় হাজার টাকা।
নামশোল মান্ডি গ্রামের মাধব মাহাতো ও যাদব মাহাতো বাবা মারা গিয়েছেন। বাবার জমি মিউটেশন করতে দালালকে দিতে হয়েছে ১০ হাজার টাকা। হুড়া ব্লকের দলদলির কামারডিতে এক একর জমি মিউটেশন করতে দালাল চেয়েছে ৩০ হাজার টাকা। জমি রেকর্ড নেই। কৃষক বন্ধু পাচ্ছে না। এইসব পরিবারগুলিকে কেউ যদি ধমকায়, চমকায় তাহলে তাদের আমি গ্রেফতার করে ঢুকিয়ে দেব।
জেলা প্রশাসনের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, এইসব যে অভিযোগ তাদের এইসব অভিযোগের সমাধান কী হবে? জমি মিউটেশন এখন অনলাইনে হয়ে গিয়েছে। বাবা মারা গেলে সন্তানরা তার সম্পত্তি পাবে। তাহলে কেন আপনারা তাদের ঘোরাচ্ছেন? পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদে এনিয়ে অভিযোগ হয়নি? আগে ভাবতাম রাজনীতির লোকজন দুর্নীতি করে। সরকারি কর্মীদের সুনামের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন-Abhishek Banerjee: বিচারপতিদের নিয়ে 'ডেরগেটরি কমেন্ট', অভিষেকের বিরুদ্ধে মামলা হাইকোর্টে