গলার নলি কাটা অবস্থাতেই সাঁতরে খুন হওয়ার হাত থেকে বাঁচলেন যুবক!
গলা দিয়ে গলগলিয়ে বেরোচ্ছে রক্ত। দৃশ্য দেখে এক নিমেশে যেন হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায় সঞ্জয়ের।
নিজস্ব প্রতিবেদন: রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ। ঘুমোতে যাওয়ার আগে বাড়ির প্রধান দরজার তালাটা ঠিক ভাবে লাগানো হয়েছে কিনা, সেটাই একবার দেখে নিয়ে গিয়েছিলেন উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের আবদুল ঘাটার বাসিন্দা সঞ্জয় রায়। তিনি গোঙানির শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন। বেরিয়ে উঠোনের দিকে এগোতেই মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ল তাঁর। দেখেন, রক্তে ভেসে যাচ্ছে এলাকা। এক যুবক তাঁরই বাড়ির উঠোনে শুয়ে হাত উঁচিয়ে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: পাত্রী দেখতে গিয়ে তাঁর বাড়িতে বারাকপুরের পাত্র যা ঘটালেন, তা এই রাজ্যে কেন দেশে কোথাও আগে ঘটেনি!
গলা দিয়ে গলগলিয়ে বেরোচ্ছে রক্ত। দৃশ্য দেখে এক নিমেশে যেন হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায় সঞ্জয়ের। কিন্তু সাত পাঁচ না ভেবে ওই যুবককে সাহায্যের কথাই মাথায় এসেছিল তাঁর। প্রথমে খবর দেন পুলিসে, তারপর হাসপাতালে। ততক্ষণে জ্ঞান হারিয়েছেন ওই যুবক। ওই অবস্থাতেই তাঁকে উদ্ধার করে রায়গঞ্জ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি। রবিবার রাতে রায়গঞ্জের আবদুল ঘাটায় সঞ্জয় রায় যে দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন, তা এক কথায় মানবিক ও প্রশংসনীয়ও বটে।
আরও পড়ুন: ভারত বনধে কোথায় ট্রেন বন্ধ, রাস্তায় কোথায় বিক্ষোভ? জানুন এখনকার পরিস্থিতি
রবিবার রাত ১১ টা নাগাদ নিজের বাড়ির উঠোনে গলার নলি কাটা এক যুবককে উদ্ধার করে সঞ্জয় রায়। তাঁর কথায়, ওই যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে কাতরাচ্ছিল। কেন এমনটা হয়েছে, কী নাম তাঁর, যুবককে সে প্রশ্ন করেন সঞ্জয় রায়। তাঁর দাবি, ওই যুবক জ্ঞান হারানোর আগে জানান, তাঁর নাম অখিল। বাড়ি শেরপুর গ্রাম পঞ্চাওয়েতের ধুরইল গ্রামে। রবিবার রাতে তিনি কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। সেসময় ৩ ব্যক্তি তাঁকে তুলে গিয়ে কুলিক নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। ওই তিন ব্যক্তির মুখেই কালো কাপড় বাঁধা থাকায়, তাদের চিনতে পারেননি তিনি। সেসময় তাঁর গলা কেটে খুনের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। অখিলের গলায় একবার ছুরিও চালায় দুষ্কৃতীরা। কিন্তু কোনওভাবে দৌড়ে পালিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন অখিল। তারপর বেশ কিছুটা সাঁতরে পাড়ে ওঠেন। তারপরই কোনওক্রমে সঞ্জয় রায়ের বাড়ির উঠোনে ঢুকে পড়েন।
আরও পড়ুন: এ কী হল কেষ্টর! সকলের সামনে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন অনুব্রত মণ্ডল
ঘটনার কর্নজোড়া পুলিশ ফাঁড়ি। আহত অখিল রায়গঞ্জ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। তবে অখিলকে কেন কেউ খুনের চেষ্টা করেছিল, আদৌ অখিল কোনও দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত কিনা, বা দুষ্কৃতীরা আদৌ কারা, তা পুলিসের কাছে পরিস্কার নয়। গোটা ঘটনাটি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি এখনও। তবে আগুপিছু না ভেবে যেভাবে একেবারেই অপরিচিত আহত এক ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়েছে সঞ্জয় রায়, তা মানবিক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।