ওয়েব ডেস্ক: ইভিএম জালিয়াতি-এই শব্দ দু'টির সঙ্গে ভারতবাসী সুপরিচিত। ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কোনও না কোনও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর মুখে কখনও না কখনও এই অভিযোগ প্রায়শই শোনা যায়। সাম্প্রতিক কালে যা অন্য এক মাত্রা পেয়েছে। আর সেই প্রেক্ষিতেই ভারতের নির্বাচন কমিশনও নিজেদের 'স্বচ্ছতা' ও 'বজ্রআঁটুনি' প্রমাণ করতে রাজনৈতিক দলগুলিকে ইভিএম হ্যাক করে (পড়ুন, কারচুপি) দেখানোর 'ওপেন চ্যালেঞ্জ' করেছে। কিন্তু, সে তো নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলির বিষয়। তবে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তোলা ইভিএম জালিয়াতির অভিযোগে সাধারণ মানুষের মনেও অনেক সময় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, ইভিএম-এ যদি সত্যিই 'বজ্রআঁটুনি' থেকে থাকে, তাহলে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলিতে কেন ব্রাত্য এই আধুনিক জনমত গণনার যন্ত্র? আসুন, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক-


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সম্প্রতি ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নাসিম জৈদি দাবি করেছেন, " নেদারল্যাণ্ড, আয়ারল্যাণ্ড এবং জার্মানিতে ইভিএম বেসরকারিভাবে তৈরি হয় এবং এর কোনও নিজস্ব সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা নেই ঠিক যেমনটা ভারতে আছে"। এবার দেখে নেওয়া যাক, ভারতের ইভিএম বাকি বিশ্বে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের থেকে ঠিক কোথায় আলাদা?


নেদারল্যান্ডে ব্যবহৃত NEDAP মেশিনের তথ্য সিডির মাধ্যমে ট্রান্সফার করতে হয়, কিন্তু ভারতীয় ইভিএমে সব তথ্যই মেশিনের ইন্টারনাল স্টোরেজে। ভারতীয় ইভিএমকে কোনওভাবেই নেটওয়ার্কিং-এর দ্বারা 'কব্জা' করা যায় না বলে মত নির্বাচন কমিশনের। পাশাপাশি, ভারতের ইভিএম তৈরি হয় 'ইসিআইএল', 'বেল'-এর মতো সরকারি সংস্থায়, এখানে কোনও রকমের বেসরকারি হস্তক্ষেপ থাকে না। যে সফ্টওয়্যার ব্বহৃত হয়, তাও সম্পূর্ণ রূপে দেশীয় এবং মেশিনের মধ্যে যে চিপ থাকে সেটি এমনভাবে তৈরি যা 'ট্যাম্পার' করতে চাইলে আর 'অপারেট'ই করা যাবে না।


অন্যদিকে, জার্মানির মতো প্রযুক্তি উন্নত দেশে ২০০৫ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ইভিএমে ভোট হলেও পরবর্তীকালে সেদেশের ফেডারাল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট জানিয়ে দেয় যে সাংবিধানিক সংস্থান না থাকায় ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না।


আয়ারল্যাণ্ডে ২০০২ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত NEDAP মেশিন ব্যবহার হয়েছিল। কিন্তু দেশের দুটি স্বাধীন কমিশন জানায় যে, অপর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা, সিডির মাধ্যমে অসুরক্ষিতভাবে ডেটা ট্রান্সফারের জন্য তা বাতিল করে দেওয়া হয়।


আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হলে, ২০০০ সালে নির্বাচন ব্যবস্থার পুনরায় পর্যালোচনা করা হয় এবং ডায়রেক্ট রেকর্ডিং ইলেকট্রনিক সিস্টেম (ডিআরই) চালু করা হয়। ডিআরই ব্যবস্থায় পুশ বটন, টাচ ক্রিন বা ডায়ালের দ্বারা ভোটাররা তাঁদের ভোট সরাসরি কম্পিউটার মেমারিতে নথিভূক্ত করেন। ভোটারদের পছন্দ স্মার্ট কার্ড বা মেরারি কার্টিজের মাধ্যমে ডিআরইতে জমা হয়। কিছু কিছু ডিআরইতে ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রায়াল বা ভিভিপ্যাটের মাধ্যমে দেওয়া ভোটের প্রমাণ স্বরূপ প্রিন্ট আউট সংগ্রহ করার ব্যবস্থা রয়েছে। উল্লেখ্য, এই ভিভিপ্যাট ব্যবস্থা সম্প্রতি গ্রহণ করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশনও এবং জানানো হয়েছে যে এবার থেকে সব নির্বাচনেই ভোটার তাঁর ভোটের প্রিন্ট আউট পাবেন। (আরও পড়ুন- EVM কারচুপি নিয়ে চ্যালেঞ্জের দিন ঘোষণা করল কমিশন)