এত জনপ্রিয়তার পরেও নোকিয়া ব্যর্থ হল কেন?
একটা সময় ভারতে মোবাইল সেট মানেই নোকিয়া, এমন একটা মিথ চালু ছিল। তবে গোটা বিশ্বজুড়ে নোকিয়ার জনপ্রিয়তা থাকলেও উত্তর আমেরিকায় সেভাবে ছিল না। এই ব্যাপারটা জোর দিতে গিয়ে একটা বড় ভুল করে ফেলে নোকিয়া। ২০১০ সালে যখন নোকিয়ার নতুন সিইও হয়ে আসেন কানাডার স্টিফেন ইলোপ, তখন তিনি প্রধান টার্গেট নিলেন উত্তর আমেরিকায় নোকিয়াকে যেভাবেই হোক জনপ্রিয় করা। কারণ ইলোপ উত্তর আমেরিকার মানুষ। তিনি এশিয়া, ইউরোপের বাজারকে সেভাবে গুরুত্ব না দিয়ে উত্তর আমেরিকাকে পাখির চোখ করলেন। এদিকে তখন স্যামসং ভারত সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাজার দখল করতে আদাজল খেয়ে নেমেছে।
ওয়েব ডেস্ক: একটা সময় ভারতে মোবাইল সেট মানেই নোকিয়া, এমন একটা মিথ চালু ছিল। তবে গোটা বিশ্বজুড়ে নোকিয়ার জনপ্রিয়তা থাকলেও উত্তর আমেরিকায় সেভাবে ছিল না। এই ব্যাপারটা জোর দিতে গিয়ে একটা বড় ভুল করে ফেলে নোকিয়া। ২০১০ সালে যখন নোকিয়ার নতুন সিইও হয়ে আসেন কানাডার স্টিফেন ইলোপ, তখন তিনি প্রধান টার্গেট নিলেন উত্তর আমেরিকায় নোকিয়াকে যেভাবেই হোক জনপ্রিয় করা। কারণ ইলোপ উত্তর আমেরিকার মানুষ। তিনি এশিয়া, ইউরোপের বাজারকে সেভাবে গুরুত্ব না দিয়ে উত্তর আমেরিকাকে পাখির চোখ করলেন। এদিকে তখন স্যামসং ভারত সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাজার দখল করতে আদাজল খেয়ে নেমেছে।
আরও পড়ুন- এবার থেকে নোকিয়া ফোনে এটাও পাবেন
নানা রকম নতুন সেট, টেকনোলজি দামের হেরফের ঘটিয়ে আনতে লাগল স্যামসং। কিন্তু নোকিয়া কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিল নানা ধরনের সেট, নতুন টেকনোলজি আনলে ক্রেতারা ব্র্যান্ড নিয়ে বিভ্রান্ত হতে পারেন। এদিকে, আই ফোন আসার পর স্মার্টফোনের জগতে বিপ্লব আসে। অ্যান্ডড্রয়েড ফোন ক্রমশ জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করে। মিস্টার ইলোপ সিদ্ধান্ত নেন ইতিমধ্যেই অ্যান্ডড্রয়েড ফোনের বাজারে এতটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে, তাই ওখানে নেমে আরা লাভ নেই, করতে হবে নতুন কিছু। এই নতুন কিছু করতে গিয়ে নোকিয়া বস আনেন অর্ধেক তৈরি উইন্ডোজ প্ল্যাটফর্ম। যেখানে খুব বেসিক জিনিসেরই অভাব। থাকল না ব্লু টুথ-এক্সপেনডেবল স্টোরেজ। মাইক্রোসফট উইন্ডোজের হাত ধরে স্মার্টফোন বাজারে নিয়ে এসে কিস্তিমাত করতে চেয়েছিল ফিনল্যান্ডের এই কোম্পানি। কিন্তু কিস্তিমাত করতে গিয়ে কখন যেন বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে এই সিদ্ধান্ত। নোকিয়ার স্মার্ট ফোন কেন বাজার দখল করতে পারল না, সেই রহস্য উদ্ধার করতেই হয়তো অনেকটা সময় লেগে গিয়েছিল। স্যামসং , মাইক্রোম্যাক্স, সোনির মতো মোবাইলের প্রসার বাড়ায় নোকিয়ার ভবিষ্যত্ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা যায়।
আরও পড়ুন- ফোন ছেড়ে নোকিয়া নিয়ে এল "পদিপিসির বর্মি বাক্স"!
২০১৩ মার্চের শেষে নোকিয়ার মুনাফা হয় ৯৭.৮০ বিলিয়ন টাকা যেখানে ২০১২তে ১১৯.২৫ বিলিয়ন টাকা ব্যবসা করে। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যখন বাজারে ডুয়েল সিম মোবাইল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তখন ভারতের বাজারে ডুয়েল সিমের প্রয়োজনিয়তা অনুভব করেনি। আবার গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ছেড়ে মাইক্রোসফ্ট উইনডোজ স্মার্টফোনে ব্যবহার করায় পুরোও ব্যর্থ হয় নোকিয়া। টাইটানিক ডোবার মতো বলা যেতে অ্যান্ড্রয়েড খানিকটা আইসবার্গের মতো কাজ করেছিল।
নোকিয়ার ব্যবহারকারীরা বিরক্ত হলেন। নতুন ফোনের ক্রেতারা আর নোকিয়া ফোন কেনায় আগ্রহ দেখালেন না। আস্তে আস্তে বাজার দখল করে নোকিয়াকে পিছনে ফেলে দিতে তাকল স্যামসং, এলজি, মাইক্রোম্যাক্সের মত সংস্থারা। বিশেষজ্ঞরা অনেক সময় নোকিয়ার ভরাডুবির জন্য ইলোপের নীতিকেই দায়ি করেন। যদিও অনেকে বিশেষজ্ঞ এমনও বলেন, এসব নয় কারণ আরও গভীরে।
১৯৯৫ সালে ভারতে প্রথম মোবাইলের সূচনা ঘটে নোকিয়ার হাত ধরেই। সেই শুরু। তারপর....কখন যেন অজান্তেই ভারতীয়দের ওঠা বসা, সুখ দুঃখের সঙ্গি হয়ে উঠেছিল নোকিয়া। ফোন পরিবারে বিভাজনও ঘটিয়েছিল এই নোকিয়াই। বলা হত, ভারতে দু শ্রেণীর মোবাইল ইউজার আছে। এক শ্রেণী নোকিয়ার, আর অন্য শ্রেণী 'নন-নোকিয়া'। আট থেকে আশি, শহর থেকে গ্রাম, উচ্চবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত। মোবাইল মানেই নোকিয়া এমন একটা মিথও চালু হয়ে গিয়েছিল।
১৯৯৮ নোকিয়া প্রথম রিঙটোন তৈরি করে "সারে জাঁহা সে আচ্ছা"। রিঙটোনের প্রথম স্বাদ আমরা পেয়েছিলাম নোকিয়ার সৌজন্যে। বলতে পারেন নোকিয়ার এই মিউজিক 'জাতীয় সঙ্গীতের' মতো এক অন্য রকম অনুভুতি তৈরি করেছিল।
এরপর ২০০০ আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা হিন্দিকে মোবাইলে ব্যবহার করতে পেলাম। নোকিয়ার ৩২১০ হ্যান্ডসেটে প্রথম হিন্দিতে মেনু ব্যবহার করি। ২০০২ তে কোম্পানি নোকিয়ার ৭৬৫০ বাজারে নিয়ে আসে। আজকে সেলফি নিয়ে এত মাতোয়ারা, কিন্তু প্রথম মোবাইলে ক্যামারা ব্যবহার করি নোকিয়া ৭৬৫০।
পরের বছর মোবাইলের বিপ্লব ঘটে যায়। ২০০৩ নোকিয়া নিয়ে আসে ১১০০ সিরিজ। এই মোবাইল বাজারে আসার পর বিশ্বের সব থেকে বেশি হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়। প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছে যায় নোকিয়া ১১০০।
২০০৪ নোকিয়া নিয়ে আসে হিন্দিতে ম্যাসেজ। সেই বছরই নোকিয়া কমিউনিকেটর N9500 নিয়ে আসে প্রথম Wi-Fi ফোন। ২০০৫ ভারতের হিন্দি ছাড়া আরও আঞ্চলিক ভাষায় নোকিয়াকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়।
ফিনল্যান্ডের কোম্পানি ২০০৬ প্রথম চেন্নাইয়ে মোবাইল কারখানা তৈরি করে। ফোনের বিভিন্ন সফটওয়ার আপডেট ও টুলস পাওয়ার জন্য ২০০৯ নিয়ে আসে নোকিয়া লাইফ। সেই বছর স্টিফেন ইলোপ নোকিয়াকে আরও জনপ্রিয় করতে নিয়ে আসেন 'আশা' সিরিজ।
কিন্তু স্যামসাং ও মাইক্রোম্যাক্স ভারতে বাজার দখল করতে শুরু করে। আরও নামীদামি কোম্পানি নতুন নতুন ফিচার নিয়ে জলের দামে মোবাইল পৌঁছে দেয় রান্নাঘরের হেঁশেল অবধি। অ্যান্ড্রয়েড আর স্যামসং মোবাইল শব্দটির আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দেয়। নোকিয়ার লড়াই হয়ত তখনও শেষ হয়নি। মাইক্রোসফট উইন্ডোজের হাত ধরে স্মার্টফোন বাজারে নিয়ে এসে কিস্তিমাত করতে চেয়েছিল ফিনল্যান্ডের এই কোম্পানি। কিন্তু কিস্তিমাত করতে গিয়ে কখন যেন বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে এই সিদ্ধান্ত। নোকিয়ার স্মার্ট ফোন কেন বাজার দখল করতে পারল না, সেই রহস্য উদ্ধার করতেই হয়তো অনেকটা সময় লেগে গিয়েছিল।
স্যামসং , মাইক্রোম্যাক্স, সোনির মতো মোবাইলের প্রসার বাড়ায় নোকিয়ার ভবিষ্যত্ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা যায়। ২০১৩ মার্চের শেষে নোকিয়ার মুনাফা হয় ৯৭.৮০ বিলিয়ন টাকা যেখানে ২০১২তে ১১৯.২৫ বিলিয়ন টাকা ব্যবসা করে। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যখন বাজারে ডুয়েল সিম মোবাইল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তখন ভারতের বাজারে ডুয়েল সিমের প্রয়োজনিয়তা অনুভব করেনি। আবার গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ছেড়ে মাইক্রোসফ্ট উইনডোজ স্মার্টফোনে ব্যবহার করায় পুরোও ব্যর্থ হয় নোকিয়া। টাইটানিক ডোবার মতো বলা যেতে অ্যান্ড্রয়েড খানিকটা আইসবার্গের মতো কাজ করেছিল।
এখন প্রশ্ন নোকিয়া মোবাইলকে কি যাদুঘরে দেখতে পাওয়া যাবে? এটা তামাশা হলেও বাস্তবে সত্যি। নোকিয়া মোবাইলের স্বত্ব ৫.৪ বিলিয়ন ইউরোয় কিনে নেওয়ার পর এই প্রথম লুমিয়া সিরিজের ৫৩৫ প্রকাশ করল মাইক্রোসফ্ট। মাইক্রোসফ্টের 'Big on Experience' নিয়ে যাত্রা শুরু।