অভিরূপ সরকার, অর্থনীতিবিদ


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এ বছরটা খুবই অস্বাভাবিক বছর। এরকম সময় তো শতাব্দীতে একবার আসে। এবং এই বিরাট বিপর্যয়ের ফলে আমাদের দেশের বৃদ্ধির হার এবছর ঋণাত্মক হয়ে গিয়েছে। 


শুক্রবারে পেশ করা 'ইকনমিক সার্ভে' (Economic Survey)থেকে জানা যাচ্ছে, আমাদের জাতীয় আয় এ বছর ৭.৭ শতাংশ 'ফল' করেছে। মানে, গত অর্থবষে ১০০ টাকা যদি জিডিপি (GDP) হয়, এ বছর কমে গিয়ে সেটা দাঁড়াবে ৯২.৩ টাকা।


ওই সার্ভেতেই আবার বলা হচ্ছে, ওই অবনমনটাকে অতিক্রম করেই এই অর্থবছরে আমাদের বৃদ্ধি হবে ১১ শতাংশ। এই বিষয়টার উপরই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। এটাকেই একটা বিশেষ 'অ্যাচিভমেন্ট' হিসাবে দেখানো হচ্ছে। এখন, ওই ১১ শতাংশ 'গ্রোথ' (Growth) কীসের উপর? সেটা কিন্তু ওই ৯২.৩ শতাংশের উপরই। এবার অঙ্ক কষলে দেখা যাবে, ওই বহুনিনাদিত ১১ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে আগামী ২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি'র আঙ্কিক সংখ্যাটা দাঁড়াবে ১০২-এর মতো, মানে, ১০০-র সামান্য বেশি।


অথচ, এই বৃদ্ধির ঘোষণাকে সামনে রেখেই বলা হচ্ছে, অর্থনীতিতে একটা বিরাট 'রিভাইভ্যাল' আসছে। কিন্তু কী ভাবে এটা সম্ভব হবে, সেটা স্পষ্ট হচ্ছে না। 


আমি আশা করব, এই 'রিভাইভ্যালে'র জন্য সরকার অনেক টাকা খরচ করবে। আর বাজেটে (Budget) সেই দিশাটা থাকবে। এ বছর তো অনেকের চাকরি চলে গিয়েছে, যাদের চাকরি বেঁচেও গিয়েছে, তাঁদের মাইনে কমে গিয়েছে। অর্থাৎ, মানুষের হাতে টাকা কম। এটা থেকে বেরোতে গেলে সরকারকে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। কী ভাবে হবে কর্মসংস্থান? সরকারকে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে। সরকার কিছুদিন আগে পর্যন্তও অবশ্য বিনিয়োগের কথা বলেছে। কিন্তু এখন আর বলছে না। সরকার যদি এখনও ওই বিনিয়োগের বিষয়টা ভেবে দেখে তবে সরাসরি কিছু কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। কী ভাবে হবে? সরকারকে পরিকাঠামো উন্নয়নে খরচ করতে হবে। পরিকাঠামো তৈরি হলে বেসরকারি বিনিয়োগ আসবে। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়লে নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। অর্থাৎ, যেমন, টাকায় টাকা আনে। 


Also Read: লোকসভায় Economic Survey পেশ অর্থমন্ত্রীর


কিন্তু সরকারকে যে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করার কথা বলছি, তা কোথা থেকে আসবে? সোজা কথা হল, সরকারকে ধার করতে হবে। ধার করে ঘি খাওয়ার মতোই। কিন্তু ধারের ক্ষেত্রে একটা ভয় সাধারণত কাজ করে, সুদের মাত্রা বেড়ে যাবে এবং সুদের মাত্রা বাড়লে বেসরকারি বিনিয়োগ কমবে। কিন্তু এই ভয়টা সাম্প্রতিক কালের প্রেক্ষিতে অমূলক। কেননা, আমাদের দেশে দেখা গিয়েছে, ধার বেড়ে চললেও সুদের হার পাল্লা দিয়ে বাড়েনি, বরং কমেছে। 


তাই যদি হয়, তাহলে সরকার ধার করতেই পারে। মূল কথাটা বলতে চাইছি, সরকার ধার করে বিনিয়োগ করবে, তাতে সরাসরি কর্মসংস্থান হবে এবং পরিকাঠামোগত উন্নতিও ঘটবে। আর কান টানলে মাথা আসার মতো করে তার সূত্রেই আসবে বিনিয়োগ। আবার সেই বিনিয়োগ থেকেই নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। অর্থাৎ, নুয়ে-পড়া অর্থনীতির স্বাস্থ্যটা ক্রমশ ভাল হতে থাকবে।   


Also Read: কীভাবে শক্তিশালী হবে ভারতীয় অর্থনীতি, ব্যাখ্যা মুখ্য উপদেষ্টার