নেপালে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্প, মৃত ৬; কম্পন অনুভূত দিল্লি-এনসিআরে
নেপালে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলি জীবন ও সম্পত্তির অভূতপূর্ব ক্ষয়ক্ষতি করেছে এবং এই ধরনের বিপর্যয়গুলি সামলানোর জন্য সুপরিকল্পিত নীতির প্রণয়নের দাবি জোরদার হয়েছে। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি এবং এর আশেপাশের এলাকাতেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। তৃতীয় ঝাঁকুনিতেই একটি বাড়ি ধসে পড়ার পরে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বুধবার ভোররাতে নেপালে ৬.৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত করেছে। এএনআই-সূত্রে জানা গিয়েছে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা অন্তত ছয়। এছাড়াও পাঁচ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। শক্তিশালী ভূমিকম্পের কারণে জেলার বিভিন্ন স্থানে ধসের কারণে কয়েক ডজন ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নেপালের ন্যাশনাল সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (এনএসসি) জানিয়েছে, নেপালের দূর-পশ্চিম অঞ্চলে তিনটি কম্পন লক্ষ্য করেছে। এর মধ্যে দুটি ভূমিকম্প এবং একটি আফটারশক। তৃতীয় ঝাঁকুনিতেই একটি বাড়ি ধসে পড়ার পরে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ৫.৭ মাত্রার প্রথম ভূমিকম্পটি মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ৯.০৭ মিনিটে রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপরে স্থানীয় সময় রাত ৯.৫৬ মিনিটে ৪.১ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়।
ডোটি জেলার পূর্বচৌকি গ্রাম কাউন্সিল-০৩-এর চেয়ারম্যান রাম প্রসাদ উপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘বুধবার রাত স্থানীয় সময় আনুমানিক ২.১২ মিনিটে ৬.৬ মাত্রার তৃতীয় শক্তিশালী ঝাঁকুনিটি আঘাত হানে। এরপরেই একটি বাড়ি ধসে পড়ার পরে তিনজনের প্রাণহানি ঘটে। গাইরাগাঁও থেকে মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে’। পরে পুলিশ জানায়, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ছয় জন হয়েছে।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি এবং এর আশেপাশের এলাকাতেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।
নেপালে এর আগের ভূমিকম্প
এর আগে ১৯ অক্টোবর, ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে কাঠমান্ডু। এনসিএস অনুসারে, ভূমিকম্পটি কাঠমান্ডু থেকে ৫৩ কিলোমিটার পূর্বে দুপুর ২.৫২ মিনিটে হয়েছিল। ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল মাটির নিচে ১০ কিলোমিটার।
৩১ জুলাই, ন্যাশনাল ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র (এনইএমআরসি) অনুসারে, ৬.০ মাত্রার ভূমিকম্পটি নেপালের কাঠমান্ডু থেকে ১৪৭ কিমি ইএসইতে খোটাং জেলার মার্টিম বির্তার কাছাকাছি ভারতীয় সময় সকাল ৮.১৩ মিনিটে হয়।
আরও পড়ুন: Cop27 Summit: মিশরের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে দেশগুলিকে কী বললেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব?
এপিসেন্টারের গভীরতা পূর্ব নেপালে ১০ কিলোমিটারে দেখা গিয়েছিল। এর স্থান ছিল ২৭.১৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৬.৬৭ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। এর আগে ২০১৫ সালে, মধ্য নেপালের রাজধানীতে রিখটার স্কেলে ৭.৮ মাত্রার একটি উচ্চ-তীব্রতার ভূমিকম্প আঘাত হানে। কাঠমান্ডু এবং পোখারা শহরের মধ্যে হয় এই কম্পন। এতে ৮,৯৬৪ জন নিহত হয় এবং প্রায় ২২,০০০ জন লোক আহত হয় বলে অনুমান করা হয়।
গোর্খা ভূমিকম্প নামে পরিচিত এই ভূমিকম্পে উত্তর ভারতের বেশ কয়েকটি শহরও কেঁপে ওঠে। পাশপাশি পাকিস্তানের লাহোরে, তিব্বতের লাসা এবং বাংলাদেশের ঢাকায়ও কম্পন অনুভূত হয়।
নেপালে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলি জীবন ও সম্পত্তির অভূতপূর্ব ক্ষয়ক্ষতি করেছে এবং এই ধরনের বিপর্যয়গুলি সামলানোর জন্য সুপরিকল্পিত নীতির প্রণয়নের দাবি জোরদার হয়েছে।
নেপালে সবথেকে ভয়াবহ ভূমিকম্প
নেপালে ১৯৩৪ সালে সবথেকে ভয়াবহ রেকর্ড করা হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮.০। কাঠমান্ডু, ভক্তপুর এবং পাটান শহর ধ্বংস হয়ে যায় এই ঘটনায়। জানা গিয়েছে যে ভারতীয় প্লেটটি বছরে সেন্টিমিটার সেমি করে ইউরেশিয়ান প্লেটের নীচে চলে যাচ্ছে। এটি হিমালয়ের তরুণ ভাঁজ পর্বতগুলির গঠন এবং উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী এবং এই অঞ্চলটিকে ভূমিকম্পপ্রবণ করে তোলে। প্রস্তুতি পর্যাপ্ত না হলে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ সর্বনাশ ঘটাতে পারে।