নিজস্ব প্রতিনিধি— ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগ ছিল আবদুল মাজেদ ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ১৮ জন আসামির মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ছিল। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের ধানমণ্ডির বাড়িতে মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের খুন করা হয়েছিল। কিন্তু এই ঘটনার ২১ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনও মামলাই হয়নি। আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় এলে ১৯৯৬ সালে খুনিদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয় প্রথমবার। ১৯৯৮ সালে বিচার প্রক্রিয়া শেষে তৎকালীন ঢাকা জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক কাজী গোলাম রসুল বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ১৮ আসামির মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

২০০০ সালে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন সাজাপ্রাপ্তরা। এর পর হাইকোর্ট পাঁচজন আসামিকে খালাস করে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখেন। এক পরও মামলা গড়ায় ২০০৭ পর্যন্ত। হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। তিনজনকে মুক্তি দেন তিনি। ২০১০ সালে ফের আসামীরা মৃত্যুদম্ডের বিরুদ্ধে আপিল করলেও আদালত সাজা বহাল রাখে। মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ১২ আসামির মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি। দুজন আসামীকে থাইল্যান্ড ও ব্রিটেন থেকে ফেরত এনে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। 


বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংসতম ঘটনা হিসাবে কুখ্যাত হয়ে রয়েছে মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ড। মুজিবুর রহমান, তাঁর স্ত্রী ফজিলাতুন নেসা, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল, মুজিবুর রহমানের ভাই শেখ নাসের, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের সাব-ইন্সপেক্টর সিদ্দিকুর রহমান, পেট্রোল ডিউটির সৈনিক সামসুল হক ও রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারি কর্নেল জামিলকে সেদিন গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ৪৫ বছরের মাথায় অবশেষে ফাঁসিতে ঝোলানো হল মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী আবদুল মাজেদের ফাঁসি হল। কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয় শনিবার রাত ১২টা বেজে এক মিনিটে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাজেদের স্ত্রী সালেহা বেগমকে স্বামীর সঙ্গে শেষবার দেখা করতে দেওয়া হয়।


আরও পড়ুন— দুঃসময়ে ফের বন্ধুর মতো বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াল ভারত


গত সোমবার রাতে ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে মাজেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেনার ক্যাপ্টেন পদ থেকে বরখাস্ত হওয়া মাজেদকে মঙ্গলবার আদালতে তোলা হয়। এর পর আদালত মৃত্যু দণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেয়। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন মাজেদ। সেই আবেদন খারিজ করে দেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। এরপর তাঁর ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ। ১০ জন জল্লাদের একটি দল গঠন করে জেল কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, আবদুল মাজেদ ২৩ বছর ধরে কলকাতায় আত্মগোপন করে ছিলেন। করোনা পরিস্থিতির জন্য সম্প্রতি ঢাকায় এসেছিলেন। তাঁকে ধরার জন্য জাল পেতে রেখেছিল বাংলাদেশের পুলিস।