বাংলাদেশ সরকার কিছুতেই মানতে চাইছে না যে জঙ্গিরা ISIS
গুলশনের গণহত্যায় আইসিসের যোগসূত্র অনেকটাই স্পষ্ট। ঢাকার দাবি, বাংলাদেশে আইসিস নেই। কিন্তু, তথ্যপ্রমাণ ও যুক্তি জোরালো ইঙ্গিত দিচ্ছে আইসিসের দিকেই।
ওয়েব ডেস্ক: গুলশনের গণহত্যায় আইসিসের যোগসূত্র অনেকটাই স্পষ্ট। ঢাকার দাবি, বাংলাদেশে আইসিস নেই। কিন্তু, তথ্যপ্রমাণ ও যুক্তি জোরালো ইঙ্গিত দিচ্ছে আইসিসের দিকেই।
ভারতের দুই প্রতিবেশীর কী অদ্ভূত বৈপরিত্য! জঙ্গিহামলা হলেই নন স্টেট অ্যাক্টরের দাবি তোলে পাকিস্তান। আর বাংলাদেশের দাবি, সন্ত্রাসবাদীরা তাদেরই নাগরিক। নিজের মাটিতে আইসিসের অস্তিত্বের কথা প্রতিবারই অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ সরকার। অন্যদিকে দুহাজার পনেরোর সেপ্টেম্বর থেকে এই নিয়ে উনিশবার বাংলাদেশে সন্ত্রাসের দায় স্বীকার করেছে আইসিস।
শুরুটা হয় গুলশন দিয়েই। দুহাজার পনেরোর সেপ্টেম্বরে গুলশনে ইতালির নাগরিক সিজার তাভেল্লা হত্যায় দায় স্বীকার করে আইসিস। রংপুরে জাপানি গবেষক হত্যারও দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় আইসিস। রাজশাহীর আহম্মদিয়া মসজিদে আত্মঘাতী হামলার দায়িত্বও আইসিস নিয়েছিল। শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরায় পুরোহিত হত্যার দায়িত্ব নিয়েও বিবৃতি দেয় আইসিস।
আজ সারাটা দিন কেমন কাটল বাংলাদেশের?
প্রতিবারই আইসিসের দাবি খারিজ করে দিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা। এবারও তাই। ঢাকার দাবি, আইসিসের তরফে দায়স্বীকার করে ইন্টারনেটে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তা পোস্ট করা হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই। যদিও এই যুক্তির জোর কতটা তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। শুক্রবার হামলা চলাকালীনই আইসিস ঘনিষ্ঠ সংবাদসংস্থায় ঘটনাস্থলে ছবি প্রকাশ হয়ে যায়। তাতে জোরালো হচ্ছে আইসিসেরই যোগসূত্র।
শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ ছিল জঙ্গিদের হাতে। জঙ্গিরা ছাড়া আইসিসের কাছে ওই ছবি পৌছে দেওয়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়। সিক্রেট টেলিগ্রাম চ্যানেল ডার্ক ওয়েভ ব্যবহার করে ইন্টারনেটে প্রচার চালায় আইসিস। সেই চ্যানেল ব্যবহার করা ছাড়া রেস্তোরাঁর জঙ্গিদের পক্ষে ছবি প্রকাশ সম্ভব ছিল না।
প্যারিস ও ব্রালেসসের মতো ঢাকার ক্ষেত্রেও আইসিস ঘনিষ্ঠ নিশার ও অ্যামক নিউজ এজেন্সিই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। আইসিসের নিজস্ব মুখপত্র দাবিকেও বাংলাদেশে হামলার দায় স্বীকার করা হয়েছে। বাংলাদেশে আইসিসের আমিরের সাক্ষাত্কারও সেই মুখপত্রের প্রকাশ করা হয়েছে। আইসিস ঘনিষ্ঠ সংবাদসংস্থা অ্যামক হামলার আগের একটি ফোটোগ্রাফ প্রকাশ করেছে। ওই ছবিতে হাতে রাইফেল নিয়ে আইসিসের ফ্ল্যাগের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে জঙ্গিরা। এই ফটোয় প্রমাণ হয়, হামলা পূর্বপরিকল্পিত, নাহলে এই ছবি তোলা হত না। জঙ্গিদের আইসিস যোগের কথাও এই ছবিতে অত্যন্ত স্পষ্ট।
আইসিস যোগের পক্ষে রয়েছে আরও যুক্তি। আইসিস সচরাচর মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মুসলিম পরিবারের শিক্ষিত ছেলেদের মগজধোলাই করে। বাংলাদেশের নিহত জঙ্গিদের যে পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে তাতে সকলেই উচ্চবিত্ত ও শিক্ষিত পরিবেশ থেকে আসা। অন্যদিকে, জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ যাদের কাজে লাগায়, তাদের অধিকাংশই গরিব ও অশিক্ষার পরিবেশ থেকে উঠে আসা ধর্মান্ধ যুবক। তবে জেএমবি আইসিসের হয়ে বাংলাদেশে কাজ করছে, এই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।