নিজস্ব প্রতিবেদন: এক পাশে বিশালাকায় পশুরাজের নিথর দেহ। তারই পাশে চুম্বনরত এক দম্পতি। সেই চুম্বনে যেন নেই কোনও প্রেম। বরং হিংস্র হত্যালীলার পৈশাচিক উল্লাস দম্পতির ভঙ্গিমায়। খেলার ছলে সিংহ মেরে তারই পাশে চুম্বনে মেতে উঠলেন এক কানাডিয় স্বামী-স্ত্রী। শুধু তাই নয়, মূহুর্তটি 'স্মরণীয়' করে রাখতে ছবি তুলে পোস্ট করলেন ফেসবুকে। কানাডিয় দম্পতির এই নিষ্ঠুরতায় ফুঁসছে নেটিজেনরা। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

জানা গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জঙ্গলে শিকারের উদ্দেশেই গিয়েছিল ডরেন কার্টার ও ক্যারোলিন কার্টার। লাগিলেলা সাফারি নামে একটি দলের সঙ্গে শিকার অভিযানে যান তাঁরা। তার পরেই গুলি করে মারা হয় বিশালাকায় সিংহটিকে। সিংহ মারার আনন্দে তার পাশে বসে পোজ দিয়ে চুম্বন করে ওই দম্পতি। লাগিলেলা সাফারি তাদের ফেসবুক পেজে ছবিটি পোস্ট করে লেখে, "কালাহারির কাঠফাটা রোদে প্রচুর খাটনির পর... বিশালাকায় সিংহ, দারুণ!"


ছবিটি ভাইরাল হতে বেশি সময় লাগেনি। দম্পতির নিষ্ঠুরতা দেখে নিন্দায় সরব নেটিজেনরা। ওঠল প্রতিবাদের ঝড়। অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাকটিভেট করে দেয় লাগিলেলা সাফারি। তবে ততক্ষণে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় এই ছবি।  



জানা গিয়েছে কানাডায় ট্যাক্সিডার্মি-এর ব্যবসা এই দম্পতি। বিভিন্ন মৃত প্রাণীর দেহকে বিশেষ পদ্ধতিতে অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষণ করাকে ট্যাক্সিডার্মি বলে। বিশ্বজুড়ে চোরাবাজারে বিপুল দামে বিক্রি হয় এই মৃত প্রাণীর দেহগুলি। সেই টাকার লোভেই কি লোপ পাচ্ছে মনুষ্যত্ব? প্রশ্ন নেটিজেনদের। কানাডিয় ওই দম্পতি অবশ্য নির্বিকার। পুরোটাই রাজনীতি চলছে, দাবি ডরেনের। 



ট্রফি হান্টিং বা বন্যপ্রাণী হত্যা করে তার দেহাংশ নিয়ে ফিরে আসা ব্রিটেনের অন্যতম সমস্যা। বহু যুগ ধরেই বাঘ, ভল্লুক, সিংহ বা বলগা হরিণ হত্যা করে অবিকৃত অবস্থায় তার মাথা ফিরিয়ে আনে শখের শিকারিরা। শুধু ব্রিটেনই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই বিত্তশালীরা শখের বশে মৃত প্রাণীদের দেহাংশ সংগ্রহ করেন। চোরাবাজারে কোটি কোটি টাকায় বিক্রি হয় আফ্রিকান সিংহের দেহ। ঘর সাজানোর উপাদানের মতো দেওয়ালে টাঙানো হয় বন্যপ্রাণীর মাথা। বীরত্বের নিদর্শন হিসাবে গর্বের সঙ্গে এগুলি দিয়ে ঘর সাজান বিত্তশালীদের একাংশ। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও রয়ে গিয়েছে মান্ধাতা আমলের নিষ্ঠুর মানসিকতা। 



আরও পড়ুন: উড়তে উড়তে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে একের পর এক মরছে বিপন্ন প্রজাতির কাকাতুয়া!


"সাফারিতে গিয়ে জিপের মাথায় বসে গুলি করে সিংহ মারার মধ্যে কোনও বীরত্ব নেই", বললেন বনপ্রাণী সংরক্ষণ বিশারদ এডুয়ার্ডো গনক্লেভস। তাঁর দাবি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই সিংহগুলি মানুষ দেখে অভ্যস্ত হয়। এ ভাবে শিকার করা চিড়িয়াখানার খাঁচা-বন্দি সিংহ মারারই সমান। 


এর আগে ২০১৫-তে এক মার্কিন দন্ত চিকিত্সক জিম্বাবোয়েতে সিংহ মেরে তার পাশে দাঁড়িয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেন। তার পরেও তুমুল প্রতিবাদের ঝড় ওঠে বিশ্বের তাবড় বন্যপ্রাণ সংরক্ষণকারী সংস্থাগুলির মধ্যে। কিন্তু প্রতিবাদই সার। সচেতনতা যে বাড়েনি, তা কার্যত স্পষ্ট। গত ২০ বছরে আফ্রিকায় ৪০% হ্রাস পেয়েছে সিংহের সংখ্যা। ২০ বছরে কমে গিয়েছে প্রায় ২০,০০০ সিংহ। এই হারে কমতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতেই যে আফ্রিকার জঙ্গল হারাবে তার রাজাকে, তা বলাই বাহুল্য।