Afghanistan: কথায় কাজে ব্যবধান বাড়ছে তালিবানের? উঠছে প্রশ্ন
`তালিবান হল তালিবান। তারা এতটুকু বদলায়নি!`
নিজস্ব প্রতিবেদন: দু'টি ছবি পাশাপাশি রাখলেই স্পষ্ট হবে: সোমবারই কাবুলের এক বিনোদন পার্কে উচ্ছ্বসিত তালিবানকে বিভিন্ন রাইড চড়তে দেখা গিয়েছিল। চড়তে দেখা গিয়েছিল নাগরদোলাও। আর মঙ্গলবারই একটি পার্কে আগুন ধরাতেও দেখা গেল তালিবানদেরই!
এটা বিচ্ছিন্ন দৃষ্টান্ত নয়। এটা আসলে এক একবগ্গা অ্যাটিটিউডের অন্তর্লীন অভিমুখ। তালিবান মন (নেতিবাচক) যে দর্শনে, যে ভাবনায়, যে রীতিতে, যে নিয়মবদ্ধতায় আচ্ছন্ন, এ হল তারই একটা ছুটকো ফুলকি।
আরও পড়ুন: Afghanistan: তালিবানের দখলে দেশ, হঠাৎই বোরখার চাহিদা তুঙ্গে আফগানিস্তানে!
এ-জাতীয় ফুলকি আরও আছে। কিন্তু তার আগে রাইড-মুগ্ধ নাগরদোলা-উচ্ছল তালিবানের হাতে বিনোদন পার্ক পুড়িয়ে ফেলার সাফাইটা শুনে নেওয়া যাক! উক্ত পার্কে কিছু মূর্তি বসানো ছিল, ইসলামে যেহেতু মূর্তি নিষিদ্ধ, তাই শিশুদের ওই পার্কটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে! অপূর্ব 'যুক্তি'!
এবার বাকি ফুলকিগুলির দিকে নজর দেওয়া যাক।
ফুলকি ১ : আফগানিস্তান অধিকার-লগ্নেই রাস্তায় এক মহিলাকে একা বেরনোর 'অপরাধে' গুলি করেছিল তালিবান। তার পরেই মেয়েদের স্বাধীনতার প্রশ্নটি সেখানে বড় হয়ে দাঁড়ায়। ছড়ায় আতঙ্ক। ক'দিন পরেই তালিবান জানাল, তারা মেয়েদের অধিকারকে সম্মান দেয়। এদিকে বোরখা ছাড়া এবং রক্তের সম্পর্কের কোনও পুরুষের সঙ্গ ব্যতিরেকে আফগান মহিলারা রাস্তায় বেরোতে পারবেন না বলে 'ফতোয়া'ও জারি করল তালিবান (এর জেরে শোনা যাচ্ছে, আফগানিস্তানে রাতারাতি বোরখার চাহিদাও তুঙ্গে)।
দ্বিচারিতার এখানেই শেষ নয়। আরও আছে। কাবুল দখলের পরেই সমস্ত রাস্তায় টাঙানো যাবতীয় মহিলার পোস্টার, ছবি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে কিংবা সাদা বা কালো রঙ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
তালিবানরা মুখে নারীশিক্ষা ও সুরক্ষার কথা বললেও শোনা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাবালিকাদের বিয়ে করার বা যৌনদাসী হওয়ার প্রস্তাবও নাকি দেওয়া হচ্ছে! অবাক পৃথিবী!
আর মেয়েদের অধিকারের প্রশ্ন?
তালিবানি জঙ্গিদের বিরুদ্ধেই একদা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা গভর্নরদের একজন সালিমা মাজারি (Salima Mazari)। জেহাদিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, সেই মহিলাকে বন্দি করেছে তালিবান।
এহো বাহ্য! চলতি বছরের শুরুর দিকে তালিবদের নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছিল। সেই তথ্যচিত্রেরই অংশ হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে একটি ভিডিয়ো। সেই ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, হিন্দ হাসান নামের এক সাংবাদিক বোরখা পরে বেশ কয়েকজন তালিবান যোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। মহিলাদের অধিকার নিয়ে প্রশ্নের উত্তরেও তালিবান যোদ্ধাদের সেখানে ইতিবাচক উত্তর দিতে শোনা গিয়েছে। এর পরই হিন্দের প্রশ্ন-- আফগান নাগরিকরা মহিলা রাজনীতিকদেরও ভোট দিতে পারবেন তো? ব্যস! খসে পড়ল তালিবানের আরোপিত 'সভ্যতার' মুখোশ। হিন্দের প্রশ্ন শুনে হাসি চেপে রাখতে পারেননি তালিবান যোদ্ধারা। উচ্চস্বরে হাসতে থাকেন তাঁরা। আর তার পরই ওই সাংবাদিককে ভিডিয়ো করা বন্ধ করতে বলা হয়।
সদ্য প্রায় একই ধাঁচের ঘটনা ঘটেছে। এক আফগান সংবাদমাধ্যমের মহিলা সঞ্চালক Beheshta Arghand-কে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা গেল তালিবান মিডিয়া সেলের অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক Mawlawi Abdulhaq Hemad-কে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও হল সেই ছবি। ভাবাই যায় না! তালিবান তার মানে মেয়েদের কাজের স্বীকৃতি দিচ্ছে! না, বিষয়টি অত সহজ নয়।
কয়েক ঘণ্টা বাদেই অন্য ছবি। Khadija Amin নামের এক মহিলা অ্যাঙ্কর কাঁদতে কাঁদতে জানাচ্ছেন, তালিবান তাঁকে সাসপেন্ড করেছে। শুধু তাঁকেই নয়, অন্য মহিলা কর্মীদেরও। বছর আঠাশের আমিন জানাচ্ছেন, 'আমি একজন সাংবাদিক, অথচ আমাকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না! এরপর কী করব আমি? ২০ বছর ধরে যা একটু একটু করে আমরা গড়ে তুলেছি, সব নষ্ট হয়ে গেল!' তাঁর গলায় ঝরে পড়ছে একরাশ হতাশা--'তালিবান হল তালিবান। তারা এতটুকু বদলায়নি!'
ফুলকি ২: মঙ্গলবার করা প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে তালিবান জানিয়েছিল, তারা শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে। সমস্ত ভয় থেকে মুক্ত হয়ে আফগান নাগরিকদের তারা কাজ শুরুর বার্তা দিয়েছিল। ওই সাংবাদিক বৈঠকে তালিবান মুখপাত্র বলেন, 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। সকলে শান্ত থাকুন। কাজে যোগ দিন। কেউ আমাদের শত্রু নয়, নতুন বা পুরনো যাদের সঙ্গে আমাদের সংঘাতের আবহ ছিল, তা আর নেই, সেসব মিটে গিয়েছে।'
সত্যিই কি মিটে গিয়েছে?
তালিবানের কার্যকলাপ কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন বার্তাই দিচ্ছে। মঙ্গলবারেরই কাবুলের চিত্র সামনে এসেছে। জানা যাচ্ছে, তালিবানের তরফে দখল নেওয়া শহরগুলিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারি কর্মীদের খোঁজ চালানো হচ্ছে তালিবানের তরফে। দ্রুত কাজে না ফিরলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলেও জানানো হয়েছে তাঁদের।
আর শান্তি?
একাধিক শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, জোর করে তাঁদের বাড়িতে ঢুকে পড়ছে তালিবান। পশ্চিম কাবুলে এক প্রাক্তন সরকারি আধিকারিকের বাড়িতে ঢুকে তাঁর বাড়ি-গাড়ি সব দখল করা হয়েছে। দেশের অন্য সব প্রান্ত থেকেও প্রায় একই ধাঁচের খবর মিলছে।
আর অভয়?
অভয়দানের আড়ম্বর যত বর্ণিল, কার্যক্ষেত্রে তার অনুশীলন খুবই এক রঙা-- রক্তরাঙা! নিজেদের সরকার গড়ার মুখেই তালিবান আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকা ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সরকারি অফিস, দফতর থেকে জাতীয় পতাকা খুলে ফেলার 'ফতোয়া' জারি হয়েছে। বুধবার এই তালিবানি 'ফতোয়া' মান্য না করে একটি মিছিল বের করেন জালালাবাদের বাসিন্দারা। খবর, সেই মিছিলে এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করে তালিবান।
অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে, পদে-পদে তালিবান অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে তার কথা ও কাজের মধ্যে দুস্তর ব্যবধান রচনা করছে। এবং আগামি দিনে এই ব্যবধান যত বাড়বে, আফগানিস্তানের সমাজজীবনে অন্ধকার তত গাঢ় হবে!
(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)
আরও পড়ুন: Afghanistan: মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের 'নেপথ্য নায়ক', কান্দাহারে পৌঁছলেন মোল্লা আবদুল গনি বেরাদর