সেলিম রেজা | ঢাকা: বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসেছে ব্যতিক্রমী এক মেলা। এই মেলার বিশেষ আকর্ষণ হল বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা এখান থেকে পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজে নিতে পারেন। এখানে কোনো পাত্র বা পাত্রী পছন্দ হলে পরিবারের মাধ্যমে ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়া হয়। মেলাটি অনেকের কাছে বাসিয়া হাটি নামেও পরিচিত।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন-সিভিক মানেই সঞ্জয় নয়, একাধিক প্রাণ বাঁচিয়ে গঙ্গায় তলিয়ে গেলেন ওয়াসিকুল


সারা দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই মিলন মেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সব বয়সী নারী-পুরুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। পোশাক ও নানা সাজ-সজ্জায়। কোনো ধরনের প্রচার ছাড়াই বাংলাদেশের হাজার হাজার  সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ উপস্থিত হন এই দিনে। সেখানে বাজনার তালে তালে একক ও দলগতভাবে পরিবেশন করা হয় তাদের ঐতিহ্যবাহী নাচ ও গান। আর অন্য পাশে চলে বাহারি সব কাঁচের চুড়ি, রঙিন ফিতা, লিপস্টিক, কানের দুল, ঝিনুকের ও মাটির তৈরি তৈজসপত্র খেলনা, বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত দা-কুড়াল ও হাড়ি-পাতিলসহ বিভিন্ন খাবারের দোকানের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা।


বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে মেলায় আসা শীতল মার্ডি বলেন, সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জীবনযাত্রায় এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। বেশিরভাগ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা এখন বিদ্যালয়মুখী হয়েছে। তাই পুরোনো ঐতিহ্যগুলো অনেকটাই মুছে যেতে বসেছে। দূর থেকে মেলা দেখতে এসে ভালো লাগছে।


একটা সময় এই মেলায় জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার প্রচলন ছিল। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সব বদলে গেছে। এখন এই রীতিতে ভাটা পড়েছে। তবে মেলায় মানুষের উপস্থিতি এখনো চোখে পড়ার মতো।
জীবনসঙ্গী মেলার আয়োজক কমিটির সদস্যরা জানান, এ মেলা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষেরা ছুটে আসেন। মেলায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ ছাড়াও হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের উপস্থিতি থাকে বেশ। এর ফলে, পুরো এলাকার আশপাশে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। আগে এ মেলার ঐতিহ্য ছিল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা এখান থেকে যে মেয়েকে জীবনসঙ্গী পছন্দ করত তাকে জোর করে সিঁদুর পরিয়ে বিয়ে করে নিতো।


মেলায় মূলত বাংলাদেশের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের সবচেয়ে উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে মেলার আয়োজন করেন স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের সদস্যরা।


জীবনসঙ্গী মেলা আয়োজক কমিটি সভাপতি জানান, গোলাগঞ্জ আদিবাসী মিলন মেলাটি ২০০ বছর আগে থেকেই হয়ে আসছে। মেলাটি প্রতিমা বিসর্জনের বিজয়া দশমীর পরে অনুষ্ঠিত হয়। এখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আদিবাসী ছেলেমেয়ে-সহ নানা বয়সের মানুষজন আসেন। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা তাদের সঙ্গীকে চিহ্নিত করে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন।
পূর্বপুরুষের আমল থেকে এই মেলা চলমান। আমরা শুধু তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাচ্ছি। তবে কবে থেকে এ মেলার প্রচলন শুরু হয়েছে, সেটি সঠিকভাবে বলা যাবে না। বাপ-দাদার কাছে শুনেছি দুইশ বছর ধরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।



(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)