নিজস্ব প্রতিবেদন: জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ি পথ ধরে যাচ্ছিলেন একদল শিকারি। শিকারের সাহায্যে তাঁদের দলে কয়েকটা কুকরও ছিল। হঠাৎ একটি পাহাড়ি গুহার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ওই দলের কুকুরগুলো খুব চেঁচামিচি করতে শুরু করে দেয়। হাত ছাড়িয়ে ওই গুহার ভিতরে ঢুকতে চাইছিল কুকুরগুলো। কুকুরদের আচরণে হঠাৎ এই পরিবর্তন লক্ষ্য করে সন্দেহ হয় ওই শিকারিদের। গুহার ভিতরে ঢুকে তাঁরা দেখেন, একটি মানুষের মমি রাখা রয়েছে সেখানে। এই মমি কার? কত বছর আগের... এখানে কারা বসবাস করতেন... ইতিহাসে কি এই জায়গার কোনও উল্লেখ রয়েছে... এমনই আরও নানা প্রশ্ন হয়তো মাথায় ঘুরছিল ওই শিকারিদের। কিন্তু তাঁদের সবাইকে চমকে দিয়ে চোখ খুলে গেল মমির! তাহলে কি কোনও ভূতুড়ে ব্যপার... ভুল ভাঙল যখন অষ্ফুট স্বরে মমি তাঁর নাম জানাল ওই শিকারিদের। শিকারিরা বুঝলেন, মমি নয়, গুহার মধ্যে দীর্ঘদিন অনাহারে প্রায় কঙ্কালসার হয়ে গিয়েছে এই মানুষটির শরীর। তবে প্রাণ প্রদীপ এখনও ধিকি ধিকি জ্বলছে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ঘটনাটি ঘটেছে রাশিয়ার জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ি, দুর্গম তুভা অঞ্চলে। গুহা থেকে উদ্ধার হওয়া ওই ব্যক্তির নাম আলেকজান্ডার। জানা গিয়েছে, এই গুহাটিতে ওই ব্যক্তিকে ‘শিকার’ করে পরে খাবে বলে প্রায় আধমরা করে রেখে যায় একটি ব্রাউন বিয়ার (ভাল্লুক)। ভাল্লুকের আক্রমণে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক গভীর ক্ষত। দীর্ঘদিন এই অবস্থায় পড়ে থাকায় সংক্রমণ ছড়িয়েছে শরীরে। প্রায় টানা এক মাস ধরে আলেকজান্ডার এই গুহায় পড়ে রয়েছেন। শিরদাঁড়া ভেঙে যাওয়ায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করতে পারেননি তিনি। সৌভাগ্যবশত এই এক মাসের মধ্যে ওই ভাল্লুকটি আর গুহায় ফিরে আসেনি। কিন্তু এক মাস কিছু না খেয়ে, ক্ষতবিক্ষত শরীরে কী ভাবে বেঁচে ছিলেন আলেকজান্ডার! জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র নিজের প্রস্রাব পান করেই কোনও রকমে টিকে গিয়েছেন তিনি।


আরও পড়ুন: বিড়াল, কুকুরও স্বপ্ন দেখে! কিসের স্বপ্ন জানেন?


বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া আর মঙ্গোলিয়ার সীমান্তবর্তী তুভা অঞ্চলে প্রচুর ব্রাউন বিয়ার আর গ্রিজলি বিয়ার দেখতে পাওয়া যায়। এই ভাল্লুকরা সাধারণত গরমের সময় শিকার করে গুহা বা গাছের কোটরে জমিয়ে রাখে। শীতের সময় শিকার আর শিকারের সুযোগ— দুটোই কমে আসে। তাই শীতের শুরু থেকেই ব্রাউন বিয়ার বা গ্রিজলি বিয়ার তাদের জমিয়ে রাখা খাবার খেতে থাকে। একবার পেট ভরে খাওয়ার পর টানা বেশ কিছুদিন তারা আর কিছুই খায় না। এই কারণেই নিজেদের শিকার অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে নিজেদের গোপন আস্তানায় লুকিয়ে রাখে এই প্রজাতীর ভাল্লুক। আলেকজান্ডারকেও সম্ভবত একই কারণে গুহার ভিতরে লুকিয়ে রেখেছিল ওই ভাল্লুকটি। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ব্রাউন বিয়ার শুধু মাংসই নয়, ফলমূল, গাছের নরম কাণ্ড, পাতা ইত্যাদি খেতেও পছন্দ করে। এই ভাল্লুক প্রজননকাল ছাড়া মূলত একা থাকতেই পছন্দ করে। ব্রাউন বিয়ারের এই প্রকৃতির জন্যই বোধহয় ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছেন আলেকজান্ডার। তবে তাঁর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে এখনও ঢের দেরি।