ব্যুরো: ধ্বংসস্তূপ থেকে নালন্দার পুনরুজ্জীবন। প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুকুটে যুক্ত হল নতুন পালক। দানে অকৃপণ নালন্দা নতুন করে ঢুকে পড়ল ইতিহাসে। স্বীকৃতি মিলেছে ইউনেসকোর। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা পেয়েছে গৌরবের নালন্দা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এই নামের সঙ্গেই জুড়ে যায় চিনা তীর্থযাত্রী সন্ন্যাসী হিউয়েন সাংয়ের নাম। খ্যাতির মধ্যগগনে থাকাকালীন কোরিয়া, জাপান, চিন, গ্রিস, তিব্বত, ইন্দোনেশিয়া, পারস্য এবং তুরস্ক থেকে শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে আসতেন। কিন্তু তারপরেও সেই বিশ্ববিদ্যালয়কে ধূলিসাত্‍ করতে একটুও হাত কাঁপেনি বখতিয়ার খিলজির। তিন তিনবার শত্রুর আক্রমণের শিকার। তবুও ঐতিহ্যের গরিমা নিয়েই তার মাথা উঁচু। বরাবর। ধ্বংসস্তূপেই সযন্তে আঁকড়ে ইতিহাসের নিপুণ আলেখ্য।


লাল ইট হয়ত খসে পড়েছে। বুকের ওপর চরম হিংস্রতায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে শত্রুসেনানি। তবুও দানে অকৃপণ থেকেছে বারবার। ইতিহাসের পাতা উল্টেছে। কিন্তু ধুলো জমেনি। যতটুকু ধুলো আলতো লেগেছিল, তাও ঝেড়েমুছে সাফ। কারণ, নামটি যে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকৃতই গৌরবের ইতিহাস। সেই ইতিহাস ঘাঁটলে উঠে আসে মণিমাণিক্যই।


পাটনা শহর থেকে পঞ্চান্ন মাইল দক্ষিণ-পূর্বে ৪২৭ খ্রিস্টাব্দে রাজা কুমারগুপ্তের সময় বৌদ্ধ ভিক্ষুকরা গড়ে তোলেন প্রসিদ্ধ এই শিক্ষাকেন্দ্র। গর্ব করার অনেক কিছুই ছিল। ছাত্রহল, শ্রেণিকক্ষ, নয়নাভিরাম খাল এবং আরও অনেক কিছু। ২ হাজার শিক্ষক এবং ১০ হাজারের মতো ছাত্র। মূলত বৌদ্ধধর্মের গবেষণা ও ধর্মচর্চার জন্য গড়ে উঠলেও ওখানে পড়ানো হত হিন্দু দর্শন, বেদ, ধর্মতত্ত্ব, যুক্তিবিদ্যা, ব্যকরণ, ভাষাতত্ত্ব, চিকিত্সা বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের আরও বেশ কয়েকটি বিষয়।


গৌরবের ইতিহাস


গর্ব করার অনেক কিছুই। তবুও সে গৌরব ক্ষণস্থায়ী। ৪৫৫ থেকে ৪৬৭ খ্রিস্টাব্দে স্কন্দগুপ্তের সময় মিহিরাকুলার নেতৃত্বে মধ্য এশিয়ার যুদ্ধবাজ হুনরা আক্রমণ করে। বৌদ্ধ-বিদ্বেষী হুনরা নির্মমভাবে হত্যা করে ধর্মগুরু এবং বৌদ্ধ ছাত্রদের। স্কন্দগুপ্ত একে পুনর্গঠন করেন। প্রায় দেড় শতাব্দী পরে ফের ধ্বংসের মুখে। এবার বাংলার গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক। রাজা হর্ষবর্ধনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ও ধর্মবিশ্বাস এই ধ্বংসযজ্ঞে প্রভাব ফেলে। শশাঙ্ক বৌদ্ধদের পবিত্র স্থানগুলিকে ধ্বংস করেন। খণ্ডবিখণ্ড করেন বুদ্ধের পদচিহ্ন। বুদ্ধগয়াকে নিশ্চিহ্ন করে দেন তিনি। হর্ষবর্ধন নালন্দাকে পুনর্গঠন করেন।


ফের ভারতকে টেক্কা দিল চিন!


এরপর নালন্দার ওপর রোষকশায়িত চোখে তাকান তুর্কি যোদ্ধা বখতিয়ার খিলজি। সেটা এগারোশো তিরানব্বই খ্রিস্টাব্দ। হাজার হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষুককে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় কিংবা মাথা কেটে ফেলা হয়। যাঁরা বেঁচে ছিলেন, তাঁরা অনেকেই পালিয়ে যান। খিলজি নির্মমভাবে ধ্বংস করেন নালন্দা। মাসের পর মাস ধরে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় মহাবিহারের গ্রন্থাগারটি। নির্মম এই ধ্বংসের কাহিনীও স্থান পেয়েছে ইতিহাসের পাতায়। এবার সেই ইতিহাসকেই মর্যাদা দিল ইউনেসকো। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা দেওয়া হল নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে।


২০০৬ সালে ভারত, চিন, সিঙ্গাপুর, জাপান এবং আরও কয়েকটি দেশ যৌথভাবে এই সুপ্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টির পুনরুজ্জীবনের প্রকল্প গ্রহণ করে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হবে। 


নালন্দা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়
ফের কি ভিড় জমাবে দেশ-বিদেশের মেধা? সেই ইতিহাসেরই অপেক্ষায় নালন্দা। সেই বাস্তবের অপেক্ষায়!