জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ক্লাইমেট চেঞ্জ আর গ্লোবাল ওয়ার্মিং পরস্পরসম্পর্কযুক্ত। আর এরই সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এ বিশ্বের আরও অনেককিছু। সম্প্রতি ভয়ানক দাবদাহে খোলা আকাশের নীচে কাজ করা শ্রমিকদের উপর গরমের কুপ্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে কাতারের দোহায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী দিন দিন উষ্ণ হচ্ছে। এভাবে তাপমাত্রার লাগামহীন বাড়বৃদ্ধি ডেকে আনছে তীব্র দাবদাহ। আর রুটিরুজির কারণে এই প্রচণ্ড গরমেই বিশ্ব জুড়ে খোলা আকাশের নীচে কাজ করতে হয় একদল মানুষকে। এজন্য বিশ্ব জুড়ে শ্রমিকদের মৃত্যু ও শারীরিকভাবে তাঁদের অক্ষম হয়ে পড়ার প্রবণতাও বাড়ছে। সম্প্রতি এই তথ্য উঠে এসেছে কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে।

 


 

জলবায়ু পরিবর্তন ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং শ্রমজীবী মানুষের ওপর কী প্রভাব ফেলছে, তাই ছিল সম্মেলনের মূল আলোচ্য। সম্মেলনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক দশকগুলিতে বিশ্ব জুড়ে হাজার হাজার শ্রমিক কিডনির দীর্ঘস্থায়ী রোগ ও প্রচণ্ড গরমের কারণে নানা অসুস্থতায় আক্রান্ত হচ্ছেন ও প্রাণ হারাচ্ছেন। কিন্তু শ্রমিকদের এই মৃত্যু ঠেকাতে কোনও দেশই কোনও কার্যকর পদক্ষেপ করছে না বলেও কথা উঠেছে সম্মেলনে। ‘অকুপেশনাল হিট স্ট্রেস’ বা ‘গরমে পেশাজীবীদের ঝুঁকি’ শীর্ষক এই সম্মেলনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার আরব অঞ্চলের প্রধান বলেন, বিজ্ঞান আমাদের বলছে, এই বিষয়ে দেশগুলি অনেক কিছু করতে পারে!

 


 

প্রচণ্ড গরমে খোলা আকাশের নীচে কাজ করতে হয় এমন শ্রমিক বা কর্মীদের জন্য আন্তর্জাতিক কোনো মান এখনও পর্যন্ত ঠিক করা হয়নি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিনিয়ত বিশ্ব যেভাবে উষ্ণ হচ্ছে, তাতে এ বিষয়ে নতুন পদক্ষেপ জরুরি। ভয়ংকর এক দাবদাহের পর ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ নিয়ে নতুন নিয়ম করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বটে। তবে প্রতিশ্রুত সেই পদক্ষেপ এখনও করে উঠতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র।

 

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি দাবদাহে নাজেহাল হয়েছিল ইউরোপের জনজীবন। তবে শুধু সাইপ্রাস ছাড়া ইউরোপের কোনো দেশ এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপই করেনি। শ্রমজীবী মানুষদের প্রচণ্ড গরম থেকে রক্ষায় কাজের সময় বেঁধে দিয়েছে দেশটি। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় কাজ করতে হলে নিতে হবে বেশি বিশ্রাম এবং পরতে হবে গরমের বিশেষ সুরক্ষামূলক পোশাক।

 

বিশ্বে কৃষিশ্রমিক আছেন প্রায় ১০০ কোটি। এ ছাড়া নির্মাণসহ অন্যান্য খাতে কোটি কোটি শ্রমিক খোলা আকাশের নিচে কাজ করেন। মূলত এসব শ্রমজীবী মানুষ দাবদাহের বেশি ঝুঁকিতে আছেন বলে জানানো হয় সম্মেলনে। এ ছাড়া বাগান, ডাক বিভাগ, খাবার ও পণ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত পেশাজীবী আর শ্রমিকেরাও সমান ঝুঁকিতে বলা জানানো হয়।

 

গবেষকেরা বলছেন, প্রচণ্ড গরম বেশ কয়েকটি রোগের মূল কারণ-- হিট স্ট্রোক, কিডনির রোগ,  হৃদ্‌রোগ, ফুসফুসের রোগ ও ক্যানসার। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, প্রচণ্ড গরমে কাজ করতে গিয়ে শ্রমজীবী মানুষেরা এই হিট স্ট্রোক, কিডনির রোগ ইত্যাদিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর এসব রোগে শ্রমিকদের প্রাণহানিও বাড়ছে।

 

এ ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থাও বেশ খারাপ। ভারতে মরুভূমির মতো আবহাওয়ায় কাজ করতে হয় অন্তত লাখ লাখ লবণশ্রমিককে। এই শ্রমিকদের কিডনি ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনায় অনেক বেশি। তাঁদের কোনো বিমার সুরক্ষা-সুবিধা নেই। সারা দিন তাঁরা কাজ করেন। গ্রীষ্মকালে এই লবণশ্রমিকদের প্রায় ৮০ শতাংশই প্রচণ্ড গরমের কারণে কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ভারতও কি গ্রীষ্মে শ্রমিকদের কাজের জন্য সুরক্ষামূলক কিছু ভাববে?